শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় আর কুয়াশার কারণে বেলার প্রায় অর্ধেক টি সময় দেখা মিলছেনা সূর্যের
রায়হানুল ইসলাম সোহাগ,ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ// দৈনিক ঢাকার কন্ঠ
গত কিছুদিন ধরে সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয় ঘন কুয়াশা। আর উত্তরের হিমেল বাতাসে নাকাল হয়ে পড়েছে জনজীবন। প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া ঘর থেকে তেমন বের হচ্ছেনা সাধারণ মানুষ।
সীমান্তবর্তী জেলা ঠাকুরগাঁও হিমালয়ের কাছাকাছি অবস্থান এই জেলা তাই অন্যান্য জেলার তুলনায় শীতের প্রকোপ এখানে একটু বেশিই দেখা যায়। হাঁড় কাঁপানো শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ঠাকুরগাঁও বাসীর।
¬¬জেলার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায়, দিনের বেলাতেও মহাসড়কে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাফেরা করছে। রাতভর টুপটাপ শব্দে বৃষ্টির মত ঝরছে কুয়াশা। রাত ৮-৯ টার মধ্যেই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট গুলো।
শহরের আর্টগেলারী মোড়ে গাড়ি চালক জামরিুল রহমান বলেন, যা কুয়াশা পড়েছে। রাস্তায় কিছু দেখা যায়না। এতো কুয়ারশার কারনে গাড়ি চালাতে অনেক কষ্ট হয় আমাদের। সেই সাথে এতো ঠান্ডার কারনে যাত্রিও পাওয়া যায়না। এভাবে যদি শীত থাকে তাহলে যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
চৌরাস্তা মোরে অটোচালক মিন্টু ইসলাম বলেন, অনেক কুয়াশার কারনে আমরা যাত্রি পাচ্ছিনা যার ফলে আমাদের ডেইলী ইনকাম কমে যাচ্ছে।
এই প্রচন্ড শীতে ও ঘন কুয়াশার কারনে কাজ করতে অসুবিধা হওয়ায় অনেকটা বিপাকে পড়েছেন এই ঠাকুরগাঁও জেলার নিম্ন আয়ের মানুষরা। বিপাকে পড়েছে স্কুল কলেজে পড়া শিক্ষার্থীরা। সেই সাথে শীতে জড়ো-সড়ো হয়ে গেছে গবাদী পশুও। কেউ কেউ আবার খড়-কুটোতে আগুন জ্বালিয়ে করছেন শীত নিবারণের চেষ্টা।
সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়নের কৃষ্টপুর এলাকায় দেখা যায়, ঠান্ডা নিবারণের জন্য বেশ কয়েকজন মিলে আগুনের সাহায্য নিয়ে কিছু সময়ের জন্য তাদের শরীরকে সান্তনা দিচ্ছে। কিন্তু শীত কি আর সেই সান্তানা মানে। হয়তো থাকবোনা আর বেঁচে, মারা যাবো। কারন এই শীতে থাকা অনেক কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। নেই শীতের ভালো কাপর । যদি সরকার আমাদের সাহায্য করে তাহলে হয়তো এই প্রখর শীতে একটু শান্তি পাবো। এমনি মন্তব্য করেছেন ইউনিয়নের কৃষ্টপুর গ্রামের বাসিন্দা জমিল উদ্দীন।
ঐ গ্রামের আরেক বাসিন্দা ফাতেমা বলেন, যা ঠান্ডা আর শীত পরিছে। ফের আবার হামার নাই খারপ। কিযে হবে। সরকারটি যদি দয়া করে কোন সাহায্য করে তাহলে হামার তানে ভালো হয়।
কথায় আছে শিক্ষাই জাতীর মেরুদন্ড। কিন্তু এই প্রচন্ড শীতে নিজের শরীরের মেরুদন্ডই কাজ করছেনা বলে মন্তব্য অনেকের। এই প্রচন্ড শীতে শুধুমাত্র পরীক্ষার জন্যই কলেজে আসতে হচ্ছে। কারন তারা জানেন শিক্ষাই জীবনের সব।
এরই লক্ষ্যে কথা হয় ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের অনার্স ১ম বর্ষের বুলবুলি নামের শিক্ষাথীর সাথে। তিনি বলেন, হঠাৎ করেই পরেছে আমাদের জেলায় অনেক শীত। যতই বেলা পড়ছে মনে হচ্ছে বেড়েই চলছে এই শীত। বাসা থেকে কলেজে আসতে অনেক কষ্ট হচ্ছে তার।
আরেক শিক্ষাথী আশা মনি জানান, শুধু মাত্র কলেজে সামনে পরীক্ষা তার জন্যই কলেজে আসতে হয়েছে। ঠান্ডার তাপমাত্র অনেকটাই বেড়ে গেছে যা বলার বাহিরে। অনেক কুয়াশার কারনে রাস্তায় ভালো করে কিছু দেখা যায়না। এর পরেও কষ্ট করে বেড় হতে হচ্ছে বাসা থেকে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কে এম মাউদুদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের উত্তরের জনপত আমাদের এই ঠাকুরগাঁও। আমাদের এখানে ডিসেম্বরের ১২-১৩ তারিখ থেকেই শুরু হয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত তাপমাত্রা রেকর্ড করেছি ২২ ডিগ্রী থেকে ২৪ ডিগ্রী পর্যন্ত এবং সর্বনি¤œ প্রায় ১২ডিগ্রী। এমন অবস্থায় আমাদের মাঠকর্মীরা সহ সকল পর্যায়ের কর্মকর্তারা সজাক আছেন । যেন কোন ভাবে কোন রোগের সম্মুক্ষিন না হয়।
ঠাকুরগাঁও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক জহুরুল ইসলাম বলেন, হিমালয়ের কাছাকাছি জেলা আমাদের ঠাকুরগাঁও। –সেই কারনেই বাকী জেলাদের তুলোনায় ঠাকুরগাঁওয়ে শীতের তীব্রতা একটু বেশি। এই শীতে অসহায়, দরিদ্র মানুষ ও বৃদ্ধা যারা রয়েছে তাদের শীত বস্ত্রের প্রয়োজন হয়। এবারে প্রধানমন্ত্রী আমাদের জেলায় ২১ হাজার শীত বস্ত্র পাঠিয়েছে। সেই সাথে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে ১৩হাজার ১’শ ৭৭টি শীতবস্ত্র পেয়েছি। এর মধ্যে আমাদের ৫টি উপজেলায় প্রেরণ করেছি তাদের চাহিদা অনুযায়ী। ঠাকুরগাঁওয়ের কোন মানুষ শীতে কষ্ট পাবেনা বলে জানান তিনি।