স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহের আবিষ্কার ও মহাকাশ যাত্রার ইতিহাস খুব একটা পুরনো নয়। ষাটের দশকে প্রথমবারের মতো এ গৌরব অর্জন করে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। পরের বছর যুক্তরাষ্ট্রও মহাকাশের উদ্দেশ্যে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে সক্ষম হয়।
এরপর একে একে ফ্রান্স, জাপান, চীন ও ভারতসহ ৫৬টি দেশ ম
১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মহাকাশের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে স্যাটেলাইট স্পুটনিক- ১। রাশিয়ার তৈরি এ কৃত্রিম উপগ্রহের মহাকাশ জয়ের মধ্যদিয়ে রচিত হয় আধুনিক বিজ্ঞানের নতুন এক অধ্যায়। একই বছরের দোসরা নভেম্বর স্পুটনিক-২ নামের আরো একটি কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠায় রাশিয়া।
পরের বছর এক্সপ্লোরার-১ নামের একটি কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের মধ্যদিয়ে মহাকাশ জয়ের দ্বিতীয় দেশের গৌরব অর্জন করে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পর ১৯৬৫ সালে মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে সক্ষম হয় ফ্রান্স। ১৯৭০ সালে একই গৌরব অর্জন করে জাপান।
বাংলাদেশের আগে সবশেষ এ তালিকায় যুক্ত হয় কোস্টারিকার নাম।
পৃথিবীর মাত্র ১০টি দেশ নিজস্ব প্রযুক্তি ও উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠাতে সক্ষম।
এর মধ্যে রয়েছে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জাপান, চীন, যুক্তরাজ্য, ভারত, ইসরাইল, ইউক্রেন এবং ইরান।
দক্ষিণ এশিয়ায় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের তালিকায় শীর্ষে ভারত। গেল বছর একদিনে ১০৪টি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে ইতিহাস গড়ে দেশটি। এর আগে ২০১৪ সালে রাশিয়া এক সঙ্গে ৩৭টি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছিল। এছাড়া, গেল বছর ৫ মে ''দক্ষিণ এশিয়া কৃত্রিম উপগ্রহ'' নামে একটি যৌথ প্রকল্পও শুরু করে ভারত।
জাতিসংঘের মহাকাশবিষয়ক সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর আউটার স্পেস অ্যাফেয়ার্সের (ইউএনওওএসএ) হিসাবে, ২০১৭ সাল পর্যন্ত মহাকাশে স্যাটেলাইটের সংখ্যা ৪ হাজার ৬৩৫। প্রতিবছরই স্যাটেলাইটের এ সংখ্যা ৮ থেকে ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে।
স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ও এর গতিবিধি নিয়ে কাজ করে এন২ওয়াইও.কম ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, সাবেক সোভিয়েত রাশিয়া ভুক্ত দেশগুলোর (কমনওয়েলথ অব ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টেটস) সম্মিলিত স্যাটেলাইট সংখ্যা ১৫০৪টি, যুক্তরাষ্ট্রের ১৬১৬টি, চীনের ২৯৮টি, জাপানের ১৭২টি, ফ্রান্সের ৬৮টি (জার্মানির সঙ্গে যৌথভাবে ১টি), ভারতের ৮৮টি, জার্মানির ৫২টি, কানাডার ৪৮টি, যুক্তরাজ্যের ৪২টি, ইতালির ২৭টি, দক্ষিণ কোরিয়ার ২৪টি, স্পেনের ২৩টি, অস্ট্রেলিয়ার ২১টি, আর্জেন্টিনার ১৮টি, ইসরাইলের ১৭টি, ব্রাজিলের ১৭টি (যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথভাবে ১টি এবং চীনের সঙ্গে যৌথভাবে ৩টি), ইন্দোনেশিয়ার ১৬টি, তুরস্কের ১৪টি, সৌদি আরবের ১৩টি, মেক্সিকোর ১২টি, সুইডেনের ১২টি, সিঙ্গাপুরের ৯টি, ডেনমার্কের ৯টি, তাওয়ানের ৯টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৯টি, থাইল্যান্ডের ৯টি, নরওয়ের ৮টি, মালয়েশিয়ার ৬টি, কাজাখস্তানের ৬টি, আলজেরিয়ার ৬টি, নাইজেরিয়ার ৬টি, দক্ষিণ আফ্রিকার ৬টি, নেদারল্যান্ডসের ৬টি, গ্রীসের ৪টি, লুক্সেমবার্গের ৪টি। পাকিস্তান, চিলি, ভেনিজুয়েলা, ভিয়েতনামের ৩টি করে; বেলারুশ ইকুয়েডর মিশর, চেক রিপাবলিক, উত্তর কোরিয়া ফিলিপিন্স, পোল্যান্ড এবং পর্তুগালের ২টি করে;
আজারবাইজান, বলিভিয়া, বুলগেরিয়া, এস্তোনিয়া, ইরাক, ইরান, লাটভিয়া, লাওস, লিথুনিয়া, মরক্কো, পেরু, স্লোভাকিয়া এবং উরুগুয়ের ১টি করে স্যাটেলাইট রয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার অনেকগুলো স্যাটেলাইট বর্তমানে কক্ষপথে অবস্থান করছে। এগুলোর মধ্যে ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর দ্যা এক্সপ্লয়টেশন অব মেরিওরোলজিক্যাল স্যাটেলাইটসের ৮টি, গ্লোবারস্টারের ৮৪টি, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির ৮২টি, ইউরোপিয়ান টেলিকমিউনিকেশনস স্যাটেলাইট অর্গানাইজেশনের ৫১টি, আরব স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন অর্গানাইজেশনের ১৩টি, এশিয়া স্যাটেলাইট টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানির ৮টি, ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল স্যাটেলাইট অর্গানাইজেশনের ১৭টি, ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনের ৭টি, নিউইকোর ১টি, ন্যাটোর ৮টি, ওথ্রিবি নেটওয়ার্কের ১৬টি, অর্বকমের ৪১টি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে।
আর ৫৭তম দেশ হিসেবে মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনের গৌরব অর্জন করলো বাংলাদেশ।