উত্তরা আধুনিক মেডিকেলের পেথিডিন মাদক ব্যবসায়ী বাবুল
রাজধানী উত্তরা ৯ নং সেক্টরে অবস্থিত উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এর চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারি মোঃ আব্দুল হাই বাবুলের বিরুদ্ধে ইনজেকটিং ড্রাগ্স ( পেথিডিন মাদক ) ব্যবসার অভিযোগ উঠেছে।
অভিযুক্ত আব্দুল হাই বাবুল ও তার স্ত্রী মরিয়ম হাসপাতালটির ওয়ার্ড বয় পদে এটেন্ডেন্ট হিসেবে চাকরি করেন। বাবুল হাসপাতালে ওয়ার্ড বয় পদে চাকরি করলেও সমাজে তাদের ব্যক্তি পরিচয় কোটিপতি হিসেবে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে প্রতিবেদককে বাবুলের সহকর্মীরা জানান, বাবুলের পারিবারিক মাসিক খরচই প্রায় লক্ষাধিক টাকা। তার বড় ছেলে অপু মাদকাসক্ত এবং নিজেও মাদক সেবন করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাবুলের এক সহকর্মী প্রতিবেদককে জানান, বাবুলের আয়ের পরিমান এতটাই বেশী যে, তার মাদকাসক্ত ছেলে অপুকে ছাত্র ভিসায় পড়াশোনা করাতে পাঠাচ্ছেন আমরিকায়। নিজের দৈনিক ব্যায় ২ হাজার টাকারও বেশী বলে তিনি জানান। তারা আরো বলেন, এত ব্যায়ের পরেও প্রতি বছর কিনছেন কোটি টাকার সম্পত্তি। তুরাগের ডিয়াবাড়ী, দক্ষিনখান ও গাজীপুরের পূবাইলে কিনেছেন একাধিক প্লট।
প্রতিবেদক এর সরেজমিন অনুসন্ধানে যেসব তথ্য বের হয়ে আসে তা রীতিমতো চমকে ওঠার মতো। বাবুল ধানমন্ডির সাবেক বাংলাদেশ মেডিকেল এর লিফ্ট অপারেটর হিসেবে চাকরি করতেন। নানা অপকর্মে চাকরিচুত্য হলে ২০০৭ সালে পরিচিত ডাক্তারের সহযোগিতায় বাংলাদেশ মেডিকেলের ( বর্তমান ‘উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ ’ ) উত্তরা শাখায় ওয়ার্ড বয় পদে এটেন্ডেন্ট হিসেবে চাকরি নেন। গড়ে তোলেন মেডিকেলের আশ পাশে অবৈধ ওষুধের বিশাল সিন্ডেকেট। চুক্তিবদ্ধ হন বিভিন্ন ফার্মেসীসহ অবৈধ ওষুধ ব্যবসায়ীদের সাথে। ২০১২ সালে বাবুল নিজেই ৪ ফিট প্রস্থ একটি দোকান ভাড়া নিয়ে তাতে ফার্মেসী গড়ে তোলেন।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজের বাথরুমসহ আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে অপারেশন থিয়েটারের সংরক্ষিত প্রেসক্রিপশনের ওষুধ “ পেথিডিন” এর আ্যাম্পুল ও তা ব্যবহারের সিরিঞ্জ। প্রতিবেদক মেডিকেলের বিভিন্ন স্থান ঘুরে এর স্বচিত্র প্রমান সংগ্রহ করেন। চিকিৎসাক্ষেত্রে পেথিডিন অপারেশন পরবর্তী ৩ থেকে ৪ ঘন্টা ব্যাথানাশক ও শারীরিক প্রশান্তিদায়ক হিসেবে মাংসপেশীতে, ত্বকের নীচে বা শিরার মধ্যে ইনজেকশন হিসেবে ব্যবহার হয়। এই পেথিডিন অপারেশন থিয়েটারের চেয়ে ১শ গুন বেশী ব্যবহার হয় মাদক হিসেবে।
মানসিক অসুস্থ এক প্রকারের মাদকসেবীরা মানসিক প্রশান্তির জন্য এটি ব্যবহার করে থাকেন এবং এর অধিকাংশ বেচাকেনা মেডিকেল কেন্দ্রিক হয়ে থাকে বলে জানা যায়। বর্তমানে উত্তরা আধুনিক মেডিকেলকে পেথিডিন ব্যবহারের উপযুক্ত স্থান হিসেবে বেচে নিয়েছেন মাদক ব্যবহারকারিরা। ইহা ছাড়াও টাপেন্টা, পেন্টাডল, লোপেন্টা, সিন্টা, সিন্টারলসহ বিভিন্ন ধরনের নিষিদ্ধ ওষুধ বিক্রির অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে বাবুল এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি প্রতিবেদককে জানান, পেথিডিন বিক্রির একমাত্র অনুমোদন রয়েছে ফেরদৌসী ফার্মেসীর। এটি তারা বিক্রি করেন, আমি করিনা।
ফার্মাসিস্ট বিষয়ে বাবুলের কোন সার্টিফিকেট না থাকলেও টাকার বিনিময়ে একটি ড্রাগ লাইসেন্স নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
তার ফার্মেসীটি মেডিকেলের পশ্চিম পাশে ১ নং রোডের ৩১ নং বাড়ীতে অবস্থিত। বাড়ীর মালিক আনিসুর রহমান রাজউকের নকশা বহির্ভূত স্থানে অবৈধভাবে দোকান উঠিয়ে ১২ লক্ষ টাকা জামানত নিয়ে প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা ধার্য করে তাকে ভাড়া দেন। বাড়ীটি রাজউকের তালিকায় আবাসিক ভবন থাকলেও বাস্তবতায় চলছে বানিজ্যিক ভবন হিসেবে। বাড়ীটিতে অবৈধ অপু ফার্মেসী ছাড়াও কয়েক কোটি টাকা জামানতের আওতায় মাসিক কয়েক লক্ষ টাকার বিনিময়ে ভাড়া দিয়েছেন প্রায় ১০ টির মতো ফার্মেসী। এতে রাজউকের ক্ষতি হয়েছে কয়েক কোটি টাকা। সিটি কর্পোরেশন বাৎসরিক রাজস্ব হারাচ্ছেন কয়েক লক্ষ টাকা। বিষয়টি নিয়ে রাজউকের অথোরাইজ অফিসার সরদার মাহবুব আলম জানান, বাড়িটি আমাদের নজড়ে এসেছে, আমরা তা ভাঙ্গার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করব।
এ বিষয়ে বাড়ীর মালিক প্রকৌশলী আনিসুর রহমান এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার নলেজে এসেছে বাবুল অবৈধ মেডিসিন ব্যবসার সাথে জড়িত আছে। আমি তাকে মৌখিক নোটিশ দিয়েছি, একটু তদন্ত করে লিখিত নোটিশ দিব।