নেত্রকোনার বারহাট্টায় প্রভাবশালীদের দখলে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্প আতঙ্কে প্রকল্পবাসীরা
সোহেল খান দূর্জয় নেত্রকোনা প্রতিনিধি :// দৈনিক ঢাকার কন্ঠ নিউজ
নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার অতিথপুর বাজারের পাশে আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমি দখল করে দোকানপাট করেছে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। তারা চালাচ্ছে আরো জমি দখলের পায়তারা। প্রতিবাদ করতে গেলে বিভিন্ন হুমকি-ধামকি, মার-পীট ও কেসকান্ডের শিকার হতে হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অসহায় বাসিন্দাদের। ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত রয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের দীন মজুর, গরীব ও নিঃস্ব ৪০/৫০ টি পরিবার।এই প্রকল্পে মোট জনসংখ্যা রয়েছে ২৫০-৩০০ শত।
১৯৯৮ সালে নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার সদর ইউনিয়নে অথিতপুর বাজার সংলগ্ন কংশ নদীর তীরে ১ একর জায়গা নিয়ে অথিতপুর বাজারের পাশে আশ্রয়ণ প্রকল্প গঠন করে তৎকালীন উপজেলা প্রশাসন, বতর্মানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধিনে ৫০ শতাংশ জমি রয়েছে মাত্র, আর বাকী সব জায়গা এই এলাকার স্হানীয় প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছিন্নমূল, দলিত সম্প্রদায় এবং হত দরিদ্রদের নিয়ে এই বসতী গড়ে তোলা হয়।
পরিবার প্রতি ১৪.৭৫ শতক জমি দেয়া হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে বারহাট্টা উপজেলা( বতর্মানে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম) মাঠে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আশ্রয়ণ প্রকল্পবাসীদের হাতে দলিল তুলে দেন নেত্রকোনা-২(নেত্রকোনা-বারহাট্টা) আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট ফজলুর রহমান খান। কিন্তু এই আশ্রয়ন প্রকল্পে জ্ঞানের আলোর কমতি নেই।
এখানে বসবাস করছেন কয়েকজন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা।
গত কয়েক বছরের ব্যবধানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রায় ৯০℅ জমি দখল করে নিয়েছে স্থানীয় অথিতপুর গ্রামের প্রভাবশালী মৃত সাহেব আলীর ছেলে মোঃ সোহেল,মৃত আব্দুল রাশিদের ছেলে খোকন, মাইন উদ্দিন মাষ্টার,মৃত কাশেম আলীর ছেলে হুমায়ুন,মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে মনি,মৃত আবুলের ছেলে মিলন,মৃত আব্দুল সাত্তারের ছেলে নন্দন,মৃত আব্দুল ওয়াহাবের ছেলে রেজাউল,মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে রনি। জমি দখল করে যে যার মত দোকানঘর তুলেছে, এবং অন্য দিকে কংশ নদীর ভাঙ্গন খেরে নিচ্ছে তাদের শেষ সম্বল।
এ আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা ও এই প্রকল্পের বতর্মান সভাপতি কাচা আলী জানায়,এখানে আমরা ভিষন কষ্টে আছি। প্রভাবশালীরা আমাদের জমি দখল করে নিয়েছে। গাছ কেটে নিচ্ছে। আমাদের প্রতিবাদ কোন কাজে আসছেনা। আমরা তাদের কাছে জিম্মি হয়ে আছি। কয়েক দিন আগে সন্ধ্যা বেলায় নায়েব সাহেবকে নিয়ে আসছিল সিংধা ইউনিয়নের। তার পরদিন সকাল বেলা আমাদের জমিতে আরো অনেক দোকান ঘর তুলে এই প্রভাবশালীরা। আমরা এ বিষয়ে থানার ওসি এবং ইউএনও সারের কাছে নালিশ করে আসছি। কিন্তু এখনো কোন প্রতিকার পাইনি।অতিথপুর প্রকল্পের বাসিন্দা ও এই প্রকল্পের সাবেক সভাপতি মোঃ মুখছেদ আলী জয়েজ জানায়, আমাদের কোনো সম্পদ নেই তাই সরকার আমাদের থাকার জন্যে এই জায়গাটি ১৯৯৮ সালে আশ্রয়ন প্রকল্পের নামে দান করে।অথিতপুর বাজারের প্রভাবশালী মাইনুউদ্দিন মাষ্টার সহ আরো অনেকেই এই প্রকল্পের জায়গায় জোর করে দোকানপাট করে আমরা তাদের কিছু বললে তারা আমাদের বিভিন্ন হুমকি দেয়। আমরা বতর্মানে তাদের ভয়ে ভাঙা ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করলেও ঘর মেরামত করতে পারছি না। এই জায়গায় আমাদের বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েজন জানান, অথিতপুর আশ্রয়ন প্রকল্পের জায়গায় তাদের নামে বুয়া কাগজ করে, জাল-জালিয়াতি করে কাগজ পত্র বানিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমি দখল করে আছে এই প্রভাবশালীরা। আশ্রয়ণবাসীরা প্রভাবশালীদের কাছে অসহায়। প্রতিবাদের সামর্থ তাদের নেই। অপর দিকে প্রশাসনও এ বিষয়ে কোন নজর দিচ্ছে না।তবে জমি দখলকারী হিসেবে অভিযুক্ত সোহেল জানায়, কাগজপাতি আমাদেরও আছে। এত কথার কাজ নেই।
একদিকে যেমন প্রভাবশালীদের জায়গা দখলের মহা উৎস শুরু হয়েছে তেমনি আবার অন্য দিকে কংশ নদী ভাঙ্গন দুইয়ে মিলে মহা বিপদে আছে এই আশ্রয়ন প্রকল্পের বসবাসকারীরা।
এ ব্যপারে বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম মাজহারুল ইসলাম জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের এক ইঞ্চি জায়গা কেউ দখল করার সাহস রাখে না। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে দখলকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, তারা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন।
সোহেল খান দূর্জয়
নেত্রকোনা প্রতিনিধি
২০.০৮.২০২১