সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:১৬ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ
বনানীতে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ ও বিয়ার সহ এক মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার  খিলক্ষেত প্রেসক্লাবের-২০১১ সালের পর আহ্বায়ক কমিটি গঠন ২০২৪ মাধবপুরে সাবেক প্রতিমন্ত্রীসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে যুবদল নেতার মামলা  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র হত্যা মামলা : এজাহারভুক্ত পলাতক আসামি শাহ আলম তুরাগে আটক ব্যাংক লুটেরাদের দেশে ফিরে এনে বিচারের আওতায় নিতে হবে: মির্জা ফখরুল হাজীক্যাম্পের সামনে বঙ্গোমাতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সড়কের দুই পাশে বসেছে ভাসম্যান বাজা,মাদকসেবিদের দৌরাত্ম  লালমনিরহাটে ফেন্সিডিল সহ নাছিমা গ্রেফতার টস জিতে বোলিংয়ে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইসার আজ আসছেন হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন বেগম খালেদা জিয়া

নেত্রকোনার দূর্গাপুরে টয়লেটে ২০ বছর ধরে শিকলবন্দি শংকরী

নেত্রকোনার দূর্গাপুরে টয়লেটে ২০ বছর ধরে শিকলবন্দি শংকরী

 

 

সোহেল খান দূর্জয় নেত্রকোনা প্রতিনিধি :// দৈনিক ঢাকার কন্ঠ নিউজ

 

নেত্রকোনার দূর্গাপুরে পাকা নয় পুরাতন টিনে মোড়ানো ভাঙা টয়লেটে ২০ বছর ধরে শিকলবন্দী রয়েছেন শংকরী লাল গুহ (৪৫)। নড়াচড়ার সুযোগ নেই। এভাবেই নিজ গৃহে কারাবাসের জীবন কাটছে তার।

 

এই কথাটি নেত্রকোনার দুর্গাপুর পৌর শহরের আমলাপাড়া মৃত শম্ভুলাল গুহের তৃতীয় সন্তান শংকরীর গল্প। তিনি ছাড়াও তার রয়েছে বড়ো দুই বোন, ছোট আরও একটি ভাই।

 

মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীর চিকিৎসা নেই। এভাবেই পরে আছে। তার যুদ্ধ চলছে জীবনের সাথে। দেখলে মনে হবে জীবন সত্যিই দুর্বিষহ। যন্ত্রণার কিংবা বেদনার। কিংবা কেউ কারো নয় এখানে। পরিত্যক্ত টয়লেটে দুর্গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে। টয়লেটে বাঁশের মাচার ওপর কাঠের তক্তা পেতে জীবন কাটছে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীর।

 

পরিত্যক্ত টয়লেটেই তার বন্দী জীবন। কারাগারের মতো বিছানা বালিশ ছাড়া শুয়ে বসে জীবনের ২০ বছর পার করছে শংকরী লাল গুহ । কোনো স্মৃতি বা অনুভূতি নেই আর। সে যে মানুষ এটুকুও ভুলে গেছে সে।

শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ডান পায়ের গোড়ালির ওপরে লোহার শিকল দিয়ে করা হয়েছে তালাবদ্ধ। আরেক পাশ বাঁধা টয়লেটেই আরেকটি মোটা বাঁশের সঙ্গে। দীর্ঘদিনের ওই বাঁধনে পায়ে দাগ পড়েছে, শিকলেও ধরেছে মরিচা। তবুও তার জীবনের যেনো মুক্তি নেই! এভাবেই খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, পয়ঃনিষ্কাশনসহ সবকিছু চলে।

 

স্বজনরা বলছেন, খুব মেধাবী ছিলেন শংকরী। যদিও এখন জীবন কাটছে বন্দি কয়েদির মতো। তবে কয়েদিদের মানবাধিকার থাকে। কিন্তু শংকরীর, তাও নেই। নেই কোনো মুক্তির স্বপ্নও। পরনে একটি কালো রঙের জামা। পুরাতন হয়ে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। তা দিয়েই কোনরকমে ঢাকা শরীর। মাথার চুলগুলোতে শক্ত হয়ে বেঁধেছে জট।

 

মেধাবী শিক্ষার্থী শংকরী দুর্গাপুর শহরের বিরিশিরি মিশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়ালেখা করেছেন দীর্ঘদিন। পড়াশোনাকালীন বাবার মৃত্যুতে থমকে যায় পুরো পরিবার। বাবার শোক কাটিয়ে মামার বাড়িতে থেকে বেশ কয়েকদিন পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও দরিদ্রতার কারণে নবম শ্রেণির গণ্ডি পেরোতে পারেননি তিনি।

 

একসময় পড়াশোনা ছেড়ে সংসারের কাজে মনোযোগ দেন শংকরী। ২০০১ সালে হঠাৎ করে একদিন নাকের সমস্যা দেখা দিলে কয়েকদিনের ব্যবধানে তা রূপ নেয় টিউমারে। পরিবারের সদস্যরা এর চিকিৎসা করে ভালো করলেও এরপর থেকে হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে পরিবর্তন হতে শুরু করে তার আচরণ।

একপর্যায়ে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে শংকরী।

তখন থেকেই শুরু বন্দিজীবন। পায়ের কখনো বা মোটা রশি কিংবা শিকল বেঁধে স্বজনরা শুরু করে আটকে রাখার চেষ্টা। পাগল মেয়েকে কোনোরকম শান্ত রেখে সবসময় দেখাশোনা করতেন মা।

 

২০১৩ শেষের দিকে তিনিও পারি জমিয়েছেন পরপারে। পুরো সংসারের ভার পরে ছোট ভাই জীবন লাল গুহের কাঁধে।

 

স্থানীয় একটি বেসরকারি প্যাথলজিতে পিয়নের চাকরি করে সংসার চললেও বোনের চিকিৎসার অর্থ জোগাতে পারেন না তিনি।

 

তাছাড়া পুরো বাড়ি জুড়ে ভাঙাচোরা টিনের এই একটিমাত্র ঘর। ঘরের দুটি রুমে গাদাগাদি করে থাকছেন পাঁচ সদস্যের পরিবার। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না পেয়ে বাড়ির পেছনে পুকুর ঘাটের সঙ্গে পরিত্যক্ত টয়লেটের ওপর টিনের বেড়া দিয়ে তার ভেতর রেখেন মানসিক ভারসাম্যহীন বোনকে।

এরপর থেকে টয়লেটের ভাঙা ঘরেই নিঃসঙ্গ জীবন কাটছে শংকরীর।

 

স্থানীয়রা জানায়, বছরের পর বছর ধরে আমরা শংকরীকে এভাবেই

শংকরীর স্কুলের সহপাঠী শ্যামল রায় জানান, শংকরী অনেক মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। বেশিরভাগ সময় তিনি মামারবাড়ি শিবগঞ্জ থেকেই বিরিশিরি মিশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পড়াশোনা করতো। হঠাৎ করেই কি জানি হয়ে গেলো। পরিবারের সদস্যরা অনেক চিকিৎসা করিয়েছেন তবুও তাকে ভালো করতে পারেনি। ভাই সংসারের বোঝা টেনে নিয়ে আর চিকিৎসা করতে পারেননি। সে খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছে।

 

শংকরী ভাই জীবন লাল গুহ বলেন, হঠাৎ করেই আমার বোন অসুস্থ হয়ে গেছেন। আমরা চিকিৎসা করিয়েছি। প্রায় ২০ বছরের বেশি হয়ে গেছে তার মানসিক সমস্যা। অনেক কষ্ট লাগে, কিন্তু কী করবো! আমার সামর্থ্য নেই। সামান্য একটা চাকরি করে কোনো রকমে সংসার চলে। নিজের ঘর ভেঙে পড়ছে। এখন তার জন্য একটা ঘর করে দেবো তারও কোনো ব্যবস্থা নেই। টাকার সঙ্কটে চিকিৎসা করতে পারতেছিনা।

 

দুর্গাপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিব উল আহসান বলেন, ওই নারীর অসুস্থতার বিষয়টি শুনেছি। আমি খুব দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবো। এছাড়া খবর পেয়ে খাবারের ব্যবস্থা করেছি। ঘরের জন্য টিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

 

 

সোহেল খান দূর্জয়

নেত্রকোনা প্রতিনিধি

২১.০৮.২০২১

Please Share This Post in Your Social Media

দৈনিক ঢাকার কন্ঠ
© All rights reserved © 2012 ThemesBazar.Com
Design & Developed BY Hostitbd.Com