আমরা অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বিতা অর্জন করতে চাই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একেবারে তৃণমূলের অবহেলিত মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আমাদের এই গুণীজনরাইতো পথ দেখাবে। আপনাদের এই অবদান বিভিন্ন ক্ষেত্রে রয়েছে বলেই আজকে আমাদের এই অগ্রযাত্রা সম্ভব হয়েছে। আপনাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমাদের নতুন প্রজন্ম যেন দেশের কল্যাণে কাজ করে সেটাই আমি চাই।
গতকাল অমর একুশে ফেব্রুয়ারি এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ‘একুশে পদক ২০২২’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের মাঝে পদক বিতরণ করেন। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এবং পদক বিজয়ীদের সাইটেশন পাঠ করেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব আবুল মনসুর অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একুশ আমাদের প্রেরণা দেয়। একুশ মানে মাথা নোয়াবার নয়। তাই, অমর একুশে ফেব্রুয়ারি দিবসটি আমাদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। একুশের পথ ধরে বহু সংগ্রামের পথ বেয়েই আমাদের স্বাধীনতা অর্জন, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সংগ্রামে বিভিন্ন জন যারা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন তারাতো বটেই, এর বাইরেও অনেকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। প্রতিটি সংগ্রামে অবদান রয়েছে মানুষের।
তিনি বলেন, কেউ সরাসরি রাস্তায় নেমে আন্দোলন যেমন করেছেন ঠিক পাশাপাশি ভাষা-সংস্কৃতির মাধ্যমে-গান, নাটিকা, কবিতার প্রভৃতির মাধ্যমে এই আন্দোলনকে সহযোগিতা করেছেন এবং তাদের অবদান সবসময় চিরস্মরণীয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে যে ক’জন গুণীজন পুরস্কৃতি হয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকেই সেই ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে, ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান, ’৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে অনেক অবদান রেখেছেন। কাজেই তাদের খুঁজে বের করা এবং সম্মানিত করা এবং দেশের নতুন প্রজন্মের সঙ্গেও তাদের পরিচয় ঘটানো- যে কত ত্যাগ তিতীক্ষার মধ্যদিয়ে আমাদের এই স্বাধীনতা অর্জন ছিল। কোন হঠাৎ ঘোষণার মধ্যদিয়ে স্বাধীনতা আসে না এবং সেটা আসেনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে সংগ্রামের শুরুই করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। জাতির পিতারই অবদান আজকে আমাদের স্বাধীন জাতিস্বত্তা এবং বাংলাদেশ একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পেরেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা যখন দেশ স্বাধীন করে একট যুদ্ধ বিধ্বস্থ দেশ গড়ে তুলে বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখনই তাকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির ওপর আঘাত এল। পরাজিত শক্তি ’৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয়ের প্রতিশোধটাই নিয়েছিল ১৫ আগস্টে। কেননা, জাতির পিতাকে হত্যার পর যে আদর্শ বা নীতি নিয়ে দেশটা স্বাধীন হয়েছিল তার থেকে দেশকে অনেক দূরে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। ২১ বছর পর ’৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় এসেই আওয়ামী লীগ সরকার তা আবার পুন:প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়।
তিনি বলেন, আমরা যখন পুনরায় সরকারে আসি তখন আমাদের প্রচেষ্টাই ছিল ২১শে ফেব্রুয়ারি শুধু আমাদের নয়, যারা মাতৃভাষা ভালবাসে এবং মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছে সেই মাতৃভাষাকে সংরক্ষণ করা, হারিয়ে যাওয়া মাতৃভাষাকে খুঁজে বের করাটাই সরকারের প্রচেষ্টা হয়ে দাঁড়ায়।
সরকার সে প্রচেষ্টায় সফল হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে ২১শে ফেব্রুয়ারি শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ^ব্যাপী পালিত হচ্ছে। কারণ, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে আমরা স্বীকৃতি পেয়েছি। কাজেই, আমাদের সকলকে এদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে-কেননা যা কিছু আমাদের অর্জন, যা কিছুই আমরা করতে পেরেছি মহান আত্মত্যাগের মধ্যদিয়েই আমরা তা করতে পেরেছি।
অর্জিত স্বাধীনতাকে সমুন্বত রেখেই এগিয়ে যাওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি, বাংলাদেশকে বিশ্বে ’৭৫ এর পর যেভাবে হেয় করে দেখা হোত এখন তা আর হয় না। ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের বিয়োগান্তক ঘটনা না ঘটলে এটা হয়তো আমরা আরো আনেক আগেই করতে পারতাম।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ’৭৫ এর ছোট বোন রেহানাসহ বিদেশে রিফিউজি হিসেবে জীবন কাটাতে বাধ্য হবার কথা স্মরণ করে বলেন, তবে, আমাদের প্রতিজ্ঞা ছিল যখনই সুযোগ পাব এদেশের দুঃখী মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করার মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে আবার বিশ^ দরবারে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করার। আজকে আমরা বিশে^ মাথা উঁচু করে চলতে পারি।