সোহেল খান দূর্জয় নেত্রকোনা জেলার প্রতিনিধি:// নিউজ দৈনিক ঢাকার কন্ঠ
নেত্রকোনার বারহাট্টায় সবজি চাষে সফল মডেল কৃষক সন্তুস বিশ্বাস
সোহেল খান দূর্জয় নেত্রকোনা প্রতিনিধি : বিষমুক্ত শাকসবজি উৎপাদনে মডেল কৃষক সন্তুস বিশ্বাস (৫১)। তিনি কোনো ফসলেই ব্যবহার করেন না কীটনাশক। সার ব্যবহারেও তিনি সাশ্রয়ী। এসব চাষ করছেন শুধু জৈবসার ব্যবহার করে।
এ উপজেলায় এবার রানীগোলাপী ও হলুদ ফুলকপি চাষ করে সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি। সমখরচে অধিক লাভের কারণে প্রতিবেশী কৃষকদের মাঝেও ব্যাপক সাড়া পড়েছে।
সবজি চাষী সন্তুস বিশ্বাস বারহাট্টা উপজেলার সদর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা।
গবেষণায় বলছে, রানীগোলাপী ও হলুদ ফুলকপিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা ক্যান্সারের সেল বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে। ফলে রঙিন ফুলকপি রয়েছে বাজারে ব্যাপক চাহিদা। মূল্যও দ্বিগুণ। সন্তুস বিশ্বাস নিয়মিতভাবে প্রায় ২৫ শতাংশ জায়গাই শশা, ডাটা, লাউ, ঢেঁড়শ, ফুলকপি, বেগুন, মরিচ, টমেটো, শিম, ক্যাপসিকাম, মিষ্টি কুমড়া, ফুলকপিসহ মৌসুমি শাকসবজি নিয়মিত চাষ করেন।
সন্তুস বিশ্বাস জানান, রঙিন ফুলকপি আর সাধারণ ফুলকপি উৎপাদন খরচ একই। তবে রঙিন হওয়ায় এ ফুলকপির দাম দ্বিগুণ। তিনি বারহাট্টা উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ২শত বীজ এনে রোপণ করেছিলেন। একটা ও মরেনি। সন্তুস বিশ্বাস অন্যান্য সবজির পাশাপাশি পরীক্ষামূলকভাবে ২ শতাংশ জমিতে ২শত ফুলকপির বীজ রোপণ করে প্রায় ২০ হাজার টাকার ফুলকপি বিক্রি করেন।
তিনি আরও জানান, ফুলকপি ক্ষেতের ভিতরে ও পাশে কচু, লাল শাক, বেগুন, ও টমেটো রোপণ করা হয়েছে। নতুন এই সবজি অন্যান্য সবজির তুলনায় অধিক বেশি মূল্য থাকে।
এ বিষয়ে সরেজমিন ঘুরে এসে বারহাট্টা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমাদ বাবুল বলেন, এ ধরনের বাহারি রঙের রঙিন সবজি আমার মনে হয় বারহাট্টা এবারেই প্রথম চাষ হয়েছে, তিনি বলেন কৃষক সন্তুস বিশ্বাস একজন পরিশ্রমী মানুষ তার ধারাই সম্ভব হয়েছে এই ধরনের বাহারি রঙের রঙিন চাষ করা। সন্তুস বিশ্বাসকে সহযোগিতা করার জন্যে বারহাট্টা কৃষি বিভাগকে আমি আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার উচ্ছাস পাল জানান, সন্তুস বিশ্বাস নতুন কোনো ফসলের খবর পেলেই তিনি সেটা চাষ করবেন। সেই ধারাবাহিকতায় এ উপজেলায় প্রথম রানীগোলাপী ও হলুদ ফুলকপি চাষ করেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রাকিবুল হাসান জানান, রঙিন ধরনের শাকসবজির প্রতি কৃষক সন্তুস বিশ্বাসের আগ্রহ অনেক বেশি। সেজন্য তিনি রানীগোলাপী ও হলুদ ফুলকপি প্রথম করলে ও অধিক লাভবান হয়েছেন। আমরা চাই সব কৃষকের মাঝে তথ্য-প্রযুক্তির নতুনত্ব পৌঁছে দিতে। সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।
তিনি আরও জানান, ভিটামিন সি, ই, কে, ফলিক অ্যাসিড, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যারোটেনেয়ড সমৃদ্ধ সবজি হচ্ছে ফুলকপি। এই সবজি ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে।
বিশেষ সূত্রে জানা যায়, গবেষণায় আরও দেখা গেছে, নিয়মিত ফুলকপি খেলে রক্তচাপ কমে, হজমশক্তি বাড়ায়, প্রদাহ কমায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
ইউরোপিয়ান জার্নাল অব নিউট্রিশনে প্রকাশিত এক তথ্য থেকে জানা যায়, ফুলকপির জুস স্তন ক্যান্সারের সেল বৃদ্ধি কমায়। বয়ঃসন্ধির সময় নিয়মিত ফুলকপির রস খেলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি ৭২ শতাংশ কমে যায়। এটি প্রস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধেও বেশ কার্যকরী।
জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট জার্নালের এক গবেষণা অনুসারে, ফুলকপিতে থাকা আইসোথিয়োকানেটস ও ক্যারোটিনয়েডস উপাদান ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
১৭.০৩.২০২২ ইং