পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনা জেলার বিভিন্ন নদনদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় বাঁধ ভেঙে ফসল হানির আশঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন হাওরপাড়ের কৃষকরা।
বর্তমানে জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার ধনু নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে বাঁধসংলগ্ন ধনু নদীর পানি বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত।
নদনদীর পানি কমতে থাকায় জেলার খালিয়াজুরী, মদন ও মোহনগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন হাওরে পুরোদমে ধাট কাটা শুরু করেছেন কৃষকরা। এরই মধ্যে তিন হাওর উপজেলায় ১৩ ভাগ ধান কাটা হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। গত কয়েক দিনে পাহাড়ি ঢলের কারণে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় খালিয়াজুরীসহ তিন উপজেলার হাওরাঞ্চলে বোরো ফসল ঘরে তোলা নিয়ে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠায় ছিলেন কৃষকরা। পানি কমতে শুরু করায় দুশ্চিন্তা কিছুটা কমেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এক থেকে দেড় সপ্তাহের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে সব ফসল ঘরে উঠবে বলে জানান কৃষকরা।
গত ৫ এপ্রিল খালিয়াজুরী সদর ইউনিয়নের সাত কিলোমিটারব্যাপী কীর্তনখোলা হাওরের বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। বাঁধ রক্ষায় স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, জনপ্রতিনিধিরা বাঁশের খুঁটি পুঁতে বালিভর্তি বস্তা ফেলে আপ্রাণ চেষ্টা চালান। এতে সফল হন হাওরপাড়ের মানুষ। ফসল ঘরে তোলা নিয়ে দূর হয় শঙ্কা। মোহনগঞ্জের ডিঙ্গাপোতা হাওর, গাগলাজুর, চরহাইজদা বাঁধ এলাকাসহ খালিয়াজুরী সদর ইউনিয়নের কীর্তনখোলা হাওর, চুনাই হাওর, বাদিয়ারচর হাওর, টাকটারের হাওর, মনিজান হাওর, লেবরিয়া হাওর, হেমনগর হাওর, চাকুয়া ইউনিয়নের গঙ্গবদর হাওর, নয়াখাল হাওর, গাজীপুর ইউনিয়নের বাগানী হাওর, মদন উপজেলার গবিন্দশ্রী হাওর, তলার হাওর, মাঘান হাওরে চলছে ধান কাটা উৎসব।
মদন মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরী তিন উপজেলায় বিভিন্ন হাওরে দুদিনে আবাদকৃত ৪৪ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে ৫ হাজার ৩২০ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ।
জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং কৃষি বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ২৭৫টি আধুনিক কৃষিযন্ত্র (কম্বাইন হারভেস্টার) ও বাইরের দুই সহস্রাধিক কৃষি শ্রমিক নিয়োগে এবং স্থানীয় প্রায় আট হাজার কৃষি শ্রমিকের মাধ্যমে হাওরে ধান কাটা চলছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ফসল ঘরে উঠবে এমনটাই জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এফএম মোবারক আলী।
নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক কাজী মো. আবদুর রহমান জানান, পাহাড়ি ঢলের কারণে খালিয়াজুরীর কীর্তনখোলা বাঁধের কয়েকটি অংশে ফাটল দেখা দেয়। এতে বাঁধ ভেঙে বন্যার আশঙ্কায় ছিলেন কৃষকরা।
এ পরিস্থিতিতে গ্রামবাসীর সহায়তায় তাত্ক্ষণিক বাঁধ মেরামত ও সুরক্ষায় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বাঁধসংলগ্ন ধনু নদীর পানি বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বর্তমানে তিন উপজেলার হাওরের কৃষক ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পাকা ধান কাটা শুরু করেছেন।
১১.০৪.২০২২ ইং