শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১০ অপরাহ্ন
আতংকের আরেক নাম সোর্স কুদরত ! কে এই কুদরত ?
ডিবি পুলিশের সোর্স কুদরতের কুঠির জোর কোথায়.? একের পর এক অপকর্ম করেও বার বারই পার পেয়ে যাচ্ছে হবিগঞ্জ জেলা মাধবপুর উপজেলার ১১নং বাঘাসুরা ইউ’পির হরিতলা গ্রামের আনোয়ার আলীর ছেলে কথিত পুলিশ ও ডিবির সোর্স কুদরত আলী এলাকায় নীরিহ লোকজনকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন ভাবে জিম্মি করে টাকা আদায় করছে এবং এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর জন্য ভয়ে এলাকার লোকজন মুখ খোলে কিছু বলেন না বা প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।
সম্প্রতি উপজেলার ছাতিয়াইন ইউনিয়নের এক্তারপুর গ্রামের জনৈক ফালান মিয়ার বাড়ি থেকে ডিবি পরিচয় দিয়ে ৩টি দামী মোবাইল সেট নিয়া যায়। পরে ঘটনা জানি জানি হয়ে গেলে কুদরত আলীর চাচাতো ভাই খোকন মিয়া জনৈক ব্যাক্তিকে জানায় যে কুদরত ই ডিবির পরিচয়ে মোবাইল চুরি করে। সাথে সাথে লোকজন কুদরত আলির বাড়ি ঘেরাও করে এবং তাকে বলে মোবাইল গুলি দিয়ে দেওয়ার জন্য। কুদরত তাদের কাছ থেকে দু’দিন সময় নেন, যে এর ভিতরে মোবাইল ফেরত দিবে।
অন্যদিকে খোকন কেন এ তথ্য দিল তাকে মোবাইলে ভয়েস ম্যাজেসসহ ফোনে প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকে। এ ব্যাপারে খোকন মাধবপুর থানায় মামলা দায়ের করে। এতে কুদরত আর ও ক্ষিপ্ত হয়ে গিয়ে গত ৭ই এপ্রিল রাত ৯ টার দিকে মেটাডর কোম্পানির পাশে খোকন মিয়ার উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে তাকে ক্ষত-বিক্ষত করে আহত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে চলে যায়।
পরে স্থানীয় লোকজন খোকনকে উদ্ধার করে মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করে। পরবর্তীতে তার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা আধুনিক সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার অনেকেই দাবী করছে সোর্স কুদরত টাকার বিনিময়ে যে কোন ব্যক্তিকে মাদকসহ যে কোন অপরাধে ফাসানো তার জন্য নতুন কোন কিছুই নয়। যার ফলে কুদরত কে দেখলে সাধারন মানুষ আতংকিত হয়ে যায়। শুধু তাই নয় কুদরত এর দ্বারা অগনিত মানুষ হয়রানির স্বীকার হচ্ছে বলে ও ভুক্তভুগিরা জানান।
এছাড়া মাদক ব্যবসা, চোরাচালান, মামলার ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিয়ে মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের আদায় করে যাচ্ছে সোর্স কুদরত।
নিজস্ব লোক দিয়ে চুরি, ডাকাতি করানো এবং চুরির ডাকাতি মামলায় ফাসিঁয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে চাদা দাবীসহ শতাধিক অভিযোগ রয়েছে কুদরতসহ তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘ বছর যাবত সোর্স পেশায় কাজ করার ফলে তিনি নিজেই সমগ্র জেলায় তৈরী করে নিয়েছে কয়েকটি সিন্ডিকেট। তাঁর এক সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে মাদক আমদানি পাচার। এক সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ভারতীয় শাড়ী, ত্রি-পিছ, জিরা, গাড়ীর টায়ার ও চা-পাতা আমদানী ও পাচার। অপর সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রনে বিভিন্ন মামলায় আসামী করা ও মামলা থেকে নাম কর্তনের কথা বলে টাকা আদায়। আর সে নিজে বিভিন্ন ব্যক্তিকে মাদক মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় ফাসিঁয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায়। এসব অপকর্ম করে তিনি অল্প দিনেই ত্রাসের রাজত্ব গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে ।
ডিবি পুলিশের চিহ্নিত সোর্স কুদরত এলাকায় বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত ব্যক্তিসহ মামলা মোকদ্দমার আসামীদের কাছ থেকে ডিবির সোর্স পরিচয় দিয়ে বলে যে, স্যার যা দাবী করছেন তা দিয়ে দেন, না দিলে আপনি সহ আপনার আত্মীয় স্বজনরা বিপদে পড়বে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন অনেক ভুক্তভোগী রয়েছে।আর এতে করেই বেড়িয়ে আসতে থাকে সোর্স কুদরতসহ তার সিন্ডিকেটের সকল অপকর্মের ফিরিস্তী।
একাধিক নির্বরযোগ্য সুত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়,এত কিছুর পরেও তিনি কিভাবে সকল অপরাধ থেকে মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। সবারই এখন একই কথা সোর্স কুদরতের কুঠির জোর কোথায় ? তবে সে নিজেকে বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা শাখার ওসির ধর্ম পুত্র পরিচয় দিয়ে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছেন সর্বত্র।
আরো জানা যায়, হবিগঞ্জ জেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় নিজেস্ব লোকজন তৈরী করেন সোর্স কুদরত। আর ওই সকল লোক দিয়ে মাদক ব্যবসাসহ সকল অপকর্ম পরিচালনা করে আসছেন।
এদিকে একটি নির্বরযোগ্য সুত্র জানায়,
একই সাথে মাদক ব্যবসায়ীদের মাসোহারা দিয়ে তাদের মাদক ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ করে দেয়া হয়।
মাধবপুর থানার ছাতিয়াইন এলাকার মাদক সম্রাটসহ অপকর্মে জড়িত ব্যক্তিদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা মাসোহারা আদায় করে আসছে সোর্স কুদরতসহ তার সিন্ডিকেট।
২০১৯ ইং ১৫ মে রাত সাড়ে ১১ টার দিকে মাধবপুর থানার বাঘাসুরা এলাকার জেএস ট্রান্সপোর্ট (হযরত শাহজালাল রহঃ হোটেল এর পাশ থেকে রিয়াজনগর গ্রামের পাভেল মিয়ার পকেটে ইয়াবা ট্যাবলেট ঢুকিয়ে দিয়ে এক লাখ টাকা আদায় করে ডিবির একটি টিম ঘটনাস্থলেই ছেড়ে দেয়। বিষয়টি স্থানীয় মেম্বারসহ অনেকেই অবগত হন। এই ঘটনায়ও সোর্স কুদরতের হাত রয়েছে বলে বিভিন্ন মহলের নাগরিকদের কাছ থেকে প্রকাশ পায়।
মাসোয়ারা নিজে গ্রহন ও প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের কে তুলে দেওয়ার বিনিময়ে বিভিন্ন কৌশলে তাঁর মনোনীত লোকজন দ্বারা লাগামহীণ দূর্নীতি করে যাচ্ছে।
মাধবপুরের তেলিয়াপাড়া চা-বাগন ভারত সীমান্তবর্তী হওয়ায় ওই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনে মাদক দ্রব্য দেশে প্রবেশ করে। যার সিংহভাগ অর্থ আদায় করছে প্রশাসনের নাম ভাংঙ্গিয়ে সোর্স কুদরত।
অভিযোগ রয়েছে গত ২০১৯ সালে রোজার ঈদের ৫ দিন পূর্বে মাধবপুর থানার শাহজিবাজার থেকে ২ চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীকে ২১ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ একটি সিএনজি গাড়ী আটক করে ডিবি পুলিশের একদল টিম। পরবর্তীতে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মাত্র ১৩শ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট দিয়ে তাদের চালান দেওয়া হয়। এর কিছুদিন পূর্বে হবিগঞ্জ সদর থানার টঙ্গীরঘাটের আফছর উদ্দিন এর সহযোগীতায় টেকনাফের “আলী”কে ৮ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ আটক করে একদল ডিবি পুলিশ, শহরের মাহমুদাবাদের ভাড়া বাসায় আটক রেখে নির্যাতন চালানো হয়। দৈহিক নির্যাতনের ৯ দিনের মাথায় তাঁর কাছ থেকে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা আদায় করে খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে ছেড়ে দেয় হয় সেই অপকর্মেও হাত ছিল সোর্স কুদরতের ।
অপর একটি সুত্র জানায়, বিভিন্নভাবে আটককৃত মাদক দ্রব্য বিক্রয়ের জন্যও রয়েছে সোর্স কুদরতের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। মাদক বিক্রির জন্য বাবুল, জয়নাল,ইদ্রীস,নোমান, বাহুবলে উপজেলার আশপাশ এলাকায় মাদক বিক্রির জন্য জয়নুল, নাসিরনগরের ধরমন্ডলে শাহ আলম, চুনারুঘাটের বিভিন্ন এলাকায় মাদক বিক্রির জন্য শহীদ, জামাল, ফজল, মাধবপুর উপজেলায় আকবর, জয়নালসহ প্রায় প্রতিটি উপজেলায় রয়েছে তার নিজেস্ব কিছু মাদক বিক্রেতা। আর এই বিশাল চক্রের দ্বারা এলাকার মানুষকে সব সময়ই আতংকিত করে রাখে সোর্স কুদরত।
সোর্স কুদরতের ভয়ংকর সকল অপকর্ম ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করা হবে। জানতে চোখ রাখুন ( আগামী পর্ব গুলোতে