বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, যারা জাতির পিতার হত্যাকারীদের রক্ষা করেছিল ও সরকারি চাকরি দিয়েছিল তারা এখনও বাংলাদেশের রাজনীতিতে রয়েছে। এখনও তারা ধ্বংস হয়নি। এখন তারা সাম্প্রদায়িক রাজনীতির মোহে রয়েছে। তারা বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান চায়। এখন শুধু তারা বঙ্গবন্ধুকন্যার বিরোধিতা করে না তারা তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায়। তারা যে কোন উপায়ে যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় আসতে চায়। এর জন্য তারা দেশে ও আন্তর্জাতিক ভাবে নানা ষড়যন্ত্র করছে। তারা মিথ্যাচার ও গুজব রটিয়ে দেশ অস্থিতিশীল করতে চায়। এরাই দেশে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করেছিল। তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, শুধু গণতন্ত্রের লেবাস ধরে থাকে।
তিনি বলেন, আজ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নে বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে। আজ বিশ্বে বাংলাদেশ মর্যাদার আসন রয়েছে। এই বিএনপি-জামাত আমাদের এই মর্যাদার আসন থেকে ছিটকে ফেলে দিতে চায়। তারা মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কোন কর্মসূচি দিতে পারে না। তারা উন্নয়ন ও গঠনমূলক সৃজনশীল কোন কর্মকান্ড করতে পারে না। তারা উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে উস্কে দিয়ে দেশের সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটাতে চায়। তারা জঙ্গিদের সাথে হাত মিলিয়ে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। এই বিএনপি-জামাত ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর হাজার হাজার গণতান্ত্রিক ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকদের হত্যা করেছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর আঘাত এনেছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ আগষ্ট) সকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ৪৭ তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।
বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট সেনাবাহিনীর কিছু উচ্চাভিলাসী অফিসার জাতির পিতা ও তার পরিবারের সদস্যদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করে। সেসময় কিছু সংখ্যক সেনা অফিসার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ছিল না তারাই এ গঠনা ঘটায় এবং তাদের সাথে দেশে ও আন্তর্জাতিক শক্তি মিলে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এখানে মূল সেনাবাহিনী সংযুক্ত ছিল না। এরা মহান স্বাধীনতাকে মেনে নেয়নি। জাতির পিতার নেতৃত্বে যখন মুক্তিযুদ্ধ চলেছে তখন এই অপশক্তি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যুদ্ধের নামে পাকিস্তানীদের সহায়তা করেছিল। ১৫ ই আগস্ট সকল অপশক্তি এক হয়ে জাতির পিতাকে হত্যা করে। তারা আমাদের বাঙালি জাতির সংস্কৃতি, সত্তা, ভাষা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করতে চেয়েছে। তারা চায়নি বাংলাদেশে কোন মুক্তিযুদ্ধের শক্তি থাকুক।
তিনি বলেন, জাতির পিতার হত্যাকান্ডে যারা অংশগ্রহণ করেছে তাদের বিচার হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে এই বিচারের পথ তৈরি করেছেন। তিনি কুখ্যাত খুনি জিয়াউর রহমানের ইনডেমনিটি আইন বাতিল করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবিধান থেকে কালো অধ্যায় বিলুপ্ত করে জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার করেছেন। ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধুকন্যা তাদের যে বিচারকার্য শুরু করেন তার মধ্য দিয়ে খুনিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে এবং আমরা বায় পেয়েছি। তবে একটি দল এখনও সে খুনিদের ভাষায় কথা বলে।
তিনি আরও বলেন, আমরা এখন চাই উন্নয়নের পথে হাঁটতে, এগিয়ে যেতে। এই পথযাত্রায় যেখানেই বাধা আসবে আমরা সেখানেই প্রতিবাদ করব। বিএনপি-জামাত যখনই সুযোগ পাবে এই বাংলাদেশকে আফগানিস্তানের মতো বানাবে অথবা পাকিস্তান শাসনের মতো দুঃশাসনে পরিণত করবে। এরা সুযোগ পেলেই দেশকে জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্যে পরিণত করবে। তখন দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিপন্ন হবে ও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিপন্ন হবে। আমরা জাতির পিতার সৃষ্ট বাংলাদেশে এমন কোন কিছু হতে দিতে পারিনা। তাই এদের এমন কোন কর্মকান্ড দেখলে আমরা তা শক্ত হাতে প্রতিরোধ করব।
কৃষিবিদদের উদ্দেশ্য করে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, জাতির পিতা কৃষিবিদদের মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন।কৃষি শিক্ষা কে উন্নত করার জন্য, কৃষিবিজ্ঞানীদের মর্যাদা সমুন্নত করার জন্য কাজ করেছেন। কৃষিবিদদের মর্যাদার আসনে বসানোর মূল লক্ষ্য ছিলো যাতে কৃষি শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়ন হয়। তিনি চাইতেন কৃষি সম্প্রসারণ এর সাথে এদেশের মেধাবীরা সম্পৃক্ত হোক। এটাই ছিল তার ভিশন। এই ভিশনে কোন সংকীর্ণতা ছিলনা। কে কোন বিভাগ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এমন কোন চিন্তা আমাদের মহান নেতা করেননি। তিনি গোটা বাংলাদেশে এক নতুন মাইফলক সৃষ্টি করেছেন। আজকে তার সেই পথ অনুসরণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা কাজ করছেন। ২টি থেকে বর্তমানে ৮ টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করেছেন।জাতির পিতার পথেই তিনি হাঁটছেন। এর জন্য শেখ হাসিনার সরকারকে বলা হয় কৃষি বান্ধব সরকার।
তিনি বলেন, বর্তমানে যারা কৃষিবিদদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চায় তাদের ব্যাপারে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। কারণ এখানে মেধা ও পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে আমরা আমাদের মর্যাদা পাই। এখানে কে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই, কে কোন বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাইয়ের সভাপতি এটা মুখ্য বিষয় না। মূখ্য বিষয় হলো জাতির পিতা চেয়েছেন এদেশে কৃষিবিজ্ঞানীরা দেশের জন্য অবদান রাখুক। দেশের জন্য মেধাকে আত্মনিয়োগ করুক। সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করুক। যে নিজের স্বার্থে আমাদের মধ্যে বিবেধ সৃষ্টি করবেন তাকে বলবো বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও শেখ হাসিনার লক্ষ্য এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি শ্রদ্ধা পোষন করে মর্যাদার জায়গায় যার যতটুকু প্রাপ্য বা অধিকার সেটা নিয়ে থাকুন। কেউ যদি অনিয়ম করে তাহলে আমরা বসে থাকবো না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কৃষিবিদরা এটা কখনো মেনে নেবে না।
শেকৃবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি
কৃষিবিদ প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এমপি, কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশনের সভাপতি, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কৃষিবিদ প্রফেসর ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া, শেকৃবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব কৃষিবিদ মেজবাহ উদ্দিন, বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক
কৃষিবিদ ড. মোঃ সাঈদুর রহমান সেলিম প্রমুখ।