মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪০ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ
জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে বাংলাদেশ সোসাইটির নবনির্বাচিত কর্মকর্তাদের লালগালিচা সংবর্ধনা সিরাজুল আলম খান সেন্টার এর উদ্বোধন: সিরাজুল আলম খানের দর্শন:অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রগঠনে দিশারি আ স ম রব পানি বিশুদ্ধকরণ নামে, ও অবিশুদ্ধকরণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধ পানির ব্যবসা চলছে সড়ক দুর্ঘটনার কবলে হাসনাত-সারজিস সমস্ত সভ্যতার জন্য ন্যায়বিচার, সমতা ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার আহ্বান পররাষ্ট্র উপদেষ্টার হাইকোর্টের নজরে ইসকন-চট্টগ্রামের ঘটনা : আদালতকে পদক্ষেপ জানাবে সরকার আমিরিকা দূতাবাসে পৌঁছেছেন খালেদা জিয়া বিনাসুদে ঋণ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সারা দেশ থেকে লোকজন আনেমোস্তফা আমীন বিএনপির নিবেদিত প্রাণ এখন মৃত্যু শয্যায়, খোঁজ নেয়নি কোন নেতা! বদলগাছীতে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যু,আহত-২

বাংলাদেশের প্রথম রেল স্টেশনের ইতিকথা 

মোঃ হাবিবুর রহমান , কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধিঃ নিউজ দৈনিক ঢাকার কন্ঠ

কুষ্টিয়া, বয়সের ভারে ন্যুব্জ লাল রঙের দ্বিতল এ স্থাপনাটি আজ কালের সাক্ষি। আকারে ছোট হলেও এর রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। অনেককিছুর স্মৃতি বহন করছে এ ভবনটি। অনেককিছুই দেখেছে সে। দেখেছে উপনিবেশ দখলদার বৃটিশ সরকারের শাসনকাল। যারা ২১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারতীয় উপমহাদেশকে শাসন-শোষন করেছে। বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থাও দেখছে। পাকিস্তানের দুঃশাসনও দেখেছে। দেখেছে সেকালের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও জীবনযাত্রা। একালেরও দেখছে। এর সবকিছুর সাক্ষি হয়ে আজ দঁড়িয়ে আছে ভগ্নপ্রায় এ স্থাপনাটি। দেশে বর্তমানে অনেক উন্নয়ন কাজ হচ্ছে। কিন্ত এ ভবনটির কোন উন্নয়ন নেই। দিন দিন ক্ষয়ে যাচ্ছে এর অবকাঠামো।
আবার দেশে যেসব উন্নয়ন কাজ হয় তার অধিকাংশই টেকসই হয় না। স্থায়ী হয় না। ভেঙ্গে আবার গড়তে হয়। ভাঙ্গাগড়ার কাজ যেন চলতেই থাকে। কিন্তু এ ভবনটি আজও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থেকে সেকালের মজবুত ও টেকসই উন্নয়নের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। যে স্থাপনাটির কথা বলছি, সেটি হলো বাংলাদেশের প্রথম রেল স্টেশন কুষ্টিয়ার ‘জগতি স্টেশন’। বৃটিশরা সরকারী স্থাপনাগুলোতে লাল রঙ ব্যবহার করতো। আশ্চর্যের বিষয় হলো বৃটিশরা চলে গেছে বহু আগেই। পাকিস্থানীরাও চলে গেছে। বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের সময়ও এর রঙের কোন পরিবর্তন হয়নি। বৃটিশ আমলে তৈরি এমন অনেক ভবন বাংলাদেশ-ভারতে দেখা যাবে যেগুলোতে আজও লাল রঙ বিদ্যমান। এগুলো নজরে আসলেই উপনিবেশ বৃটিশ শাসনের কথা মনে করিয়ে দেয়। ১৬০ বছরেরও আগে লাল রঙের দ্বিতল কুষ্টিয়ার এ ‘জগতি রেল স্টেশন’টি নির্মাণ করা হয়। তাই এর তথ্য পেতে গুগলের ওপর নির্ভর করা ছাড়া কোন উপায় নেই।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, ব্রিটিশ সরকারের উদ্যোগে উপনিবেশিক বাংলায় রেলওয়ে যোগাযোগের ক্ষেত্রে উন্নতি, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও পণ্য পরিবহনের কাজে এ অঞ্চলের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে জগতি স্টেশনটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের রানাঘাট থেকে কুষ্টিয়ার দর্শনা ও পোড়াদহ হয়ে জগতি পর্যন্ত ব্রডগেজ এই রেলপথের উদ্বোধন করা হয় ১৮৬২ সালের ১৫ নবেম্বর। প্রতিষ্ঠার পর এই অঞ্চলের মানুষের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে ‘জগতি স্টেশন’। তখন জ্বালানি ‘কয়লা’ পুড়িয়ে কালো-সাদা ধোয়া ছড়িয়ে ঝিক ঝিক শব্দে স্টিম ইঞ্জিনের (বাষ্পচালিত) রেলগাড়ি এসে থামতো স্টেশনে। রেলগাড়ি দেখতে আশপাশের কৌতূহলি মানুষজনের ভিড় জমতো। পণ্য পরিবহনসহ যাত্রীদের পদচারণায় মুখরিত ছিল রেলস্টেশনটি। কিন্তু কালের বিবর্তনে ও সংস্কারের অভাবে দেশের পুরনো এ স্টেশনটি আজ তার জৌলুস হারিয়ে ফেলেছে। স্টেশনটি বর্তমানে পরিত্যক্ত। স্টেশনের কয়েক শ’ বিঘা রেলের জমিও অবৈধ দখলে চলে গেছে।
রাজনৈতিক, ভৌগোলিক ও কৌশলগত সুবিধাসহ বাণিজ্যিক স্বার্থ বিবেচনায় তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার উপনিবেশিক বাংলায় রেলওয়ে স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এই পর্যায়ে ১৮৫৩ সালের ১৬ এপ্রিল গেট ইন্ডিয়ার পেনিনসুলার রেলওয়ে নামক কোম্পানির নির্মিত মুম্বাই থেকে থানে পর্যন্ত ৩৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রেল পথের উদ্বোধন করা হয়। এটিই ছিল ব্রিটিশ ভারতে রেলওয়ের প্রথম যাত্রা। অপদিকে ১৮৫৪ সালে পশ্চিম বঙ্গের হাওড়া থেকে হুগলি পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার রেলপথ উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে বাংলায় প্রথম রেলপথ চালু করা হয়।
বর্তমান বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে রেললাইন স্থাপনের বিষয়টিও ব্রিটিশ সরকার গুরুত্বসহকারে বিবেচনার পর ১৮৬২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃক কলকাতার শিয়ালদহ থেকে রানাঘাট পর্যন্ত রেলপথ উদ্বোধন করা হয়। এই লাইনকেই পরে বর্ধিত করে ১৮৬২ সালের ১৫ নবেম্বর কুষ্টিয়া জেলার (সাবেক নদীয়া) দর্শনা থেকে পোড়াদহ হয়ে জগতি পর্যন্ত ৫৩.১১ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রডগেজ লাইন নির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভূ-খন্ডে প্রথম রেল যোগযোগ স্থাপিত হয়। পরে ঢাকার সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর করতে ১৮৭১ সালের ১ জানুয়ারি জগতি স্টেশন থেকে বর্তমান রাজবাড়ী জেলার পদ্মা তীরবর্তী গোয়ালন্দঘাট পর্যন্ত রেললাইন চালু করা হয়। এ সময় মানুষ কলকাতা থেকে ট্রেনে চেপে জগতি স্টেশন হয়ে গোয়ালন্দঘাটে নামতেন এবং স্টিমারে পদ্মানদী পার হয়ে চলে যেতেন ঢাকায়। ব্রিটিশ সরকার জগতি রেলস্টেশন প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে আরও কিছু অবকাঠামো গড়ে তোলা হয় এখানে। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেগুলো আজ শুধুই স্মৃতি হয়ে রয়েছে। সংস্কারবিহীন স্টেশনের দ্বিতল ভবনের ছাদে জন্মেছে আগাছা। রেলের স্টিম ইঞ্জিনে পানি খাওয়ানোর জন্য প্লাটফর্মের দুই পাশে নির্মিত বিশাল আয়তনের ওভারহেড পানির ট্যাংক দুটি ইতোমধ্যে পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। ট্যাংক দুটিতে সে সময় কয়লার ইঞ্জিনচালিত পাম্প দিয়ে ভূগর্ভ থেকে পানি উত্তোলন করা হতো।
স্বাধীনতার পূর্বে কুষ্টিয়ায় চিনিকল প্রতিষ্ঠার পর এখানে আখ সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এই স্টেশনের। তখন আশপাশের জেলার জন্য ট্রেনে আনা খাদ্যশস্যসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী খালাস ও যাত্রী উঠা-নামা করতো স্টেশনে। অথচ জগতি স্টেশনটি আজ কোলাহল মুক্ত নীরব নিথর। এখানে শুধুমাত্র স্টপেজ রয়েছে সরকারের লিজ দেয়া পোড়াদহ ও রাজবাড়ির গোয়ালন্দঘাটের মধ্যে চলাচলকারী বুড়ো সাটল ট্রেনের। অল্পসংখ্যক যাত্রী উঠা-নামা করে এখানে। কুষ্টিয়াবাসীর দাবি কালের সাক্ষী হয়ে টিকে থাকা ঐতিহ্যের ধারক দেশের প্রথম এ রেল স্টেশনটির আধুনিকায়ন এবং এর হারানো সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা হোক।

Please Share This Post in Your Social Media

দৈনিক ঢাকার কন্ঠ
© All rights reserved © 2012 ThemesBazar.Com
Design & Developed BY Hostitbd.Com