হবিগঞ্জ জেলা মাধবপুর উপজেলার ১০নং ছাতিয়াইন ইউপি’র এক্তিয়ারপুর গ্রামের দুবাই প্রবাসী শামসুল হক এর ছেলে ( বৃন্দাবন সরকারি কলেজের এইচ এস সি ১ম বর্ষের ছাত্র) আতিকুল ইসলাম মিশু ছুরিকাহত হয়ে নিহত হয়েছে। মিশু’র বাড়ি ফেরা হল’না আর পরিশেষে মায়ের কুলে পৌঁছাল মিশু’র লাশ। অপরদিকে মিশু’র বন্ধু তারেক উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
৪ নভেম্বর (শুক্রবার) রাত অনুমান ১.৩০ ঘটিকার সময় ছাতিয়াইন বাজার ব্রীজ ( পুলিশ ফাঁড়ি রোড) সংলগ্ন স্হানে ঘটনাটি ঘটেছে বলে অনুসন্ধানে স্হানীয় অনেক ব্যক্তি ও পুলিশ ফাঁড়ির সূত্রে জানা গেছে। ঐ দিন ছাতিয়াইন বিশ্বনাথ স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে সারা রাতব্যাপী সুন্নি কনফারেন্স ওয়াজ মাহফিল চলছিল।
নিহতের চাচা সহিদ প্রধান রুবেল মিয়া বিভিন্ন গণমাধ্যম’কে বলেন, বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) দিবাগত রাতে নিহত আতিকুল ইসলাম মিশু ও তার বন্ধু তারেক ছাতিয়াইন হাইস্কুল ও কলেজ মাঠে সুন্নি কনফারেন্স ওয়াজ মাহফিলে ওয়াজ শুনতে যায়। রাত দেড়টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে কলেজের সামনের রাস্তায় প্রেম সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জের ধরে হরিতলা গ্রামের শফিক মিয়ার ছেলে শিমুলের নেতৃত্বে ৪/৫ জন যুবক মিশু ও তারেকের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের এলোপাথাড়ি ছুরিকাঘাতে আতিকুল ইসলাম মিশু গুরুতর আহত হয় ।
তার স্বজনরা মিশুকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এবং আমাদের গ্রামের মিশু’র মাহফিলে যাওয়া সহচর ( দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে) তারেক নামে অপর এক যুবক গুরুতর হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্বজনরা সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেছেন। তারেক সেলিম মিয়ার ছেলে।
এবিয়ে ছাতিয়াইন পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক বেলায়েত হোসেনের সাথে মোবাইল ফোন যোগাযোগ করার জন্য দীর্ঘ দুই ঘন্টা যাবৎ চেষ্টা করেও ( সরকারি মোবাইল নাম্বার টি’তে) সংযোগ পাওয়া সম্ভব হয়নি। পরে মাধবপুর থানার ডিউটি অফিসারের মোবাইল নাম্বারের কল করে এস আই বেলায়েত হোসেনের ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বার টি সংগ্রহ করে যোগাযোগ করার পর, তিনি প্রথমেই সরকারি মোবাইল নাম্বার টি বন্ধ থাকার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং এই মোবাইলটি অধিকাংশ সময়েই মোবাইল জটিলতার কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্নতায় থাকেন বলে প্রকাশ করেন। পরে ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, মাহফিলের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার বজায় রাখার জন্য আমিসহ আমার সকল পুলিশ পুলিশ সদস্যরা মাহফিলে দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত ছিলাম। ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারলাম মাহফিলের স্বেচ্ছাসেবকদের সহযোগিতায় আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কারা ছিল স্বেচ্ছাসেবক তাদের কাছ থেকে ঘটনার বিষয় নিয়ে কি জানতে পারলেন এই মর্মে এস আই বেলায়েত হোসেনের কাছে জানতে চাইলে প্রতি-উত্তরে তিনি বলেন, কারা ছিল সেই স্বেচ্ছাসেবক তাও আমি জানি না। এমনকি ঘটনাস্থলে কারো কাছ থেকে কোন কিছু জানতে পারিনি।
নিহত ও আহতের এলাকাবাসীদের সাথে যোগাযোগ করলে অনেকেই বলেন, ছাতিয়াইন ইউনিয়নের এক্তিয়ারপুর গ্রামের সেলিম মিয়ার ছেলে তারেক(১৭) এর সাথে একই গ্রামের এক কিশোরীর ( নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। অপর দিকে বাঘাসুরা ইউনিয়নের হরিতলা গ্রামের শফিক মিয়ার ছেলে শিমুল মিয়া(২২) ওই কিশোরীর সাথে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে তারেক এর প্রতি ক্ষিপ্ত হয়। বৃহস্পতিবার রাতে তারেক ও তার বন্ধু নিহত মিশু ছাতিয়াইন বিশ্বনাথ হাইস্কুল ও কলেজ মাঠে ওয়াজ শুনতে যায়। পরে মাহফিল থেকে বাড়ি ফেরার পথে, ঘটনার দিন ৪ নভেম্বর (শুক্রবার) রাত অনুমান ১.৩০ ঘটিকার সময় ছাতিয়াইন বিশ্বনাথ স্কুল এন্ড কলেজ মাঠের সামনে বাজারের রাস্তায় পূর্বপরিকল্পিতভাবে শিমুল তার দলবল নিয়া আতিকুল ও তারেক এর উপর হামলা করে পালিয়ে যায়। আতিকুলের পেটে ছুরিকাঘাত করা হয়। তারেক এর কোমরে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে রাত ৩.৩০ ঘটিকার সময় হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে, আতিকুল চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৪.৩০ ঘটিকার সময় মৃত্যুবরণ করে। অপরদিকে তারেক এর উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এবং এই বিষয়ে হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলী সরজমিন পরিদর্শন করেন বলে গনমূলে প্রকাশ করেন।
এই বিষয়ে হবিগঞ্জ জেলার পর পর ৭ম বারের শ্রেষ্ঠ অফিসার ইনচার্জ নির্বাচিত মাধবপুর থানার ওসি মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক জানান, লাশের সুরতহাল সনাক্ত করে, পোস্টমর্টেমের জন্য হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর পর থেকে এই ঘটনায় জড়িতদের ধরতে পুলিশ অনুসন্ধান চালাচ্ছে। এবং মামলা দায়েরের পর আইন ব্যবস্হা গ্রহণ করা হবে।
অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটির বিষয়ে ঘটনাস্থলের এলাকার বেশ কিছু লোকজনের সাথে যোগাযোগ করলে তারা সকলই একই কথা বলেন, আমরা এই বিষয়ে কিছুই জানিনা। আমরা সকালে ঘুম থেকে উঠার পর লোক মুখে জানতে পারলাম।
এছাড়া উক্ত সুন্নী কনফারেন্সের যার সভাপতিত্বে ও সার্বিক তত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হয়েছে তিনি হলেন,
বাংলাদেশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও খান্দুরা দরবার শরীফের পীরজাদা সৈয়দ জুবায়ের কামাল সাহেব। তিনিও ঘটনার বিষয় ঐ সময় কিছুই জানেনা। পরের দিন সকালে তিনি লোকের মুখে বলাবলি করতে শুনেছেন এবং এই বিষয় সুনির্দিষ্ট কিছুই বলতে পারিনি। তবে তিনি এই ঘটনাটি তীব্র নিন্দা জানিয়ে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।
ঘটনার বিষয়টি নিয়ে সচেতন মহলের ব্যক্তিরা কিভাবে ঘটলো এমন ঘটনা এই প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাচ্ছে না। অনুষ্ঠিত সুন্নী কনফারেন্সে প্রায় লক্ষাধি লোকের উপস্থিতিতে কিভাবে ঘটনাটি ঘটে গেল তাও আবার ডিউটিরত পুলিশসহ বিশিষ্টজনরা বুজতেই পারেনি।
উক্ত সুন্নী কনফারেন্সে বিশিষ্টজনসহ আলোচক ও আলোচিত ব্যক্তিরা হলেন, আল্লামা মুফতি গিয়াস উদ্দিন আত-তাহেরী, আল্লামা ড. সাইফুল আযম বাবর আল-আজহারী, মুফতি ফরমান আলী
রেজভী, আল্লামা মুফতি আলাউদ্দিন জিহাদী, মুফতি গোলাম রাব্বানী কাসেমী, মাওলানা রুকনুজ্জামান নোমানী, মাওলানা মুফতি শাহরাজ
উদ্দিন জিহাদী, মাওলানা আজিজুল ইসলাম খান, মাওলানা শফিকুল রহমান খানসহ আরো ওলামায়ে কেরামগণ মাহফিলে বয়ান করেন।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে সুন্নী কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন, ছাতিয়াইন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিনহাজ উদ্দিন চৌধুরী কাসেদ, ছাতিয়াইন স্কুল এন্ড কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. সমসু মিয়া, খান্দুরা দরবার
শরীফের পীরজাদা সৈয়দ ওমরুল কামাল, পীরজাদা আলহাজ্ব সৈয়দ শরিফুর রহমান, পীরজাদা সৈয়দ নাজমুল আবদালসহ এমন অসংখ্য সুনাম ধন্যবাদ ব্যক্তিবর্গরা।
কিন্তুক এই ঘটনাটি ঘটার পর জনমনে এক আতংক ছড়িয়ে পড়ছে। সেই সাথে মানুষ ভেবে পাচ্ছেনা কিভাবে আগামী দিন গুলো কাটাবেন। প্রশাসনের উপস্থিতি ও লক্ষাধিক জনসমাগমের মধ্যেও যদি আমাদের সমাজের অপরাধ কর্মকান্ড সংঘটিত হয়েই চলে, তাহলে সাধারণ জনগন কিভাবে জীবন যাপন কাটাবে আগামী দিন গুলোর ?
আর কত শিক্ষার্থীর রক্ত ঝড়লে অপরাধীরা সমাজ থেকে বিদায় নেবে? আর কত মায়ের সন্তান হারানোর পর অপরাধীরা শান্ত হবে? আর কত বাবা সন্তান হারা হলে অপরাধীদের অস্ত্র জমা করে এই আদি যুগের প্রথা বিলুপ্ত হবে? এমন অপ্রতিকার্য থেকে বর্তমান ডিজিটাল সমাজের সচেতন মহলের নাগরিকরা তথা মাধবপুর উপজেলাবাসী মুক্তি পেতে চায়।