ক্রাইম প্রতিবেদক:
সিলেটে প্রশাসনের সকল সংস্থার চোখ ফাঁকি দিতে "ছদ্মবেশ' হিসেবে মহৎ পেশা সাংবাদিকতাকে পুজিঁ করে নিয়েছে এক সময়ের সিলেটের ত্রাস ও আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সর্দার এমনকি একাধিক চুরি ও ছিনতাই মামলার আসামি মোহাম্মদ হানিফ। সে সাংবাদিক পরিচয়ে সিলেটে কায়েম করছে ত্রাসের রাজত্ব। কথিত অনলাইন পোর্টাল "সুরমা মেইল ডটকম" এর সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি পরিচয়ে মোহাম্মদ হানিফ এখন সাংবাদিক জগতে সৃষ্টি করেছে এক নতুন অধ্যায়। মোহাম্মদ হানিফ সাংবাদিক পরিচয়ে কৌশলে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে তার রমরমা মাদক বাণিজ্যে যা বিশ্বস্ত সুত্র নিশ্চিত করেছে। মোহাম্মদ হানিফের অপর্কমের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলেই তাকে পোহাতে হয় হামলা ও মিথ্যা মামলা। মোহাম্মদ হানিফ কথিত সাংবাদিক পরিচয়ে সিলেটে মাদক বাণিজ্যের পাশাপাশি ভূমি জবর দখলের ঠিকাদার হিসেবে তার ব্যাপক নাম ডাকও রয়েছে। একজন শীর্ষ ডাকাত রাতারাতি খোলস বদলে সাংবাদিকতার লেপাস লাগিয়ে তার বিভ্রান্তিকর এমন কর্মকান্ডে বিব্রত সিলেটের মূলধারার সাংবাদিক সমাজ।
জানা গেছে- মোহাম্মদ হানিফের পিতা আব্দুল আলিম বরিশাল হইতে জৈন্তাপুর উপজেলার শুক্রবাড়ি বাজারের ঠাকুরের মাটি এলাকায় গরু রাখাল হিসেবে আগমন হয়। পরে তিনি সুযোগ বুঝে সেখানে ঘর জামাই হিসেবে বিয়ে করেন হানিফের মাতাকে। মোহাম্মদ হানিফ শুক্রবাড়ি বাজারের স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে। পরে তার বাবা তাকে স্থানীয় বাজারের একটি চায়ের দোকানে ট্রি বয় হিসেবে কাজে লাগিয়ে দেন। মোহাম্মদ হানিফ তার চুরির স্বভাবের জন্য চায়ের দোকানে ঠিকতে পারেনি বেশি দিন। পরে সে রড মিস্ত্রীর লেবার হিসেবে স্থানীয় এলাকা সহ বটেশ্বর ক্যান্টরমেন্টে দীর্ঘদিন কাজ করে। সেখানেও বেশি দিন থাকতে পারে নি তার স্বভাবের জন্য। শুরু করে এলাকায় চুরি-ছিনতাই। কয়েকবার সে এলাকায় চুরি করতে গিয়ে গণধুলাইও খায়। একপর্যায়ে তার খারাপ কার্যকলাপে চিকনাগুল ইউনিয়নবাসী অতিষ্ঠ হয়ে শুক্রবাড়ি বাজারের ঠাকুরের মাটি এলাকা থেকে তাকে ও তার পরিবারকে তাড়িয়ে দিলে তারা এসে বসবাস শুরু করে শহরতলীর শাহ্পরাণ (রহঃ) থানাধীন বটেশ্বর চুয়াবহর এলাকায়। তবে তাকে এলাকায় শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই হাত কাটা হানিফ নামেই চিনেন।
অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে হানিফ ওরফে হাতকাটা হানিফের তলের বিড়াল। মোহাম্মদ হানিফ ১৯৯৩ সন হইতে ২০০০ সন পর্যন্ত একাধিক বিভিন্ন মামলার আসামি হলেও বর্তমান পুলিশের সিডিএমএস সফটওয়্যারে ২০০৬ সন থেকে সকল মামলার এফআইআর নাম্বার তালিকাভুক্ত হওয়াতে সিডিএমএস সফটওয়্যারে তার মামলাগুলোর এফআইআর নাম্বার তালিকাভুক্ত নয়।
তবে তার শেষ রক্ষা হয়নি প্রতিবেদকের হাত থেকে। হানিফ ওরফে হাতকাটা হানিফ ধারাঃ ৪৩০/৩৮০/৩২৩/২৩৪/৩৪ দঃবিঃ সংক্রান্তে জৈন্তাপুর থানার মামলা নং- ০৭, তাং- ২৬/০৫/৯৮ এর এজহার নামীয় প্রধান আসামি ছিলো। এর পর পরই হানিফ ওরফে হাতকাটা হানিফ বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের টাকা ডাকাতির ঘটনায় আলোচনায় আসে। উক্ত ডাকাতির ঘটনায় কোতোয়ালী থানার মামলা নং- ০৯ এবং যাহার জি/আর মামলা নং- ৯৫১/৯৮, তাং- ০৪/১০/৯৮ সনের ধারাঃ ৩৯৫/৩৯৭ দঃবিঃ এর এজহার নামীয় ২নং আসামি ছিলো। তখনকার সময়ে উক্ত ডাকাতি মামলার পরেই হানিফ ওরফে হাতকাটা হানিফ শহরতলীর শিবগঞ্জ লামাপাড়া রাস্তার মুখে এক মহিলার টাকা ছিনতাইকালে জনতার হাতে তার ডান হাতকাটা যায় বিধায় তার নামের পাশেই লাগে হাতকাটা হানিফ। তাৎক্ষাণীক চিকিৎসার জন্য তাকে সিলেটের এম,এ,জি ওসমানী হাসপাতালের ৯নং ওয়ার্ডে ভর্তি করলে উক্ত ডাকাতির মামলায় তাকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন যাহা উক্ত ডাকাতির মামলার নথিতে উল্লেখ্য আছে। উল্লেখ্য ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় হানিফ ওরফে হাতকাটা হানিফ দোষী প্রমাণিত হওয়াতে মামনীয় অতিরিক্ত দায়রা জজ ৪র্থ আদালত, সিলেট এর বিচারক মোঃ জালাল উদ্দিন আহমদ হানিফ ওরফে হাতকাটা হানিফসহ তার অপরাপর সহযোগীদের ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। হানিফ ওরফে হাতকাটা হানিফ ৫ বছর কারাভোগ করে শেষমেষ আপিলের মাধ্যমে সে জামিন লাভ করে।
জামিনে বের হয়েই হানিফ ওরফে হাতকাটা হানিফ সাংবাদিকতা পেশাকে পুজিঁ হিসেবে বেঁচে নিয়েছে। দৈনিক আমাদের কন্ঠ পত্রিকার সিলেটের ব্যুরো প্রধান ফয়সল আহমদকে কর্তৃপক্ষ প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র ও নিয়োগপত্র প্রদান করার পরও হানিফ ওরফে হাতকাটা হানিফ নিজেকে দৈনিক আমাদের কন্ঠ পত্রিকার ভূয়া সিলেটের ব্যুরো প্রধান ও কথিত অনলাইন পোর্টাল "সুরমা মেইল ডটকম" এর সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি পরিচয়ে সিলেটের সাংবাদিক জগতে বেপরোয়া তান্ডব চালাচ্ছে। এছাড়া নিজের শিকল মজবুত করার জন্য হানিফ ওরফে হাতকাটা হানিফ খুলে বসেছে "সিলেট বিভাগীয় রিপোর্টাস ক্লাব" নামে একটি সাংবাদিক সংগঠনের দোকানধারী। অবৈধ টাকার জোরে ওই কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতির পদ দখল করে নিয়েছে সে নিজে। নামে মাত্র কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক থাকলেও সবকিছু চলে হানিফ ওরফে হাতকাটা হানিফের কথামতো। এখন সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই কমিটিতে সদস্য হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে।
সদস্য হতে হলে সদস্য পরিচয়পত্র বাবদ স্বরণ ফিস ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকা করে হানিফ ওরফে হাতকাটা হানিফকে দিতে হয় বলে অনেক সদস্যদের অভিযোগ প্রকাশ। তাছাড়া ডাকাত হানিফ ওরফে হাতকাটা হানিফ ওই সাংবাদিক সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি পরিচয়ে সিলেটের পুলিশ কমিশনার সহ বিভিন্ন থানার পুলিশ অফিসারের সঙ্গে ফটো তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা করে সাধারণ মানুষের চোখে দোলা দিচ্ছে। শুধু সাধারণ মানুষ নয় সে কৌশলে প্রশাসনের চোখও ফাঁকি দিয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন সেক্টরে গড়ে তুলছে গভীর সখ্যতা। নিজেকে পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন অফিসারের খুব কাছের লোক পরিচয়ে চালিয়ে যাচ্ছে তার নানারুপ অপরাধমূলক কর্মকান্ড। তার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ সিলেটের সাংবাদিক সমাজ। ডাকাত হানিফ ওরফে হাতকাটা হানিফের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সিলেটের সাংবাদিক সমাজ ও সচেতন মহল।