সোহেল খান দূর্জয় নেত্রকোনা :
নেত্রকোনা ০১.২০২৩ ইং বোরো চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন নেত্রকোনার কৃষকরা। কয়েক দিনের শৈত্য প্রবাহ আর ঘন কুয়াশার সাথে উত্তরের হিমেল হাওয়ায় বোরো আবাদ রোপনে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। আর শীতের ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে জমি প্রস্তুতে পানি সেচ আর হাল চাষ চলছে।
দিন ভর ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা। আর এ সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃষি উপকরণ সারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। হঠাৎ করে সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় শঙ্খিত হয়ে পড়েছেন নেত্রকোনার কৃষকরা। নেত্রকোনার চাষিরা বলছেন শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকুলে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক মতো থাকলে সুষ্ঠ ভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। রোপনকৃত জমির মধ্যে উন্নত ফলনশীল উফশী জাতের ১ লাখ ৭০ হাজার ৬৭১ হেক্টর এবং হাইব্রীড জাতের ১৩ হাজার ৭৯৯ হেক্টর। উফশী জাতের মধ্যে উন্নত জাত হচ্ছে জিরাশাইল এবং ব্রি-২৮।
গত বছর বোরো মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১ লাখ ৮২ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমিতে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা কম হওয়ার কারণ হচ্ছে ভূগর্ভের পানির ব্যবহার কমিয়ে রবি শস্যের দিকে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ানো হচ্ছে। বরেন্দ্র এলাকা বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ, পূর্বধলা উপজেলা এবং মদন ও কেন্দুয়া উপজেলার কিছু এলাকায় ধানের পরিবর্তে গম, ডাল, ভুট্টা ও সরিষার আবাদে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে কৃষকদের। বোরো চাষে মাঠে মাঠে জমিতে পানি সেচ ও হাল চাষে ব্যস্ত চাষীরা। শীতের ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশাকে উপেক্ষা করে চলছে কৃষকদের ব্যস্ততা। অন্যদিকে তৈরী জমিতে চারা রোপন করা হচ্ছে।
বোরো আবাদে সময় শ্রমিক সংকট দেখা দেওয়ায় মজুরিও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিঘা প্রতি ৯০০ টাকা থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত চুক্তি দিচ্ছেন চাষীরা। আবার অনেকে ৬০০ টাকা দিনমজুরি দিয়েও শ্রমিক নিচ্ছেন। গত কয়েকদিনের শৈত প্রবাহের ফলে হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াাশায় বোরো বীজতলার কিছুটা সমস্যা হয়েছে। বরিশস্য জমিতে আবাদের জন্য বীজতলার বীজ হলুদ হয়ে শুকিয়ে মারা গেছে। এতে করে কৃষকদের কিছু সমস্যা সম্মুখীন হতে হবে। শীত আর কুয়াশায় বোরো আবাদে সমস্যা হতে পারে এজন্য অনেক কৃষক জমি প্রস্তুত করে রোপনের জন্য অপেক্ষা করছেন।
নেত্রকোনা সদর উপজেলার রায়দুম রুহী গ্রামের কৃষক মেহেদী হাসান মন্টু বলেন, প্রচন্ড শীতের কারণে শ্রমিকরা কাজ করতে পারছেনা। মজুরি বেশি দিয়েও চাহিদা মোতাবেক কাজের লোক পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতি বছর যে সময় জমিতে চারা রোপন করা হতো। শীতের কারণে এখন কয়েকদিন পিছিয়ে গেছে।
জেলার বারহাট্টা উপজেলার সাহতা গ্রামের কৃষক সেলিম মিয়া বলেন, এ বছর প্রায় ৮ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছেন। জমিতে চারা রোপন পর্যন্ত বিঘা প্রতি প্রায় আড়াই হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রচন্ড শীতের কারণে শ্রমিকরা কাজ করতে চাচ্ছেন না। দেরি করে আবার জমি রোপন করা শুরু করলে কাজের চাপে শ্রমিকও পাওয়া যাবে না। যার কারণে একটু আগেই মজুরি বেশি দিয়ে কাজ করে নিতে হচ্ছে। এখন বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং আবহাওয়া ভাল থাকলে ফসলও ভাল হবে। আর ভাল ভাবে ঘরে উঠাতে পারব।
মোহনগঞ্জ উপজেলার বিরামপুর গ্রামের কৃষক নাহিদ হোসেন বলেন, এখন বোরো আবাদের মৌসুম। সবাই জমি প্রস্তুতে ব্যস্ত। কিছুদিন আগেও সব সারের দাম স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু কৃষকরা যখন বোরো চাষাবাদের জন্য জমি প্রস্তুত করছে এ সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃষি উপকরণ সব ধরনের সারের দাম বস্তা প্রতি ১০০-১৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে। এজন্য আমার মতো অনেক কৃষকরাই জমি চাষাবাদে সমস্যায় পড়েছি। অথচ বাজারে পর্যাপ্ত সার আছে।
খালিয়াজুরী উপজেলার পাঁচহাট গ্রামের কৃষক রতন মিয়া বলেন, প্রতি বছর ৩০-৪০ বিঘা বোরো আবাদ করেন। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর প্রচন্ড ঠান্ডা এবং কুয়াশা। এ পর্যন্ত ৩২ বিঘা জমি প্রস্তুত করেছেন। চারা রোপনের জন্য আবহাওয়া কিছুটা ভাল হওয়ার অপেক্ষা করছেন। এ আবহাওয়ার মধ্যে জমিতে চারা রোপন করলে মারা যাওয়ার সম্ভবনা আছে।
নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ নূরুজ্জামান বলেন, শৈত প্রবাহ দীর্ঘায়িত হওয়ায় রোবো চাষ কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। অতিরিক্ত শীতের মধ্যে জমিতে চারা রোপন না করতে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এতে চারা মরার হারটা বেড়ে যায় এবং কিছু বীজতলার ক্ষতি হয়েছে। শীতের হাত থেকে বীজতলা রক্ষা করতে কৃষকদের পলিথিন ব্যবহার করতে পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। চারা জমিতে লাগানোর পূর্বে কিছুটা ইউরিয়া ও থিয়োভিট পাউডার স্প্রে করতে হবে। এতে চারা দ্রুত সতেজ হয়ে উঠবে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে চারা রোপন করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সার পর্যাপ্ত থাকার পর কিছু দোকানে কৃষকদের কাছ থেকে অনিয়ম করে দাম বেশি নেয়া হচ্ছে। কৃষি বিভাগ থেকে মনিটরিং করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।