শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩২ পূর্বাহ্ন
সোহেল খান দূর্জয় নেত্রকোনা :
নেত্রকোনা,০৩.০২.২০২৩ ইং মাঘ মাস এখনও শেষ হয়নি। চলছে শীতের ভরা মৌসুম। প্রকৃতিতে যখন মাঘের হাওয়ার শীতের কাঁপন চলছে তখন হাড় কাপানো শীত ভেদ করে পাতার ফাঁকে ফাঁকে দেখা মিলছে আমের স্বর্ণালী মুকুলের। ইতিমধ্যে নেত্রকোনা জেলার অনেক আম গাছে আগাম মুকুল আসতে শুরু করেছে। গাছে গাছে উঁকি দিচ্ছে আমের মুকুল। আর গাছে আগাম মুকুল আসায় এতে সকলেই খুশি। এদিকে আমের মুকুলে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে এর সুগন্ধও। মুকুলের সুমিষ্টি সুবাস আন্দোলিত করে তুলেছে মানুষের মনও। সেইসাথে আম মুকুলে যেন প্রকৃতিকে সাজিয়েছে যেন এক অপরুপে। হলুদ আর সবুজে যেন এক মহামিলনে পরিণত হয়ে আছে। মৌমাছির দল গুন গুন শব্দে মনের আনন্দে ভিড়তে শুরু করেছে আম্রমুকুলে। ইতিমধ্যে অনেকেই গাছের পরিচর্যা শুরু করে দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন নির্ধারিত সময়ের আগে আবহাওয়াগত ও জাতগত কারণেই মূলত আমের এই মুকুল আসতে শুরু করেছে। তবে চলতি মাসের শেষের দিকে প্রতিটি গাছেই পুরোপুরিভাবে আমের মুকুল ফুটতে শুরু করবে । তারা আরও জানায়, ভরা শীতে আমের মুকুল আসা তেমন ভালো নয়। কারণ আগেবাগে আসা মুকুল ঘণ কুয়াশায় ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। ফলে শঙ্কা থাকে আমের ফলন কমে যাওয়ার।
এদিকে যে সব গাছে আমের মুকুল আসতে শুরু করেছে অনেকেই এখন পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন । বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না ঘটলে ভালো ফলনের আশা করছেন স্থানীয় অনেক চাষি ও বাগান মালিকরা।
নেত্রকোনা পৌর শহরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায় সারি সারি আম গাছ। আম লাভ জনক হওয়ায় প্রতিটি বাড়িতে বাড়ছে আম গাছের সংখ্যা। বারহাট্টা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বেশীভাগ গাছেই আগাম আমের মুকুল শোভা পাচ্ছে। আমের মুকুলে এখন মৌমাছির গুঞ্জন শুরু হয়েছে। মুকুলের মিষ্টিঘ্রাণ যেন জাদুর মতো কাছে টানছে তাদের। গাছের প্রতিটি শাখা প্রশাখায় তাই চলছে ভ্রমরের সুর গুঞ্জন। শীতের স্নিগ্নতার মধ্যেই শোভা ছড়াচ্ছে স্বর্ণালী মুকুল। বিভিন্ন আম গাছের মালিকরা জানান আগাম মুকুল দেখার পর থেকে তাদের মনটা বেশ ভালো লাগছে। তারা আমের মুকুল ধরে রাখতে নানা প্রকার প্ররিচর্যায় এক ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন।
এ জেলায় বানিজ্যিক ভাবে প্রায় সব জাতের আম কমবেশী এখানে হচ্ছে। রোপন করা গাছের মধ্যে দেশীয় পাশাপাশি ল্যাংড়া, গোপালভোগসহ নানা প্রজাতির আম গাছ রয়েছে।
নেত্রকোনা সদরের স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের চাইতে এবছর আগাম গাছে আমের মুকুল আসতে শুরু করেছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে আমের ফলন ভালো হবে।
গত বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমের মুকুল ঝড়ে পড়ে যায়। ফলে আশানরুপ মুকুল থেকে আম আসেনা। সংকট দেখা দেয় এ জেলার আম সরবরাহে। তবে এ বছর প্রথম দিক থেকেই গাছে গাছে আম মুকুলের সমারহ দেখা যাচ্ছে।
বারহাট্টা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রাকিবুল হাসান বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগে আবহাওয়াগত ও জাতগত কারণেই মূলত আমের এই মুকুল আসতে শুরু করেছে। প্রতি বছরই কিছু আমগাছে আগাম মুকুল আসে। এবারও এসেছে। তবে গণ কুয়াশার কবল থেকে রক্ষা করতে পারলে আগাম ফলল হবে। আর আবহাওয়া বৈরী হলে ফলন নিয়ে শঙ্কা দেখার সম্ভাবনা থাকবে।
এই কর্মকর্তা আরো জানান, ছত্রাকজনিত রোগে আমের মুকুল, ফুল ও গুটি আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগ গাছের ক্ষতি করে। এজন্য তারা নিয়মিত লোকজনকে পরমর্শ দিয়ে আসছেন।
নেত্রকোনা সদর উপজেলার গোলাম ফারুক নামে এক ব্যক্তি বলেন, ১ সপ্তাহ পূর্বে তার বেশী ভাগ গাছে আগাম মুকুল এসেছে। মুকুলকে পোকা মাকড় থেকে রক্ষা করতে প্রাথমিক পর্যায়ে পরিচর্যা শুরু করেছেন। মুকুলের রোগবালায়ের আক্রমন থেকে রক্ষা করতে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরমর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ওষধ স্প্রে করছেন বলে জানান তিনি।
তবে গত বছরের চাইতে এবছর শীত ও কুয়াশার দাপট অনেকাংশে বেশী। এখন পযর্ন্ত যেহেতু বড় ধরণের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় ঝড়ে পড়েনি কোন মুকুলও। বর্তমানে আবহাওয়ার যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে ধারনা করা হচ্ছে আমের জন্য অনকুলই হবে।
দুর্গাপুর উপজেলার বিল্লাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমার বেশ কয়েকটি গাছে আগাম মুকুল আসতে শুরু করেছে। যেসব গাছে মুকুল এসেছে রোগবালাই আক্রমন থেকে রক্ষা পেতে প্রাথমিক পরিচর্যা শুরু করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমার প্রতিটি গাছে আগাম মুকুল বাতাসে মিশে সৃষ্টি করছে মৌ মৌ গন্ধ। সেই গন্ধ মানুষের মনকে বিমোহিত করছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ নুরুজ্জামান বলেন, এ জেলার বেশী ভাগ আম গাছেই আগাম মুকুল আসতে শুরু করেছে। যে সব গাছে আগাম মুকুল এসেছে মুলত আবহাওয়াগত কারণে এসেছে। বর্তমানে আবহাওয়া অনুকুলে রয়েছে। যা আমের বাম্পার ফলনের জন্য উপযোগী। এ অবস্থায় থাকলে এবার আমের বাম্পর ফলনের আশা প্রকাশ করছেন তিনি। তবে সবকিছুই প্রকৃতির উপর নির্ভর করছে বলে জানান তিনি।