সোহেল খান দূর্জয় নেত্রকোনা :
নেত্রকোনা , ১৪.০২.২০২৩ ইং ইংজেলার বারহাট্টা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সানজিদা চৌধুরী যোগদানের পর থেকেই সাধারন মানুষের কাছে প্রিয় মানবিক অফিসার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। সাধারন মানুষ জমি সংক্রান্ত যেকোন সমস্যা সহজেই তার কার্যালয়ে এসে সমাধান করছেন। যেকোনো অভিযোগ তিনি মনোযোগ সহকারে শুনছেন এবং তাতক্ষনিক ভাবে আন্তরিকতার সহিত দুই পক্ষকে নোটিশ করে অফিসে এনে সমাধানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। সানজিদা চৌধুরী বলেন, জমি সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান খুবই জটিল বিষয় সবাই চায় তার পক্ষে রায় নিতে, কিন্তু আমি চেষ্টা করি তদন্ত করে জমির দলিল,পরচা দেখে সঠিক সমাধান করতে।
ভূমি সংক্রান্ত কাগজপত্র অনলাইনে আপডেট, সপ্তাহে পাঁচদিন গণশুনানি সহ দ্রুততম সময়ের মধ্যে জমির নামজারি ও খারিজসহ নানামুখী সেবায় পাল্টে গেছে নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা উপজেলা ভূমি অফিস। ভূমি অফিসে সেবা নিতে নেই তৃতীয় পক্ষের দৌরাত্ম। কোনো হয়রানি ছাড়াই মিলছে জমির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। ভূমি অফিসের নানামুখী সেবা পেয়ে খুশি সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ। যারা এক সময় তৃতীয় পক্ষের সহায়তা ছাড়া জমির কোনো কাজই করতে পারতেন না, তারাই এখন নিজের সমস্যার কথা নিজেরাই ভূমি অফিসে এসে বলতে পারছেন। সেবাগত এই পরিবর্তনের সাথে একটি চূড়ান্ত পরিকল্পনা নিয়ে ভূমি অফিসের পরিবেশ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজও এগিয়ে চলছে। গত
(৮ ফেব্রুয়ারি), বুধবার উপজেলা ভূমি অফিসে গিয়ে কথা হয় নামজারি করতে আসা এক ব্যক্তির সাথে তিনি বলেন, ‘তিন,চার বছর আগে একবার খারিজ চ্যায়া চারদিন এহানে আসা লাগছে,হের পর এরে ওরে (দালাল) ধইরা অনেক ট্যাহা দিয়া কাজ করছি,এর পর আর এহানে আর আইনাই। কয়েকদিন আগে জমির খারিজ দিছি আর এবার তারিখ দিছিলো আইজক্যা। আইলাম আর পায়া গেলাম। বাড়তি ট্যাহাও দেওয়া লাগে নাই। জমির মিসকেসের শুনানির জন্যে আসা উপজেলার সাহতা ইউনিয়নের কয়েকজন জানান, আমরা জমির বিষয়ে সমস্যা জানিয়ে দরখাস্ত দিছিলাম। গতকাল এসিল্যান্ড স্যার (উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি) নিজে আমাদেরকে ফোন দিছে, আজকে আসতে বলছে, আমরা আসছি। রেজাল্ট যাই হোক স্যার আমাদেরকে ফোন দিয়ে কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলেছেন এতে আমরা অনেক খুশি। খুশির কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা উত্তরে বলেন, এর পূর্বে প্রায় ৪বছর আগে আমরা জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে এই ভূমি অফিসে এসেছিলাম তখন এতটা দায়িত্ববোধ ও গুরুত্বসহ কাজ করতে দেখিনি। আর এখন সাধারণ মানুষ বর্তমান এসিল্যান্ড স্যারের সাথে সরাসরি দেখা করে তার সমস্যার কথা বলতে পারেন এবং তার সুষ্ঠু সমাধানও পেয়ে যান। এমনকি এসিল্যান্ড স্যার সাধারণ মানুষের কথা শোনার জন্য সবসময় বসে থাকেন। যাতে করে তাকে কেউ খুঁজতে হয়রানি কিংবা সময় নষ্ট না হয়। সেই সাথে ভূমি অফিসকে করেছেন দালাল মুক্ত।
উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এই অফিসের বন্ধ হওয়া গণশুনানি বর্তমানে চালু আছে। সেইসাথে উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসেও লেগেছে এই পরিবর্তনের হাওয়া। ভোগান্তি ছাড়া স্বল্পসময়ের মধ্যে সেবা প্রার্থীরা কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছেন এখন। শুনানিকালে কোনো পক্ষের কাগজপত্রের ঘাটতি থাকলে আবেদন বাতিল না করে তাকে সময় দেওয়া হচ্ছে। কোনো কাগজের নকল পেতেও কোনো বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় না। নানামুখী এসব সেবার পাশাপাশি উপজেলা ভূমি অফিসের পরিবেশগত ও অবকাঠামোগত পরিবর্তনের কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ভূমির উপস্থাপিত নকশা ও কর্মপদ্ধতির প্রশংসা করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মাজহারুল ইসলাম।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহায়তা ও সার্বিক পরামর্শে সামনে থেকে এই পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বারহাট্টা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সানজিদা চৌধুরী। তিনি জানান, এখানে যোগদানের পর থেকেই ডিসি স্যার ও ইউএনও স্যারের সহযোগিতায় ভূমি সংক্রান্ত সকল ফাইল ও সেবা অনলাইনের আওতায় আনা হয়েছে। যিনি সেবাপ্রার্থী কেবলমাত্র তাকেই অফিসে আসতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এতে করে তৃতীয় পক্ষের ভোগান্তি থেকে তারা রক্ষা পাচ্ছে। সেবার বিষয়ে তিনি জানান, যে সেবা অফিস থেকে দেওয়া সম্ভব তাৎক্ষণিক তা দেওয়া হচ্ছে। যেটাতে সময় লাগবে সেক্ষেত্রে আবেদনকারীর মোবাইল নম্বরে এসএমএস অথবা ফোনে নির্ধারিত তারিখ বলে দেওয়া হচ্ছে। আর যে সেবা এখান থেকে দেওয়া সম্ভব নয় সেই সেবা প্রাপ্তির বিষয়ে সঠিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মাজহারুল ইসলাম জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন একজন অফিসার চাইলে উপজেলার অনেক উন্নতি ঘটাতে পারেন। বিষয়টি আমাদের নাড়া দিয়েছে। সৃজনশীল কাজ করার মানসিকতা যেমন আছে, তেমনি জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ স্যার ও বর্তমান সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরু এমপি স্যার এবং উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাইনুল হক কাসেম মহোদয় সহ উপজেলার সকল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন। এ কারণে ভূমি অফিসের সেবার মান পরিবেশ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।
উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, বর্তমান সহকারী কমিশনার (ভূমি) সানজিদা চৌধুরী এই উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, অবৈধভাবে আবাদি জমির মাটি ভেকু দিয়ে কাটা বন্ধে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অর্থ জরিমানা ও বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি সরকারি খাস জমি উদ্ধারকাজে ব্যাপক তৎপরতা চালান এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করেন।
উল্লেখ্য, তিনি ২০২১ সালে ২৫ জুলাই বারহাট্টা উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি হিসেবে যোগদান করেন। বারহাট্টা উপজেলায় যোগদান করার পর থেকে এখন পর্যন্ত মোবাইল কোর্টে মামলার সংখ্যা ৬৯ টি। মোট জরিমানা ২ লাখ ৩৭ হাজার ৫ শত টাকা। তিনি উপজেলার সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সহযোগিতা প্রার্থনা করেন।