শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৪ পূর্বাহ্ন
মো ইফাজ খাঁ , হবিগঞ্জ জেলা, মাধবপুর প্রতিনিধিঃ-
হবিগঞ্জ শহরে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে যানজট। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ততম সবকয়টি সড়কে যানজট লেগেই থাকছে। এর অন্যতম কারণ হয়ে দাড়িয়েছে ব্যাটারী চালিত টমটম। ফলে অফিস আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারী এমনকি শিক্ষার্থীরাও সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছতে পারছে না। অতিরিক্ত টমটম চলাচলের পাশাপাশি চালকদের সাথে ভাড়া নিয়ে বাকবিতন্ডাসহ হাতাহাতির ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া যত্রতত্র টমটম রাখা, চলতি সড়কে হঠাৎ ঘুরানোসহ নানা কারণে মোড়ে মোড়ে জটলার সৃষ্টি হচ্ছে। যা নিয়ন্ত্রন করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাফিক বিভাগকে।
সেই সাথে ঘটছে ছোট বড় সড়ক দুর্ঘটনাও। হবিগঞ্জ পৌরসভা সুত্রে জানা গেছে, হবিগঞ্জ পৌরসভায় অনুমোদন পাওয়া টমটমের সংখ্যা ১৩০০টি। তবে বাস্তব পরিসংখ্যান বলছে বৈধ এবং অবৈধ মিলিয়ে এর সংখ্যা ৫/৭ হাজারের ওপরে। যার দুই তৃতিয়াংশই চলাচল করছে শহরের প্রধান ও বেকরোডসহ বিভিন্ন সড়কে। যদিও বৈধ এবং অবৈধ টমটম চিহ্নিত করতে পৌরসভা অনুমোদিত টমটম গুলোতে হলুদ রঙ করে দিয়েছে। কিন্তু কাজে আসেনি নিয়মিত তদারকি না করার কারণে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, অনেক অবৈধ টমটম মালিকরা পৌরসভার ১টি নম্বর প্লেট সংগ্রহ করে জাল বানিয়ে দুই থেকে ৩টি ব্যবহার করছে।
এছাড়া নতুন বছরের শুরু থেকেই হবিগঞ্জ শহরের অধিকাংশ টমটম চালকরা নিজেদের ইচ্ছে মতো ভাড়া আদায় করছে। গত বছর প্রধান সড়ক ভাঙ্গা থাকা ও করোনার কারণে ৫ টাকার জায়গায় ১০-১৫ টাকা করে আদায় করা হয়েছিলো। ফলে যাত্রীদের সাথে একের পর এক বাকবিতন্ডাসহ মারামারির ঘটনা ঘটে। যা নিয়ে স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে আলোড়ন তৈরি হয়। বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয় পৌরসভার পক্ষ থেকে। মাইকিং করে শহরের শায়েস্তানগর বাজার থেকে চৌধুরী বাজার এবং চৌধুরী বাজার থেকে পৌর বাস টার্মিনাল পর্যন্ত সরাসরি একজন যাত্রীর জন্য ১০ টাকা, আর উঠানামা ৫ টাকা ঘোষণা দেয়া হয়। জানা যায়, মাইকিং অনুযায়ী শায়েস্তানগর বাজার অথবা সিএনজি স্টেশন থেকে মোদক ফার্মেসি পর্যন্ত এবং বেবিস্ট্যন্ড থেকে বৃন্দাবন কলেজ হোস্টেল পর্যন্ত ৫ টাকা ভাড়া হবার কথা থাকলেও চালকরা নিজেদের মর্জিমতো উঠানামার ক্ষেত্রেও ১০ টাকা করে চাচ্ছে। বিশেষ করে নারী যাত্রীরা এখন টমটমে উঠে ৫ টাকা ভাড়া দিতে পারছেন না।
শুধু নারী যাত্রীই নয়, সরকারি বৃন্দাবন ও মহিলা কলেজ, হবিগঞ্জ উচ্চ বালিকা, হবিগঞ্জ হাইস্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীদেরকেও এখন ১০ টাকা দিতে হচ্ছে। নারী বা শিক্ষার্থীরা ৫ টাকার জন্য বাকবিতন্ডায় না জড়ালেও পুরুষ যাত্রীদের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম চিত্র দেখা গেছে। ভাড়া নিয়ে পুরুষ যাত্রীদের সাথে প্রতিনিয়ত বাকবিতন্ডা হচ্ছে, হাতাহাতি হচ্ছে, মারামারি হচ্ছে। সরেজমিনে শহরের থানার মোড় ও সিএনজি স্টেশনের সামনে দেখা গেছে, সিএনজি স্টেশন থেকে মহিলা কলেজ পর্যন্ত চালকরা ১০ টাকা ছাড়া যাত্রী তুলছে না। একই অবস্থা থানার সামন থেকে মোদক ফার্মেসি পর্যন্তও কারণ জানতে চাইলে চালকরা বাকবিতন্ডায় জড়াচ্ছে।
চালকদের কেউ কেউ পৌরসভার পক্ষ থেকে উঠানামার ভাড়াও ১০ টাকা করা হয়েছে জানায়। তবে তাদের কাছে তালিকা দেখতে চাইলেই বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। ভুক্তভোগী শহরবাসী অভিযোগ করেন, টমটম চালকরা ৭ জন যাত্রী গাদাগাদি করে নেয়। অথচ উঠে নেমে গেলেও ১০ টাকা করে দিতে হয়। নিয়মিত টমটমে যাতায়াত করা এক সংবাদকর্মী বলেন, প্রতিদিন তিন থেকে চারবার হাসপাতাল বা থানায় কিংবা কম দুরত্বে যাতায়াত করতে হয়।
প্রতিবার আসা যাওয়া ১০ টাকা করে দিলে ৬০/৮০ টাকা খরচ হয়। এটা ঠিক না। মহিলা কলেজে ডিগ্রি পরীক্ষা দিতে যাওয়া এক ছাত্রী জানান, আগে ৫ টাকা নিতো চালকরা। তবে এখন ছাত্রী বা নারী যাত্রী দেখলেই ১০ টাকা ছাড়া চালকরা কেউ নিচ্ছে না। লজ্জায় বাধ্য হয়ে তারা টমটম চালকদের কথামতো ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করছেন। আজিজ আহমেদ নামের এক অভিভাবক জানান, সিএনজি স্টেশন থেকে মহিলা কলেজ দুইজন গিয়ে ১০ টাকা দিয়েছি। কিন্তু বাসায় আসার সময় একটি টমটমে ৪ জন এসে ২০ টাকা দিলে চালক বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হয়। পরে বউ আর শ্যালিকার সামনে ২০ টাকার জন্য মারামারি না করে বাধ্য হয়ে ৪০ টাকাই দেই। এটা অমানবিক।
থানার সামন থেকে অপর একটি টমটমে উঠা আরেক যাত্রী বলেন মোদক ফার্মেসির সামনে গিয়ে ৫ টাকা দিলে চালক নিতে চায়নি। ১০ টাকা চায়। আমি প্রতিবাদ করলে আমার দিকে তেড়ে আসে। পরে ভাড়া না নিয়েই চলে যায়। জানা যায়, সড়কে বিশৃংখলা ও দুর্ঘটনা সৃষ্টির জন্য হাইকোর্ট টমটম চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তারপরেও পৌরসভার অনুমতি নিয়ে নিষিদ্ধ এ যানগুলো চলছে। আবার অনেকগুলো টমটম চোরাই বিদ্যুতের চার্জ দিয়ে দিব্যি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হবিগঞ্জ শহর।
শীত মৌসুমে হবিগঞ্জ শহরে লোড শেডিংয়ের তেমন একটা প্রভাব না পড়লেও আসন্ন গরমে যার প্রভাব ভালো মতো পড়বে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা। পরিবেশের জন্য সরাসরি ক্ষতিকর। এগুলোকে পৌরসভার একার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া একটি টমটম দুইটি পা চালিত রিকশার জায়গা দখল করে চলাচল করায় শহরে যানজট বেড়েই চলছে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা। এমন পরিস্থিতিতে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানিয়েছেন সচেতন শহরবাসী।