বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৫ অপরাহ্ন
সোহেল খান দূর্জয় নেত্রকোনা :
নেত্রকোনায়, তারিখ ০৩.০৩.২০২৩ ইং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিল আদায়ের নামে গ্রাহক হয়রানি, দূর্নীতি ও অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জেলার সদর উপজেলার মেদনী ইউনিয়নের গড়কান্দা ইদ্রিস আলী ও ওয়াজেদ অভিযোগ বলেন,সরকারি মিটার নেওয়ার জন্য ১মার্চ আবেদন করি, তখনও তারা মিটার নেই এমনটা বলেনি ৩ তারিখে আসলে তখনও বলে মিটার যা আছে মসজিদ মন্দিরে ও সরকারি ঘরের জন্য রাখা আছে সেখান থেকে দিতে পারবেনা আগামী মাসে দিবে। আমাদের কথা হলো তাহলে আবেদন জমা দেওয়ার সময় কেন এমনটা জানায়নি।তারা আরও বলে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সীমাহীন শোষণ, লাগামহীন দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছারিতা এখন চরমে উঠেছে।আমরা গ্রাহক তো অসহায় তাদের কাছে। এদের শোষণ উৎপীড়ন থেকে বাঁচান প্রশাসনের কাছে এটায় দাবি।
কয়েকদিন আগে সাতপাই রেল ক্রসিং এলাকার সুজন মিয়া বিল দেয়ার পরও তার বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে গেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মচারিরা। তারদেকে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের কাগজ দেখালেও তারা তার কথায় কর্ণপাত করেনি বলে জানান তিনি।
নাগড়া এলাকার সফিকুল ইসলাম বলেন- বাসায় আমার মা অসুস্থ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের লোকদের বারবার বলেছি সকালে, আমি বিদ্যুৎ বিল দিয়ে এসেছি। অথচ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অফিসের লোক আমার কোন কথাই শোনে নি। এসব ঘটনার পরপর বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড নেত্রকোনা অফিসে অভিযোগ করলে তারা তিনশো টাকা ও অন্যান্য খরচসহ প্রায় এক হাজার টাকা লাগবে বলে জানান। আমি এখন টাকা কোথায় পাব।
নেত্রকোনা কাকলী এলাকার বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের গ্রাহক ইকবাল হোসেন বলেন, ভৌতিক বিল ঠিক করার জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নেত্রকোনা সাতপাই (পিডিবি) অফিসে গেলে তারা উদ্বৃত্ত বিল পরের মাসে সমন্বয় কারার আশ্বাস দিয়ে গ্রাহক হতে বাড়তি বিল আদায় করছে। গ্রাহকরা অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করলে অফিস থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার হুমকিও প্রদান করছে। ফলে গ্রাহকরা হয়রানির ভয়ে বিদ্যুৎ বিল প্রদান করতে বাধ্য হচ্ছে। তার উপর বিদ্যুৎ বিলের সাথে মিটার রিডিংয়ের ব্যাপক গড়মিলও রয়েছে। একই রকম অভিযোগ করেন বড় বাজার, মাছুয়া বাজার,ও রেল ক্রসিং কাঁচা বাজারের অনেক ব্যবসায়ীরা।
নেত্রকোনা সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আতাউর রহমান মানিক বলেন, এখন মানুষের সীমিত আয়। তাছাড়া করোনাকালিন সময়ে মানুষের তেমন উপার্জন ছিলো না। এই দুঃসময়ে বাড়তি বিলের বোঝা নির্মম পরিহাস ব্যতীত আর কি হতে পারে না, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড নেত্রকোনা অফিসের অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের মাধ্যমে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদন করলে বৈদ্যুতিক মিটার ও বিদ্যুৎ সংযোগ অতি দ্রুত সময়ে পাওয়া যায়, অন্যথায় বছরের পর বছর ঘোরাঘুরি করলেও বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া যায় না। এরকম অনেক অভিযোগ আমার কাছে প্রায়ই আসে। কিন্তু এসব অভিযোগের কোন সমাধান এখন পর্যন্ত হচ্ছে না।
অভিযোগ ও গ্রাহক হয়রানীর ব্যাপারে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড নেত্রকোনার নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান মুহাম্মদ মুন্না ইলাহী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এমন কোন অভিযোগ আমার কাছে আসে নি। আমরা প্রত্যেক জায়গায় মাইকিং করেছি বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করার জন্য। কারো যদি বিল বকেয়া থেকে থাকে সেক্ষেত্রে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে। আর নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদন করলে বৈদ্যুতিক মিটার ও বিদ্যুৎ সংযোগ অতি দ্রুত সময়ে পাওয়া যায়। কারণ এখন সবকিছু অনলাইনের মাধ্যমে করা হয়। তবে এই মূহুর্তে নতুন সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না, কারণ আমাদের মিটার নেই। যেগুলো আছে মসজিদ মন্দির ও সরকারি আবাসনে জন্য রাখা আছে। জুলাই মাসে আবার মিটার আসলে তখন নতুন সংযোগ দেয়া হবে বলে তিনি জানান।
এদিকে সহকারী নিবার্হী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান,আবাসিক মিটার কেন দিতে পারবে না সে প্রশ্নে তিনি বলেন,সরকারি মিটার শুধু মসজিদ মন্দিরও সরকারি আশ্রয় প্রকল্পের ঘর গুলোর জন্য , আবাসিক এলাকার জন্য নয়। পিডিবির এমন নিয়ম বলেই তিনি জানান,অন্য যারা দিয়েছে তাদের কাছে গিয়ে বলেন।আমি কখন আবাসিকে দেয়নি, দিবো না।
সচেতন মহল বলেন, পিডিবির অত্যাচারে বিরক্ত আমরা কিন্তু কিছু করার নেই, বিদ্যুৎ ছাড়া তো আর চলে না। এই অফিসের কিছু কর্মকর্তা স্থানীয় হওয়ায় সুযোগ পাওয়া তো দূরে থাক অফিসে দৌড়াতে দৌড়াতে গ্রাহক ক্লান্ত অতিরিক্ত টাকা, এই টেবিল থেকে ঐ টেবিল গ্রাহককে সাক্ষর আনতে হয়। তাহলে সরকার কাদের অফিসে রেখেছে, কেনই বা রেখেছে।হয়রানীর কথা আর নাই বললাম।বড় সমস্যা হলো কোন গ্রাহক যদি সরকারি মিটারের জন্য আবেদন করতে যায় তখন আবেদনকারীকে বুঝায় যে সরকারি মিটার নিলে মাসে মাসে ৪০ টাকা মিটার ভাড়া দিতে হবে আর নিজেরা কিনে নিলে কোন মিটার ভাড়া লাগবে না। ফলে সবাই বাহির থেকে মিটার নিচ্ছে। তাহলে সরকারি মিটার কিসের জন্য কাদের জন্য মসজিদ মন্দিরে কি মিটারের ভাড়া দিতে হয় না? যদিও সরকারি টা নিতে চায় তাহলে ও দেয় না। এই দপ্তরে স্থানীয় লোকদের না দিয়ে অন্য জেলার দিলে হয়তো মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে পারবে না।