সোহেল খান দূর্জয় নেত্রকোনা :
নেত্রকোনা তারিখঃ.০৩.২০২৩ ইং জেলার বারহাট্টা উপজেলার সাহতা ইউনিয়নের বড়গাওয়া গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্প যেন আদর্শ কৃষি bখামার। কৃষিতেই ভাগ্য ফিরেছে এ আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের। বদলে গেছে এক সময়ের ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার গুলোর জীবনধারা। ভিটেমাটি পেয়ে প্রশাসনের সহায়তায় শাকসবজি চাষ করে তাদের অনেকেই এখন রিতিমতো স্বাবলম্বী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের প্রকল্প ‘আশ্রয়ণ-২’ থেকে মাত্র এক বছর আগে এই এলাকায় ১২ জন গৃহহীন পরিবারকে একটি করে আধাপাকা ঘর ও দুই শতক জমি দেয়া হয় সাহতা ইউনিয়নের বড়গাওয়া আশ্রয়ণে। এ আশ্রয়ণের বাসিন্দারা ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে উদ্বাস্তু পরিচয়ে অন্যের জমিতে বেয়াওরিস হিসেবে বসবাস করত। এই এলাকায় নতুন করে আরও ১০ টি গৃহ নির্মাণ করা হচ্ছে।
আশ্রয়ণে ঘর বরাদ্দ দেয়ার পরে বাসিন্দাদের আত্মপ্রত্যয়ী করে তোলতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রশাসন। শাকসবজির বীজ, সার, কিটনাশক দিয়ে তাদের কৃষি কাজে উৎসাহিত করা হয়। অল্প দিনের ব্যবধানে সাহতা ইউনিয়নের বড়গাওয়া গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পটিকে একটি আদর্শ কৃষিখামারে রূপান্তরিত করেছে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারগুলো। এক একটি গৃহ যেন একটি খামার। কি নেই সেখানে, হাঁস-মুরগি, কবুতর ও গবাদি পশু। শাকসবজি আর ফলফুলে সোনালী হাঁসি যেন আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের মুখে। সিম আর লাউ ছোট্ট টিনের চালাগুলো পূর্ণ হয়ে আছে। আমের মুকুল মন মাতাবে যে কারো।পেয়ারা, পেঁপে আর কলা গাছের সবুজে ছেঁয়ে আছে পুরো আশ্রয়ণ প্রকল্প।
আশ্রয়ণের বাসিন্দা প্রতিমা রাণী বলেন, আমি খুবই অসহায় ছিলাম। প্রধানমন্ত্রী আমাকে একটি ঘর দেয়ায় আমি এখন অনেক সুখে আছি। আমি ঘরের চারপাশে সবজি চাষ করি। এই সবজি বিক্রি করেই বাজারের টাকা হয়ে যায়। আমার স্বামী ভ্যান চালায়। প্রধানমন্ত্রীর কারণে আজকে আমি ছেলে সন্তান নিয়ে শান্তিতে আছি। আল্লাহ যেন প্রধানমন্ত্রীকেও শান্তিতে রাখে। আশ্রয়ণের আরেক বাসিন্দা রতন চন্দ্র বর্মণ বলেন, আমাদের জায়গা ছিল না। ইচ্ছে করলের অন্যের জায়গায় একটি বীজ লাগাতে পারতাম না। প্রধানমন্ত্রী জায়গা দিয়েছে। এখন ফসল করে নিজেরা খাই, আত্মীয় স্বজনকেই দেই। বিক্রি করে যা পাই তাতে সংসার চলে যায়। এত দিন সিম ছিল। এখনো বেগুন, টমেটো, দুন্দোল, রেখা সব সিজনেই সবজি থাকে এভাবেই স্যাররা বীজ দেয়। আমরা আবাদ করি। আশ্রয়ণের বাসিন্দা ইমরান মিয়া বলেন, আমাদের কোনো জায়গা জমি নাই। প্রধানমন্ত্রী এই ঘরটা দিছে এটুকুই আমাদের সম্বল। শুধু ঘর হইলেই কি হয়, খাব কী- সেই দুশ্চিন্তায় নিয়েই এ আশ্রয়ণে এসেছি। কিন্তু উপজেলার বড় স্যারেরা এসে আমাদের ঘরের আসপাশে শাক-সবজি বিভিন্ন ফলের চারা লাগানোর পরামর্শ দেয়। লাউ, সিম, টমেটো, বেগুন, বিভিন্ন চারা জীব সার সবই স্যাররা দিছে। এখন দেখি আল্লাহর রহমতে আমরা খাইয়াও অনেক বিক্রি করছি। এখন আর সংসার চলতে চিন্তা করি না।
বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম মাজহারুল ইসলাম বলেন, আশ্রয়ণে নিজ গ্রাম ছেড়ে অন্য একটি জায়গায় গিয়ে নতুন পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নেওয়া ভূমিহীনদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ঘর দেওয়ার পরেও আর্থ কষ্টে ভোগে অনেকেই। কীভাবে আশ্রয়ণের বাসিন্দারা ওই ঘরের আশপাশ থেকেই আয় করতে পারে- এমন চিন্তা থেকে সার, বীজ দিয়ে কৃষিতে উৎসাহ দিতে শুরু করলাম তাদের। আমাদের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ স্যারও বিষয়টিকে অত্যন্ত পজেটিভ নিলেন। আমাকে সাহস যোগালেন। স্যারের প্রেরণায় বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ভাগ্যেও চাকা ঘুরতে শুরু করেছে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার গুলোতে। একটি ঘর মানুষের জীবনকে কিভাবে পাল্টে দিতে পারে- এ আশ্রয়ণটি না দেখলে তা বুঝানো যাবে না। আশ্রয়ণটিতে সকল বাসিন্দাদের উঠানোর পরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মত একটি মানবিক কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ। এ উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর মাধ্যেমে এ পর্যন্ত ১৮০ জন গৃহহীন ও ভূমিহীনকে আমরা পাকাঘর ও দুই শতক জমি দিয়েছি।