রফিকুল হক শিকদার জাহাঙ্গীর
রাজধানী, ১৪/০৩/২০২৩ইং উত্তরায় নাইটিংগেল মেডিক্যাল কলেজ শিক্ষার্থীদের মাইগ্রেশনের দাবিতে আমরণ অনশন
উত্তরায় নাইটিংগেল মেডিক্যাল কলেজ শিক্ষার্থীদের মাইগ্রেশনের দাবিতে আমরণ অনশন
মাইগ্রেশনের দাবিতে আমরণ অনশন করছে ঢাকার আশুলিয়ায় অবস্থিত নাইটিংগেল মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
আজ মঙ্গলবার কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের উত্তরা পূর্ব থানার ৪ নং সেক্টর রোড নং ১৪/ বি বাসা নং ৭ এর সামনে ওই কলেজের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচির আয়োজন করে। সকাল ৯ টায় আমরন কর্মসূচি শুরু হয় একটা টানা বিকেল ৫ টা পর্যন্ত চলে।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ইমরান খান ইমন বলেন, মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের মিথ্যা আশ্বাস ও আদালতের কিছু কাগজপত্র দেখিয়ে ভর্তি করায়। প্রথম বর্ষে বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন এনে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু তারা এখনো রেজিস্ট্রেশন এনে দিতে পারেনি। কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থা সংক্রান্ত সব সুযোগ-সুবিধা থেকেও তাদের বঞ্চিত করেছে। এই মেডিক্যাল কলেজে থেকে স্বাস্থ্যশিক্ষা–সম্পর্কিত পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন আদৌ সম্ভব নয়। শিক্ষার্থীদের অন্যত্র মাইগ্রেশনের ব্যবস্থা করার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদফতর মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেছি। মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ রিট উঠালে আমরা মাইগ্রেশনের সুযোগ পাবো।
আমরণ অনশনে অংশ নেওয়া অপর শিক্ষার্থী সাবিহা সুলতানা বলেন, ‘জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেখে এই মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে আসি। তখন কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায়, কলেজের অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যার কারণে তাদের পূর্ববর্তী শিক্ষার্থীরা মাইগ্রেশন করে অন্যত্র চলে গেছেন। ২০১৭ সালে আমাদের প্রথম ব্যাচ ধরে কলেজের সব কার্যক্রম নতুনভাবে শুরু করবে।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, ক্লাস শুরুর পর প্রথম বর্ষ কোনো সমস্যা ছাড়া কাটলেও দ্বিতীয় বর্ষে জানতে পারি, এই কলেজের বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন নেই, এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রেশনও তখনো ছিলো না। পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও সুযোগ-সুবিধা না থাকার কারণে রোগীশূন্য হাসপাতালে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগে কোনো চিকিৎসক নেই। নেই কোনো এনেস্থেসিওলজিস্ট। ফলে কোনো ধরনের সার্জারিই সম্ভব নয়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে এই মেডিক্যাল কলেজ থেকে স্বাস্থ্যশিক্ষা সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের একটাই দাবি, আমাদের অন্যত্র মাইগ্রেশনের ব্যবস্থা করা হোক। অন্যথায় ৫২ জন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের পাশাপাশি ৫২ টি পরিবারের ভবিষ্যৎও অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে।
অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে জানান, ভর্তির সময় আমরা ১৫ লাখ টাকা করে দিয়েছি। মাসিক বেতন ৮ হাজার টাকা করে দিয়েছে। এখন পর্যন্ত অনেকেই ২৫/৩০ লাখ টাকা করে পরিশোধ করেছেন নাইটিংগেল মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে। এটা কোন দিন হতে পারে না এবং মেনে নেয়া যায় না।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, নাইটিংগেল মেডিক্যাল কলেজের মালিক হলেন, আসাদুজ্জামান চৌধুরী এবং তার পুত্র হুমায়ন জামান চৌধুরী হলেন ম্যানেজিং ডিরেক্টর।
ভুক্তভোগী শাহ আলম জানান, আমার মেয়ে নওশিন ফারজানা শুক্ত নাইটিংগেল মেডিক্যাল কলেজের ৩০১৭-২০১৮ বছরের শিক্ষার্থী। ভর্তির সময় আমি ১৫ লাখ দিয়েছি বলে দাবি করেন। এখন পর্যন্ত আরও প্রায় ১৫ লাখ খরচ হয়েছে। আমি এখন কোথায় যাবো।
তিনি আরও বলেন, গত ২ বছর আগে আদালতে মামলাও করেছি। এর আগে ও মানববন্দন করেছি। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়েছে। এখন উপায় হল রীট প্রত্যাহার করা।
ভুক্তভোগী মনোয়ারা বেগম অভিযোগ করে জানান, তার মেয়ে সানজিদা আফরিন রুনা। পিতার মজনু দেওয়ান বাসা তুরাগের কামার পাড়ায়। তার মেয়ে ২০১৭-২০১৮ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি ভর্তির সময় ১৫ লাখ নাইটিংগেল মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে দিয়েছেন। এরপর মাসিক বেতন ৮ হাজার টাকা করে পরিশোধ করেছেন।
এবিষয়ে উত্তরা পূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: জহিরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ঘটনাটি আমি শুনেছি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। এটা শিক্ষার্থী এবং নাইটিংগেল মেডিক্যাল কলেজের ম্যানেজমেন্টের বিষয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে মোতায়েন রয়েছে।