সোহেল খান দূর্জয় নেত্রকোনা :
কৃষকের স্বপ্ন এখন পানির নিচে। গেলও কয়েক দিনের বৃষ্টিতে নেত্রকোনা জেলা সদর উপজেলার সিংহের বাংলা ইউনিয়নের মহিষাখালি খাল পুনঃ খননের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় ২শত একর জমির ইরি-বোরো রোপনকৃত ধান তলিয়ে গেছে।
অসময়ে বৃষ্টির কারনে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কৃর্তপক্ষের (পওর) কৃর্তক পুনঃখননকৃত খাল দিয়ে পানি নিস্কাসনের সু-ব্যবস্থা না থাকায় এমন ক্ষতি হয়েছে বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা।
এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই ইউনিয়নের কৃষক,ফুলমিয়া, আবুল মিয়া,দেওয়ান আলী, রমজান আলী,আলাল মিয়া,নয়ন মিয়া, খোরশেদ মিয়া,রাশিদ মিয়া,কালাম মিয়া,হযরত আলী,পন্ডিত খাঁ, রশিদ খাঁ, হামিদ মিয়া,ইসব আলী, হাদিস আলী, গফুর মিয়া, মজিবুর মেম্বার, বাচ্চু মিয়া, ইংরাজ খাঁ, জামাল মিয়া, নাজিম মিয়া,সিরাজ খাঁ,লাল মিয়া, জিলহজ খাঁ, সমশের খাঁ, হেলিম মিয়া, জুয়েল মিয়া,সহ আরও অনেকেই। খাল খননে অব্যবস্থাপনা ও সংস্কারের অভাবে খালের পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যাবস্থা নেই। যার কারনে সামান্য বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় ধান। এতে করে ব্যাপক ভাবে আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন প্রায় ১০ গ্রামের প্রায় ৫ হাজার কৃষক। মহিষাখালি খাল পুনঃখননে নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড(পওর) কর্তৃপক্ষকে বার বার অভিযাগে করেও কোন সমাধান হচ্ছে না। কৃষকদের সেচ সুবিধার জন্য ২০২১-২২ অর্থ বছরে নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ বাপাউবো প্রকল্পের আওতায় নেত্রকোনা সদর উপজেলার সিংহের বাংলা ইউনিয়নের মহিষাখালি খাল থেকে শুরু করে বর বিল হয়ে মগড়া নদী পর্যন্ত ২.১০০ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন করা হয়।
স্থানীয় কৃষকরা জানান- সদর উপজেলার সিংহের বাংলা ইউনিয়ন এর মহিষাখালী খাল পুনঃখনন করা হয়েছে বর বিল হয়ে মগড়া নদী পর্যন্ত ২.১০০ কিলোমিটার খাল খননে অব্যাবস্থাপনা রয়েছে। কোথাও কোথাও খাল খনন করা হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও খননের নামে মাটি শুধু মাত্র উচুঁ করে রাখা হয়েছে। আবার খালের মুখ গুলো বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে কচুরি পানায় ভরে গেছে এই খাল। যার কারনে পানি নিস্কাশনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বারবার।
ফলে কয়েক দিনের বৃষ্টিতে এই ইউনিয়ন এর নয়াপাড়া, ফরিদপুর, কান্দাপাড়া,মই রুহী, পঞ্চানন পুর,হরগাতি, সহ প্রায় ১০ গ্রামের কৃষকদের প্রায় ২শত একর জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তাই খালটি পুন:খননে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে স্হানীয় এলাকাবাসী, পানি নিষ্কাশনের সংযোগ স্থাপন করলে বৃষ্টির পানি অনায়াসে নেমে যাবে। তাহলে একমাত্র ফসল নিয়ে আর দুশ্চিন্তা করতে হবে না কৃষকদের।
স্থানীয় সিংহের বাংলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আলী আহসান সুমন বলেন, কৃষকদের সুবিধার জন্য মহিষাখালি খালটি ২০২১-২২ অর্থ বছরে পুনঃখনন করা হয়। খালটি খননে কোনো প্রকার অনিয়ম হয়নি। ২.১০০ কিলোমিটার খাল খননে পুরোটাই সঠিকভাবে খনন করা হয়েছে।যা এখন দৃশ্যমাণ।
কৃষক ফুল মিয়া বলেন, এই খালটি খননে পুরোটাই অনিয়ম হয়েছে, যার ফলে সঠিকভাবে পানি নিষ্কাশন হচ্ছেনা। বর্তমানে খাল দিয়ে পানি ওভারপ্লো হয়ে প্রায় ২শত একর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এমন অবস্থায় কৃষকরা হতাশ হয়ে ঘরে বসে পড়েছেন।
এ বিষয়ে মজিবুর মেম্বার বলেন, নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপকে একাকিবার জানিয়ে কোন লাভ হয় নাই। তাই আমরা এর একটি প্রতিকার চাই। যাতে পরবর্তীতে কৃষকরা যেন আবারও এমন ক্ষতির মুখে না পড়ে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড পওর শাখা-১ (বাপাউবো) এর উপ সহকারী প্রকৌশলী মোঃ গোলাম কিবরিয়া বলেন, মহিষাখালি খালের পুনঃখনন ২.১০০ কিলোমিটার খালের কিছু সমস্যার অভিযোগ পেয়েছি। তবে খাল খননে ব্যাপক অনিয়ম এর কথা সঠিক নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড পওর শাখা-১ (বাসাবো) এর উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী আরাফাত আহমেদ বলেন, মহিষাখালি খাল নিয়ম অনুযায়ী খনন করা হয়েছে। আর খালে স্থানীয়দের মাছ চাষ করলে সেখানে বেড়া,খড়ি দেয়ার কারনেও কুচরিপানা জমাট বাঁধতে পারে। তবে সার্বিক বিষয়ে আমরা তদন্ত করছি কিভাবে পানি নিষ্কাশন এর ব্যবস্থা করা যায়।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড পওর (বাপাউবো) এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সারোয়ার জাহান বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে পুণরায় খাল খননের প্রয়োজন হলে প্রজেক্ট নিয়ে আবারও খাল পুনঃ খনন এর উদ্যোগ নেয়া হবে।
এলাকাবাসী জানান অতি তারাতারি খালটি পুনঃখনন করে খালে জমে থাকা পানি নিস্কাসনের ব্যবস্থা করে কৃষকের ধান রক্ষায় এগিয়ে আসার দাবী জনান স্হানীয় কৃষকরা।