রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১২ পূর্বাহ্ন
রফিকুল হক শিকদার জাহাঙ্গীর
ডিবি হেফাজতে মৃত্যু: সুস্থ মানুষ নিয়ে গিয়ে ১২ দিন পর লাশ ফেরত, বলছেন স্ত্রী
রাজধানীর,তুরাগের একটি বাসা থেকে এক নারীর মরদেহ উদ্ধারের দিন সকালে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে আমার স্বামীকে (আলাল উদ্দিন দেওয়ান) ছেড়ে দেয়। দুপুরে বাসায় আসছে। গোসল করে মোটরের সুইচ অন দেওয়ার পর বাসায় পুলিশ এসে আবার জিজ্ঞাসাবাদ করে চলে যায়। কিছু খাওয়া দাওয়াও করে নাই। তারপর আবার ডিবি পুলিশ তাকে ফোন করে ডেকেছে। কিছু না খেয়েই সে ৬ কিলোমিটার হেঁটে ওই বাসায় (ঘটনাস্থলে) গেছে। রাতে ধরে নিয়ে গেছে ডিবি পুলিশ। তখন সে পুরো সুস্থ মানুষ ছিল। নিয়ে গেল সুস্থ মানুষ। আর ১২ দিন পর দিয়ে গেল লাশ!
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে মৃত আলাল উদ্দিন দেওয়ানের (৫০) আজ রোববার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। তুরাগের বাউনিয়ার আব্দুল্লাহ মেমোরিয়াল স্কুল মাঠে জানাজা শেষে রাত ৮টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানের দাফন হয়। এরপর কান্নাজড়িত কণ্ঠে আজকের পত্রিকাকে ওপরের কথাগুলো বলেন আলাল উদ্দিনের স্ত্রী পারভিন আক্তার।
এর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে পুলিশ। পরে মাগরিবের আজানের আগে মরদেহটি নিয়ে আসেন স্বজনেরা। এ সময় সাদা পোশাকে চারজন ডিবি ও কয়েকজন পুলিশ সদস্য মরদেহের আশপাশে ছিল বলে দাবি স্বজনদের।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, তুরাগের বাউনিয়া পশ্চিম মইশাগার এলাকার হায়দারের ভাড়া বাসা থেকে গত মঙ্গলবার (৬ জুন) সকাল ১০টার দিকে ভাড়া বাসার মেঝেতে বিবস্ত্র রক্তাক্ত অবস্থায় ফাতেমা আক্তার (৩৩) নামে এক নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নারীর ভাই বাদী হয়ে তাঁর চতুর্থ স্বামী সাইফুল ইসলাম রানাকে একমাত্র আসামি করে হত্যা মামলা করেন। পুলিশ তাঁকে গত ৮ জুন সকালে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।
তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মওদুত হাওলাদারও আজকের পত্রিকাকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
জানা যায়, ওই বাসার কেয়ারটেকারের দায়িত্ব পালন করতেন আলাল উদ্দিন দেওয়ান। তাই তাঁকে সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে নিয়ে গিয়েছিল ডিবি পুলিশ। আর মামলাটিও তদন্ত করছে পুলিশের এই বিভাগ।
আলাল উদ্দিন দেওয়ানের স্ত্রী পারভীন আক্তার বলেন, ‘ওই দিন (৬ জুন) রাত ১০টার দিকে ডিবি পুলিশ তাঁকে (স্বামী) নিয়ে গেছে। এরপর থেকে আমরা তাঁকে খোঁজাখুঁজি করেও পাইনি। দশ দিন পর রাতে আমাদের পুলিশ ফোন করে জানায়, আলাল মারা গেছে। তাঁর লাশ নিয়ে আসার জন্য আমাদের বলে।’
পারভীন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার স্বামীরে অত্যাচার করে মারছে। কী অন্যায় করছে, যার কারণে আমার স্বামীরে এমনভাবে নির্যাতন করে মারছে? আমার স্বামী তো সরল সোজা মানুষ ছিল। তার বিরুদ্ধে কোনো দিন থানায় একটি জিডিও হয় নাই, মামলা নাই।’
‘ওরা আমারে বিধবা করল কেন, সন্তানদের বাবা ছাড়া করল কেন? এখন ছেলে মেয়ে আমার কী হবে? ওদের ভবিষ্যৎ কী হবে? আমি এর কঠিন বিচার চাই। আমি এক নারী। এক নারী হয়ে চাই না যে আরেক নারী যেন আমার মতো এভাবে বিধবা হোক। তাই আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাই।’ কাঁদতে কাঁদতে বলেন পারভীন আক্তার।
আলালের ছেলে নবম শ্রেণি পড়ুয়া পাবেল দেওয়ান আজকের পত্রিকার এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ঘটনার দিন সুস্থ অবস্থায় আমার বাবাকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নিয়ে গেছে। পরে তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলছে। আমি আমার বাবাকে হত্যার বিচার চাই। অথবা আমার আব্বুকে ফেরত চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’
আলালের মেয়ে সুমাইয়া আক্তার পায়েল অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার আব্বুরে অনেক টর্চার করছে। আমার আব্বুর হাত পায়ে অনেক ফোলা ছিল। ডিবি তারে মেরে তার ডান হাত ভেঙে দিছে বলে জানতে পারছি। তার লাশ আমাদের কাউকে দেখতে দেয় নাই। তার কোনো ফুল ছবিও দেয় নাই। শুধু একটা হাফ ছবি দিছে। সেখানেও ডান হাতে ব্যান্ডেজ ছিল। পেটে ফুটা ছিল। মেডিকেল থেকে গোসল করিয়ে, কাফনের কাপড় পরিয়ে কফিনের মধ্যে লাশ পাঠিয়েছে। বাবার লাশের মুখ ছাড়া শরীরের বাকি অংশ কাউকে দেখতেও দেয় নাই।’