গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধিঃ
পটুয়াখালীর গলাচিপায় চাহিদামতো যৌতুক না দেওয়ায় মোসা. নাজমা বেগম (৩৮) নামে এক নারীকে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে তার স্বামী মো. বাহাদুর পন্ডিত (৫৫) এর বিরুদ্ধে। পিটুনীতে নাজমার হাত, পা, কোমড়, গাল সহ বিভিন্ন স্থান থেঁতলে গেছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানের ব্যাথায় বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে নাজমা বেগম। বুধবার (৩০ আগস্ট) তাকে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার ওই নারীকে ঘরে আটকে রেখে নির্যাতন চালান পাষন্ড স্বামী, ১ম স্ত্রী মোসা. পারভীন বেগম, তার ১ম স্ত্রীর ছেলে মো. জাকারিয়া ও দেবর শ্যামল পন্ডিত।
জানা গেছে, গত ১০ বছর আগে স্ত্রী ও সন্তানদের কথা গোপন রেখে গলাচিপা পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড কলেজ রোডের মো. খলিল মাতুব্বরের মেয়ে মোসা. নাজমা বেগমকে রাঙ্গাবালী উপজেলার রাঙ্গাবালী ইউনিয়নের মাদারবুনিয়া গ্রামের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের রহিম পন্ডিতের ছেলে মো. বাহাদুর পন্ডিত পারিবারিকভাবে বিবাহ করেন।
বিয়ের পর হতে নাজমা বেগমের বাবার বাড়ি হতে বিভিন্ন সময়ে যৌতুকের টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে স্বামী ও তার পরিবার। নাজমা বেগমের বাবা গলাচিপা সরকারী কলেজের একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী বিধায় যৌতুকের টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে স্বামী বাহাদুর পন্ডিত, ১ম স্ত্রী মোসা. পারভীন বেগম, তার ১ম স্ত্রীর ছেলে মো. জাকারিয়া ও দেবর শ্যামল গৃহবধূ নাজমা বেগমের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে।
গত মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) নাজমা বেগমের বাবার কাছ হতে টাকা আনতে পুনরায় চাপ সৃষ্টি করে। নাজমা বেগম টাকা আনতে অস্বীকার করিলে স্বামী, তান সতীন, সতীনের ছেলে ও ছোট দেবর মিলে তাকে তার শোবার কক্ষে আটকে রাখে এবং তাকে বাঁশের লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারপিট করে শরীরে বিভিন্ন স্থানে নিলাফুলা জখম করে। এতে তার শরীরে গুরুতর জখম হয় এবং ডান পা, ডান হাত ও মাথায় আঘাত লাগে।
আট দিন আটক থাকার পর স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের কর্তব্যরত ডা. সূচনা আক্তার জানান, আমার চিকিৎসাধীনে নাজমা বেগম দ্বিতীয় তলায় ১০ নম্বর বেডে ভর্তি আছে। তার ডান পা, ডান হাত ও মাথায় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে কালো কালো দাগ আছে। এ বিষয়ে নাজমা বেগমের বাবা ও গলাচিপা সরকারি কলেজের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী মো. খলিল মাতুব্বর বলেন, বাহাদুর পন্ডিত এর আগে দুটি বিবাহ করেছে। সেখানে তার সন্তান আছে।
এসব কথা গোপন করে আমার মেয়েকে প্রায় ১০ বছর আগে দুই লক্ষ টাকা কাবিনে বিবাহ করে। বিবাহের পর থেকেই আমার মেয়েকে যৌতুকের জন্য প্রায়ই মারধর করে। আমি এর আগে বাহাদুর পন্ডিতকে গরু ক্রয়ের জন্য ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা এবং ব্যবসা করার জন্য ১ লক্ষ টাকা দেই। এখন আবার মোটর সাইকেল কেনার জন্য টাকা চায়। আমি এত টাকা কোথায় পাব।
ধার দেনা করে আগে টাকা দিয়েছি। আবার টাকা কীভাবে দেব। আমি কত টাকাই বা বেতন পাই। কিন্তু ওরা দলব্ধভাবে আমার মেয়েকে বেধম মারধর করলে স্থানীয়রা আমার মেয়েকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। আমি প্রশাসনের কাছে সঠিক বিচার দাবি করছি।
এ বিষয়ে নির্যাতিতা গুহবধু মোসা. নাজমা বেগম বলেন, আমার স্বামী এর আগে দুটি বিবাহ করেছে। এ কথা গোপন রেখে ১০ বছর পূর্বে তার সাথে আমার বিবাহ হয়। সে ব্যবসা করবে বলে জানায়। আর তার জন্য যৌতুকের টাকা দিতে বলে। আমি আমার বাবার কাছ থেকে এর আগে দুবার প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা এনে দিয়েছি। আবারো আমার কাছে মোটর সাইকেল কেনার জন্য যৌতুক চাইলে আমি টাকা কোথায় পাব বললে সে তার ১ম স্ত্রী, ছেলে, দেবর মিলে আমাকে ৮ দিন ধরে আটকে রেখে মারধর করে।
আমি স্থানীয়দের সহায়তা কোন রকম পালিয়ে গলাচিপা হাসপাতালে এসে ভর্তি হই। এ বিষয়ে বাহাদুর পন্ডিতের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের একাধিকবার চেষ্টা করেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে গলাচিপা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শোণিত কুমার গায়েণ বলেন, ঘটনাটি রাঙ্গাবালী হওয়ায় রাঙ্গাবালী থানায় অভিযোগ করলে ভাল হয়। তবে গলাচিপা থানায় অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।