ঢাকা, ৪ অক্টোবর, ২০২৩ ইং বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য উত্তম জায়গা উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত দেশের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন,‘আমাদের উপর আস্থা রাখুন। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে আপনারা ঠকবেন না। এখানকার মানুষ খুব বন্ধুবৎসল, আপনারা লাভবান হবেন।’
বুধবার ঢাকায় একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশে পরিচালিত ইউরোপীয় কোম্পানীগুলোর বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেলিগেশন যৌথভাবে সেমিনারের আয়োজন করে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন।
টিপু মুনশি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছেন।বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন এবং অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে এবং কিছু বাস্তবায়নাধীন অবস্থায় রয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশ বিনিয়োগের উত্তম জায়গায় পরিণত হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে করে কেউ কখনো ক্ষতিগ্রস্ত বা হতাশ হননি।
তিনি বলেন, ‘এরপারও আমি বলবো বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে সমস্যা এখনও রয়ে গেছে, সেগুলো ব্যবসায়ী-সরকার আমরা সবাই মিলে সমাধান করতে পারবো।’ তিনি বলেন, ইউরোপীয় বিনিয়োগকারিরা বাংলাদেশের ব্যাপারে যেভাবে উৎসাহ দেখাচ্ছে, তাতে আমি আশাবাদী এখানে তারা অধিক বিনিয়োগ করবেন।
বাংলাদেশে যেসব ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ রয়েছে তাদের প্রতি আহবান জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আপনারা বাংলাদেশের ইতিবাচক বিনিয়োগ পরিবেশের বিষয়টি অন্য বিদেশী প্রতিষ্ঠানের কাছে তুলে ধরুন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া ইউরোপীয় বিনিয়োগকারিদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহবান জানিয়ে বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিডা সব ধরনের সেবা প্রদানে প্রস্তুত রয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে থেকে বিডার ‘ওএসএস’ প্ল্যাটফর্ম হতে বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট সকল সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।
দেশে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাপান, চীন ও ভারতের জন্য বিশেযায়িত ইকোনমিক জোন হচ্ছে। ইউরোপীয় বিনিয়োগকারিদের জন্য সেধরনের বিশেষায়িত শিল্পাঞ্চল হতে পারে। বিনিয়োগকারিরা এগিয়ে এলে সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমাদের স্থানীয় বাজার অনেক বড়, যেখানে ইইউ কোম্পানীসমূহ বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো স্থানীয় উদ্যোক্তা খুঁজে পেতে বিডা সহযোগিতা করবে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেলিগেশনের প্রধান রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াটলি বলেন, বহুবছর ধরেই ইইউ ভুক্ত দেশসমূহ বাংলাদেশের উৎপাদিত পণ্য রপ্তানির একটি আদর্শ স্থান এবং ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগটি বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে।বাংলাদেশের এলডিসি উত্তোরণ পরবর্তী সময়ে ইইউ’র সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি। তথ্য-প্রযুক্তি, এভিয়েশন, নবায়নযোগ্য জ¦ালানি, কৃষি, ঔষধ প্রভৃতি খাতে বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্প্রসারণের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। এছাড়া বাণিজ্য ঘাটতি মেটাতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কার্যক্রম সম্প্রসারণের উপর তিনি জোর দেন।
সেমিনারের স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন,বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম সহযোগী ইউরোপীয় ইউনিয়ন,যেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৪৮ শতাংশের গন্তব্য ছিলো ইইউভুক্ত দেশসমূহ, যার পরিমাণ ২৫ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার। তিনি জানান, ইইউর বেশকিছু কোম্পানী বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ৩ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করেছে, যা আমাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিল্পখাতে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ আনায়ন,সাপ্লাইচেইন শক্তিশালীসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
সেমিনারে ‘বাংলাদেশে ইইউ’র বিনিয়োগের চ্যালেঞ্জ: কোম্পানীজ প্রেক্ষিত’ এবং ‘জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে বাংলাদেশের কর্মপন্থা’ বিষয়ক দুটি বিষয় ভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন দূতাবাসের কনুস্যল জোরেট মারভেলিনের সঞ্চালনায় ‘বাংলাদেশে ইইউ’র বিনিয়োগের চ্যালেঞ্জ: কোম্পানীজ প্রেক্ষিত’ বিষয়ক সেশনে এয়ারবাসের আবাসিক প্রতিনিধি মুরাদ বুরোফালা, লাফাজ হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও ইকবাল চৌধুরী, পেট্রোম্যাক্স এলপিজি লিমিটেডের সিইও মাসিহ নিয়াজি এবং জালো নিটিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরিয়া লোপেজ আলোচনায় অংশ নেন। তাঁরা ইইউ কোম্পানীগুলোর বিনিয়োগ আকর্ষনে দীর্ঘমেয়াদী টেকসই নীতি সহায়তা এবং জ¦ালানী নিরাপত্তা একান্ত জরুরী বলে উল্লেখ করেন।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ‘জিএসপি প্লঅস সুবিধা পেতে বাংলাদেশের কর্মপন্থা’ বিষয়ক সেশনে এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, বিজেএমইএর সহসভাপতি মিরান আলী, বাংলাদেশ বাইসাইকেল অ্যান্ড পার্টস ম্যানুফেকচার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স এসোসিয়েশনের সহসভাপতি মোহাম্মদ মোশতাক আহমেদ তানভীর, বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ এবং এইচঅ্যান্ডএম-এর রিজিওন্যাল কান্ট্রি ম্যানেজার জিয়াউর রহমান আলোচনায় অংশ নেন। তাঁরা ইউরোপঅয় কোম্পানীকে বাংলাদেশের সাপ্লাইচেইন খাতে আরও বেশি হারে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। বাংলাদেশের গ্রীণ ফ্যাক্টরিমূহের উপাদিত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি এবং সেই সাথে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে বাংলাদেশে ভোকেশন্যাল ট্রেনিং কার্যক্রম বাড়ানোর আহ্বান জানান