ডেক্স নিউজ:
রাজধানী, ১ নভেম্বর, ২০২৩ ইং বর্তমান রাজনৈতিক সহিংসতায় ব্যবসা, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)। একইসাথে সংগঠনটি দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষা ও জনদুর্ভোগ লাঘবে হরতাল, অবরোধসহ অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর যেকোন অসহিষ্ণু রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিহারের আহবান জানিয়েছে।
বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে সংগঠনটি বলেছে, বিশ্বব্যাপী কোভিড মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়েছে। বিশ্বব্যাপী সাপ্লাই চেইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ডলার সংকট, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। আমদানি কমে যাওয়ায় ইতোমধ্যে উৎপাদন হ্রাস এবং রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এরইমধ্যে নতুন করে যোগ হয়েছে গাজা-ইসরাইল যুদ্ধ পরিস্থিতি-যা দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে আরও নাজুক করে তুলছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এই পরিস্থিতির মধ্যে দেশে হরতাল, অবরোধসহ রাজনৈতিক অস্থিরতা জাতীয় অর্থনীতিকে আরও শঙ্কার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ডাকা হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচী সাপ্লাই চেইনকে ভীষণভাবে বিঘিœত করছে। এর প্রভাব ইতোমধ্যে পণ্যের মূল্য এবং রপ্তানির ওপর পড়ছে। রাজনৈতিক কর্মসূচীর কারণে নির্ধারিত সময়ে পণ্য জাহাজীকরণ করতে না পারলে ক্রয়াদেশ বাতিলের ঝুঁকিতে পড়বেন উদ্যোক্তারা। সেসাথে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ সকল পণ্যসামগ্রীর উর্ধ্বমূল্যের প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর।
এতে আরো বলা হয়, হরতাল, অবরোধ কর্মসূচীর কারণে বিদেশে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা যাবে। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন এর ফলে বিদেশীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাবে। অন্যদিকে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাবে এবং কর্মসংস্থান ঝুঁকিতে পড়বে, যা কখনই কাম্য নয়। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক অস্থিরতা চলতে থাকলে ঋণ খেলাপির পরিমাণ বেড়ে যাবে। নতুন কর্মসংস্থানের পথ রুদ্ধ হয়ে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত উল্লেখ করে এফবিসিসিআই বিবৃতিতে জানিয়েছে, একদিন হরতাল বা অবরোধে দেশের অর্থনীতির ক্ষতি হয় প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা। হরতাল, অবরোধ চলতে থাকলে বাংলাদেশের মত একটি উদীয়মান অর্থনীতি এর ভার সইতে পারবে না বলে তাঁরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
ব্যবসায়ীরা হরতাল, অবরোধ ও সহিংস কোন কর্মসূচী চান না বলে বিৃবতিতে উল্লেখ করে বলা হয়, তাঁরা চান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, কারণ এটা ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ধরে রাখা সম্ভব হবে না। সাধারণ মানুষ এবং অর্থনীতির বৃহৎ স্বার্থের কথা বিবেচনা করে হরতাল বা অবরোধের ন্যায় অসহিষ্ণু কর্মসূচী থেকে রাজনৈতিক দলগুলো ফিরে আসবে বলে ব্যবসায়ীরা আশা প্রকাশ করেছেন।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও দেশের অর্থনীতিকে একটি শক্তিশালী কাঠামোর ওপর দাঁড় করানোর লক্ষ্যে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্তু চলমান হরতাল বা অবরোধ কর্মসূচী দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ব্যাহত করবে। রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রলম্বিত হলে এলডিসি গ্রাজুয়েশন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও এসডিজি অর্জনসহ জাতীয় লক্ষ্যসমুহ অর্জন ব্যাহত হবে বলে শঙ্কা রয়েছে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, এফবিসিসিআই বিশ্বাস করে দেশকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদরাই মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন। দেশের মানুষের জীবন-জীবিকা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে রাজনীতিবিদরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এবং নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন হিসেবে এফবিসিসিআই দেশের অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে হরতাল,অবরোধসহ অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর এমন রাজনৈতিক কর্মসূচী পরিহারের আহবান জানাচ্ছে।