রফিকুল হক শিকদার জাহাঙ্গীর
*কালো টাকা কেমনে সাদা হয়:*
আমাদের দীর্ঘদিনের ছুটা কাজের মেয়ে "মর্জিনা" রুমের ফ্লোর মুছতে মুছতে আচমকা আমাকে ডেকে বললো- খালু, কালো টাকা কেমন? বললাম, হঠাৎ তুই কালো টাকার কথা জিজ্ঞেস করছিস কেন? সে বললো, রাস্তাঘাটে অনেকেই কালো টাকার কথা বলাবলি করছে, তাই জিজ্ঞেস করলাম। একটু থেমে আবার বললো, খালু আমাকে কি কালো টাকা দেখাইতে পারবেন? হাসতে হাসতে বললাম, ঠিক আছে কয়েক দিনের মধ্যে দেখাবো নে!
তিন দিন পর আজ গিন্নী'কে বললাম, আজকে মর্জিনাকে শুধুমাত্র আমার শার্ট-প্যান্ট ধুইতে দিবা, অন্য কোন কাপড় দিবানা। ১২টার দিকে কাজ শেষ করে চলে যাওয়ার সময় মর্জিনাকে ডেকে বললাম, এ দিকে আয় তোকে কালো টাকা দেখাবো! হাসি মুখে মর্জিনা আমার সামনে এসে দাঁড়ায়।
বললাম, তোর কোমরে পাঁচ হাজার টাকা গুঁজা আছেনা? মর্জিনা কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকে। বড় গলায় জানতে চাইলাম-কি হলো, কোমর চেক করে বের করে দেখ! বুঝলি, এটাই হলো কালো টাকা!
মর্জিনা লজ্জায় মাথা নিচু করে বলে, খালু কাপড় ধোয়ার সময় আপনার শার্টের পকেটে পেয়েছি। আজকে সমিতির কিস্তি দিতে হবে তাই লোভ সামাল দিতে পারি নাই! মর্জিনা কাঁদতে কাঁদতে নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছে আর বলছে, একাজ করার আগে আমার যে কেন মরণ
হলো না!
স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললাম, তুই এখান থেকে আমাকে ১৫% অর্থাৎ ৭৫০ টাকা ফেরৎ দে! মর্জিনা মাথা নিচু করে আমার হাতে ৭৫০ টাকা ফেরৎ দেয়। উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বললাম, এখন তোর হাতের টাকা সাদা হয়ে গেছে! এবার মাথা উঁচু করে দাঁড়া!
কীভাবে কালো টাকা সাদা হয়, আবার সাদা টাকা কালো হয়- তা কি বুঝতে পারছিস? মাথা নেড়ে মর্জিনা হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানায়। এরপর বললাম, তুই যদি আজ পাঁচ হাজার টাকা চুরি না করে পাঁচ হাজার কোটি টাকা চুরি করতে পারতি তাহলে তুই ভিআইপি'র মর্যাদা লাভ করতে পারতি!
সংসদে গিয়ে চেয়ারে বসে ঘুমাইতে পারতি! মাহফিলে সভাপতির চেয়ারে বসতে পারতি! যাইহোক, কাল থেকে তুই মাথা উঁচু করে বাসায় আসবি। চুরির তকমা তোর গলায় আর নেই। কারণ, তোর চুরির টাকা সাদা হয়ে গেছে!
লাজুক ভঙ্গিতে মর্জিনা বলে, খালু আমাকে আর লজ্জা দিয়েন না, এই নেন আপনার সব টাকা।
আহারে! যারা পুকুর চুরি করে দেশটারে ফতুর করে দিচ্ছে, তাদের যদি মর্জিনার মতো নূন্যতম লজ্জা শরম থাকতো? সামান্য আত্মসম্মানবোধ থাকতো! তাহলে বাংলাদেশটা বেঁচে যেতো!