ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি। সচল হচ্ছে অফিস-কর্মস্থল ও যাতায়াত ব্যবস্থা। এরই ধারাবাহিকতায় খুলতে শুরু করেছে শিল্পকারখানা। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, বুধবার থেকে সারাদেশে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতের সব কারখানা চালু হয়েছে। এসময়ে কারফিউ চলাকালে শ্রমিকদের আইডি কার্ডই মুভমেন্ট পাস হিসেবে গণ্য হবে।
কারখানা সংশ্লিষ্টজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশজুড়ে সংঘর্ষ-সহিংসতা, কারফিউ ও সাধারণ ছুটির কারণে গত কয়েকদিনে তৈরি পোশাক খাতের কাঁচামাল সরবরাহ চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে। এজন্য কারখানা খুললেও এখনই পুরোপুরি উৎপাদনে যওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আবার কিছু কারখানা আছে, যেগুলোতে কাঁচামাল সরবরাহ না হলে কয়েকদিন পর আর চালু রাখা যাবে না।
এর আগে মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) রাতে পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ধানমন্ডির বাসভবনে তার সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর নেতারা।
এছাড়া পোশাক কারখানা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সীমিত পরিসরে ইন্টারনেট সংযোগ চালুর বিষয়ে ওইদিনই তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গেও বৈঠক করেন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নেতারা।
উভয় বৈঠকে বিজিএমইএ সভাপতি এস এম মান্নান, সাবেক সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ, সিদ্দিকুর রহমান ও আবদুস সালাম মুর্শেদী এবং বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দুই মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে রাতেই রাজধানীর গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিনে নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসেন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নেতারা।
ওই বৈঠক শেষে জানানো হয়, স্বাভাবিক সময়ের মতোই চালু থাকবে পোশাক কারখানা। ঢাকা ও এর আশপাশের সব পোশাকশিল্প কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিতে শিল্পপুলিশের বিশেষ ইউনিটসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করবেন। পোশাকশ্রমিকদের কারখানা থেকে দেওয়া কার্ড (আইডি কার্ড) দেখালেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহায়তা করবে।
এদিকে, কারফিউয়ের মধ্যে টানা তিনদিন বন্ধ থাকার পর গতকাল মঙ্গলবারই চট্টগ্রামের বেশিরভাগ শিল্পকারখানা খুলে দেওয়া হয়। অন্যান্য এলাকায়ও কিছু শিল্পকারখানা মঙ্গলবার চালু করা হয়। এছাড়াও একই দিন ময়মনসিংহ, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও সাভার এলাকার কিছু কিছু কারখানা সীমিত পরিসরে উৎপাদনে ফিরে।
এর আগে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ কার্যালয়ে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এসময় সরকারপ্রধান ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার বিষয়ে ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিনিময়ের পরই ব্যবসায়ীদের একটি অংশ ওইদিনই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করলে বন্দরনগরীর কারখানা চালুর বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়। পরদিনই (মঙ্গলবার) খুলে যায় চট্টগ্রামের বেশিরভাগ শিল্পকারখানা।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে একপর্যায়ে ঢাকাসহ সারাদেশে সংঘর্ষ-সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে সরকার গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) দিনগত রাত ১২টা থেকে কারফিউ জারি করে। গত রবি, সোম ও মঙ্গলবার সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।
পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ধীরে ধীরে বাড়ছে কারফিউ শিথিলের সময়সীমা। গত মঙ্গলবার দুপুর ১টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল ছিল। আজ বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকেলে ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। এদিন সরকারি-বেসরকারি সব অফিস চলবে বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সাধারণ সম্পাদক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাকির হোসেন বুধবার সকালে জাগো নিউজকে বলেন, গতকাল (মঙ্গলবার) থেকে আমাদের সব সদস্য কারখানা চালু হয়েছে। আজ বুধবারও সব কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম চলছে।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। ভালোভাবে সব জায়গায় কারখানা পরিচালিত হচ্ছে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) আমাদের একটি মিটিং আছে। সেখানে আমরা পোশাকশিল্প খাতের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে দফায় দফায় বৈঠক শেষে বিজিএমইএ সভাপতি এস এম মান্নান জানান, বুধবার থেকে দেশের পোশাক কারখানাগুলো যেন নিরাপদে উৎপাদনে ফিরতে পারে, সে ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাসমূহ এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কারফিউ চলাকালীন কারখানায় প্রবেশের জন্য চলাচলের সময় কারখানার শ্রমিক, মিড লেভেল ব্যবস্থাপনা কর্মী এবং ব্যবস্থাপনা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য তাদের পরিচয়পত্র কারফিউ পাস হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে।
এছাড়াও বুধবার থেকে সদস্যভুক্ত সব কারখানার শ্রমিক ভাই-বোনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সুষ্ঠুভাবে কারখানার উৎপাদন কাজে ফেরার আহ্বান জানান বিজিএমইএ সভাপতি।