পঙ্গপাল (Locust) হল ছোট আকারের একটি পতঙ্গ। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে ফসলের ধ্বংস করে এরা। শক্তিশালী পাখা এবং দ্রুত চলাচলের ক্ষমতা পঙ্গপালদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। পঙ্গপালদের জীববিজ্ঞান ও আচরণ সম্পর্কে জানলে, তাদের ফসল ধ্বংসের প্রক্রিয়া বুঝতে সহজ হবে।
বিশ্বব্যাপী প্রায় ৮০টি পঙ্গপাল প্রজাতি রয়েছে, কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র কয়েকটি প্রজাতি বিশাল আকারে উপদ্রব তৈরি করতে সক্ষম। পঙ্গপাল প্রধানত দুই ধরনের হয়: একাকী এবং গণপঙ্গপাল। একাকী পঙ্গপাল সাধারণত নির্দিষ্ট এলাকায় বিচরণ করে এবং ক্ষতির পরিমাণ কম হয়। কিন্তু গণপঙ্গপাল বিশাল ঝাঁক তৈরি করে এবং প্রচণ্ড ক্ষতি করতে সক্ষম।
পঙ্গপালদের জীবনচক্র চারটি ধাপে বিভক্ত: ডিম, নিম্ফ, শুঁয়োপোকা, এবং পূর্ণাঙ্গ পঙ্গপাল। ডিম থেকে ফুটে বেরিয়ে নিম্ফ ধাপে থাকে ২-৩ সপ্তাহ, এরপর তারা শুঁয়োপোকা হয় এবং পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ পঙ্গপালে পরিণত হয়। পূর্ণাঙ্গ পঙ্গপালের আয়ুষ্কাল ৩-৫ মাস পর্যন্ত হতে পারে।
পঙ্গপাল গাছপালা, ফসল, এবং অন্যান্য সবুজ উদ্ভিদ খায়।
তারা তাদের মুখের সাহায্যে উদ্ভিদের পাতা, কান্ড, এবং ফুলের অংশ চিবিয়ে খায়।
পঙ্গপালের ঝাঁক অনেক বড় হতে পারে এবং দিনে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারে। একটি বড় ঝাঁক দিনে প্রায় ২০০০ মানুষের খাবারের সমপরিমাণ উদ্ভিদ খেয়ে ফেলে।
পঙ্গপালদের খাবারের পরিমাণ আঁতকে ওঠার এবং তারা সবুজ উদ্ভিদের সমস্ত অংশই এরা খায়। ফলে, ফসল সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায় এবং কৃষকরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হন।
পঙ্গপাল নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। তবে, এটি পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।পঙ্গপালদের শিকারী পতঙ্গ এবং পাখি তাদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক। এছাড়া, বিশেষ ধরনের ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া পঙ্গপালদের সংক্রমণ করে তাদের মেরে ফেলতে পারে।
পঙ্গপালের গতিবিধি এবং অবস্থান নিয়মিত মনিটর করা এবং আগাম সতর্কতা জারি করা প্রয়োজন। এর মাধ্যমে তাদের প্রজনন ও বিস্তারের প্রথম পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
পঙ্গপাল ফসলের প্রধান শত্রুয়। তাদের দ্রুত বিস্তার এবং প্রচণ্ড ক্ষতিকর শক্তি তাদের নিয়ন্ত্রণে কঠিন করে তোলে। তাই, বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির সমন্বিত প্রয়োগ এবং নিয়মিত মনিটরিং পঙ্গপালের উপদ্রব থেকে মুক্তির জন্য অত্যন্ত জরুরি।