ঢাকা, নিশীথ কুমার সরকার নাটোর জেলার বগাতিপাড়া উপজেলার লোকমানপুর চিথলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। বর্তমানে তিনি ফ্লাট নং জে-৫, এনএইচএ টাওয়ার, ১৬-১৭, লালমাটিয়া, বøক-বি, মোহাম্মদপুর আলিশান ফ্লাটে বসবাস করেন। অভিযোগ রয়েছে, অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পত্তি আর কালো টাকার পাহাড় গড়েছেন তিনি। ১৯৮২ সালের বিশেষ ব্যাচের একজন কর্মকর্তা হিসাবে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে ১৯.৬.১৯৮৩ তারিখে নিপায় ম্যাজিষ্ট্রেট হিসাবে প্রশিক্ষণ গ্রহনের জন্য যোগদান করেন। প্রশিক্ষণ শেষে দিনাজপুর কালেক্টরেটে সহকারী কমিশনার হিসোবে যোগদান করেন। আইডি নং ১৭৩০। তিনি মাঠ পর্যায়ে পৌরসভায়,প্রশাসনে ম্যাজিস্ট্রেট (সহকারী কমিশনার), উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট, টিএনও/ইউএনও, অ্যাড. জেলা প্রশাসক, সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইত্যাদি। নিশীথ কুমার সরকার, যুগ্মসচিব হিসাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অবসর গ্রহন করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ।
সাসিয়েশন (বিআইএ) -এ সেক্রেটারী জেনারেল হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া চাকরি জীবনের শুরু থেকেই নিশীথ কুমার সরকার ব্যাপকভাবে দুর্নীতিতে জড়িয়ে ছিলেন। তিনি যেসব জেলায় কাজ করেছেন সবখানে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসেবে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছেন। সূত্রে জানা গেছে, নিশীথ কুমার সরকার তার কর্মস্থলে ঘুষ ছাড়া একটি ছোট কাজও করেন নাই বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিশীথ কুমার সরকার যেখানেই চাকরি করেছেন সেখান থেকেই তিনি অবৈধভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। তার বিরুদ্ধে রয়েছে ঘুষ লেনদেনের অজস্র অভিযোগ। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের ভাষ্য, পৌরসভায় চাকরিকালে বিভিন্ন কাজের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, অর্থের বিনিময়ে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেওয়া, কাজ শেষ হওয়ার আগেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা করতেন নিশীথ কুমার সরকার। এসব করে তিনি বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা পেতেন।
এ ছাড়া তিনি অন্য ঠিকাদারের লাইসেন্সে নিজেই পৌরসভার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ করতেন। এভাবে তিনি অবৈধভাবে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিশীথ কুমার সরকার তার ছেলে ও মেয়েকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করানোর জন্য পাঠান। তাদের খরচ মেটানোর কথা বলে নিশীথ কুমার ব্যাংকিং চ্যানেলে মোট ৬০ লাখ টাকা পাঠানোর পাশাপাশি হুন্ডির মাধ্যমে বিপুল অর্থ সেখানে পাচার করেন। “যুক্তরাষ্ট্রেও বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক নিশীথ কুমার সরকারের পরিবারের সদস্যরা। নিশীথ কুমার তার কন্যা তন্নি সরকারকে আমেরিকার ভার্জিনিয়াতে বিলাশ বহুল বাড়ি কিনে দিয়েছেন । এতে খরচ হয়েছে লাখ লাখ ইউএস ডলার। সব মিলিয়ে বাড়িটির মালিক হতে বাংলাদেশি টাকায় ৯ কোটি টাকারও বেশি খরচ হয়েছে। ছেলে তন্ময় সরকারকে পোর্টল্যান্ড, ওরেগন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিলাশ বহুল বাড়ি কিনে দিয়েছেন। সব মিলিয়ে বাড়িটির মালিক হতে বাংলাদেশি টাকায় ১২ কোটি টাকারও বেশি খরচ হয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ বানিয়ে আইনগত ঝামেলা এড়াতে নিজের নাম এড়িয়ে স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনের নামে সম্পদগুলো গড়েছেন নিশীথ কুমার সরকার। আমেরিকাতে রয়েছে নিশীথ কুমার সরকারের স্ত্রীর বিপুল পরিমাণ সম্পদ।
আলাদিনের চেরাগের ন্যায় পাওয়া চাকরিতে নিশীথ কুমার সরকার ইতোমধ্যে ঘুরিয়েছেন নিজের ভাগ্যের চাকা। তিনি ঢাকাতে গড়েছেন পাহাড়সম সম্পদ। সাবেক যুগ্মসচিব নিশীথ কুমার সরকার এর একাধিক বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট ও প্লটের তথ্য বেরিয়ে আসছে। ঢাকা, সাভার ও ময়মনসিংহ খোঁজ মিলেছে তার একাধিক জমি ও প্লটের। তাঁর ও স্ত্রীর বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এফডিআর রয়েছে কোটি কোটি টাকা।
নিশীথ কুমার সরকারের নামে ১৫ কোটি সাত লাখ ১৫ হাজার ৭৭৯ টাকার স্থাবর সম্পদ ও পাঁচ কোটি ৮৮ লাখ ৭০ হাজার ৩১৮ টাকা অস্থাবর সম্পদসহ মোট ২০ কোটি ৯৫ লাখ ৮৬ হাজার ৯৭ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার আগে নিশীথ কুমার সরকারের অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য ছিল। কিন্তু বিগত সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে সুসম্পর্ক থাকার কারণে স্বাধীন দুদক তখন কিছু করার ‘সাহস’পায়নি। এখন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। ইতিমধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরুও হয়েছে এবং তার অবৈধ সম্পদের খোঁজে মাঠে নেমেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। অনুসন্ধানে এই যুগ্মসচিব এর বিপুল পরিমাণ সম্পদের প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। নিশীথ কুমার সরকারের বিরুদ্ধে ২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের একটি অভিযোগের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ যোগাযোগ করা হলে তাঁরা জানান যে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে এবং অভিযোগ প্রমানিত হলে মামলার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে জানতে তাঁর ঢাকার বাসায় গিয়ে জানা যায় ৫ আগষ্ট ২০২৪ আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরেই তিনি দেশ ছেড়ে আমেরিকাতে ছেলেমেয়ের কাছে চলে গিয়েছেন। এরপর তাঁর অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে মোবাইলে জানতে চাইলে নিশীথ কুমার সরকার ফোন কেটে দেন। পরে তার স্ত্রী মাধুরী সরকারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনিও ফোন কেটে দেন।