এস, এম, মনির হোসেন জীবন : বিশেষ প্রতিনিধি:
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দৃষ্টিনন্দন তৃতীয় টার্মিনাল আগামী বছর ২০২৫ ইং সালের জুন-জুলাইয়ে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হবার হম্ভাবনা রয়েছে । বিগত সরকারের অন্যতম মেগা এই প্রকল্পটির প্রায় ৯৮ ভাগ কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। এখন ও অল্প কিছু কাজ বাকি আছে।
বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, থার্ড টার্মিনালের প্রায় ৯৮ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাইরের কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন বাকি। দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে সেই কাজ। এছাড়া অপারেশনাল কার্যক্রমের জন্য এখনও অনেক কিছু বাকি রয়েছে। সেই কাজগুলো আগামী বছরের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করা হচেছ। অর্থাৎ ডিসেম্বরের মধ্যেই পুরোপুরি চালু হয়ে যাবে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের প্রায় সব কাজ সম্পন্ন হওয়ার পথে। আমরা আশা করছি আগামী বছরের জুন-জুলাইয়ের মধ্যে টার্মিনালটি চালু করতে পারবো।
‘গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং’ বিষয়ে জাইকার সঙ্গে আলোচনা চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখনও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং পরিচালনার বিষয়ে পুরোপুরি সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। জনবল নিয়োগ, তাদের প্রশিক্ষণ সর্বোপরি মহড়ার কাজ বাকি। এগুলো ওই সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন হবে। জুন-জুলাইয়ের মধ্যেই টার্মিনাল পুরোপুরি চালু হবে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এ পর্যন্ত টার্মিনালটি পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। ভবনের অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজ শেষ হলেও বিভিন্ন যন্ত্রপাতি স্থাপন, ক্যালিব্রেশন ও টেস্টিং বাকি রয়েছে। এছাড়াও টার্মিনালের পূর্বাংশের অবকাঠামোগত কাজ এখনও বাকি রয়েছে যা চলমান। সর্বোপরি টার্মিনাল পরিচালনার জন্য জাইকার সঙ্গে চুক্তি হওয়ার কথা। সেই চুক্তিই এখন পর্যন্ত হয়নি। চুক্তি হলে এই টার্মিনাল পরিচালনার জন্য প্রায় ৬ হাজার জনবলের প্রয়োজন হবে। ৪ শিফটে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা টার্মিনালটি সচল রাখতে প্রায় এই জনবল প্রয়োজন। এর মধ্যে শুধু নিরাপত্তার জন্যই লাগবে প্রায় ৪ হাজার জনবল। বিশাল এই জনবলকে প্রশিক্ষিত করতেও কিছু সময়ের প্রয়োজন।
বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন সবকিছু ঠিকঠাক করেই পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করতে।
সূত্রে জানা যায়, তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের ৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন তৃতীয় টার্মিনালের প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করার জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম দায়িত্ব পায়। তিনটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে জাপানের মিতসুবিশি করপোরেশন, ফুজিতা করপোরেশন এবং কোরিয়ার স্যামসাং সি অ্যান্ড টি। এভিয়েশন ঢাকা কনসোটিয়ামের সঙ্গে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চুক্তি হয় ২০২০ সালে ১৪ জানুয়ারি।
চুক্তি অনুযায়ী, ২০২০ সালের ৬ এপ্রিল কাজ শুরু করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। কাজ বাস্তবায়নের মেয়াদ ৪৮ মাস। চুক্তি মূল্য ২০ হাজার ৫৯৮ কোটি ৬৪ লাখ ৮৪ হাজার ৬৯৯ টাকা (সিডি ভ্যাটসহ)।
এরই মধ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সফট লঞ্চিং হয় ২০২৩ সালে ৭ অক্টোবর।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই টার্মিনালটি তিন তলা বিশিষ্ট। টার্মিনালের আয়তন ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। যাত্রী ধারণ সক্ষমতা হবে বছরে ১৬ মিলিয়ন। তৃতীয় টার্মিনালের কার পার্কিংয়ে ১২৩০টি গাড়ি রাখা যাবে। উড়োজাহাজ পার্কিং বে থাকবে ৩৭টি। আগমনী যাত্রীদের জন্য লাগেজ বেল্ট থাকবে ১৬টি। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের জন্য ১ হাজার ৩০০ বর্গটার আয়তনের একটি কাস্টম হল থাকবে। সেখানে ছয়টি চ্যানেল থাকবে। চেক ইন কাউন্টার থাকবে ১১৫টি, এর মধ্যে স্বয়ংক্রিয় ১৫টি। ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকছে ১২৮টি। এরমধ্যে স্বয়ংক্রিয় ইমিগ্রেশন কাউন্টার ১৫টি। বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টার ৬৬টি। আগমনী ইমিগ্রেশন কাউন্টার ৫৯টি। ভিভিআইপি তিনটি। বোর্ডিং ব্রিজ থাকবে প্রথম পর্যায়ে ১২টি। পরবর্তী সময়ে আরেকটি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় আরও ১৪টি বোর্ডিং ব্রিজ যুক্ত করা হবে। বর্তমান টার্মিনাল দুটি টার্মিনালের সঙ্গে তৃতীয় টার্মিনালের কোনও সংযোগ থাকবে না। তবে পরবর্তী সময়ে প্রকল্পে করিডোর নির্মাণ করা হবে।
বিমানবন্দরে এক কর্মকর্তা বলেন, নতুন টার্মিনালে ট্রানজিট যাত্রীদের জন্য একটি বড় লাউঞ্জ রয়েছে, যা বছরে ৪০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেবে। ভিআইপিদের সেবা দেওয়ার জন্য রয়েছে ৩ হাজার ৬৫০ বর্গমিটার এলাকা। এছাড়া এয়ারলাইন্স লাউঞ্জ, ডে-রুম, মুভি লাউঞ্জ, শিশুদের জন্য প্লে-জোন এবং ফুডকোর্ট যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্য এনে দেবে।
টার্মিনালটি পুরোপুরি চালু হলে যাত্রীদের নির্বিঘ্নে বিমানবন্দরে আসা-যাওয়ায় হাজিক্যাম্প থেকে উত্তরা পর্যন্ত থাকবে পাতাল রেল।