শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৫ অপরাহ্ন
এস, এম, মনির হোসেন জীবন :
রাজধানীর সর্বউত্তর ও পশ্চিমে চার থানার সীমানা নিয়ে গঠিত উত্তরা তুরাগ, শাহআলী ও মিরপুর বেরি বাঁধ সড়কটি পেশাদার
ছিনতাইকারী, ডাকাত ও অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮৮ সালে নগরবাসীরকে ভয়াবহ বন্যার কবল থেকে নগরবাসীকে বাঁচাতে বিগত সাবেক রাস্ট্রপতি হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ সরকারের শাসনামলে এই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেরি বাঁধটি তৈরি করা হয়। একসময় এ বাঁধটি ছিল অরক্ষিত এবং ছিনতাইকারী, ডাকাত ও নানাবিধ অপরাধীদের অভয়ারণ্য। মাঝেমধ্যেই অপরাধীরা এ বাঁধের দুই পাড়ে অথৈ পানি ও ঝোপঝাড়ের ভেতরে লাশ ফেলে রেখে যেত। বাঁধের ঢালে ও খালের ওপর ছিল অপরাধমূলক কার্যকলাপের বিভিন্ন আস্তানাও। আগের চেয়ে এসব অপরাধ কিছুটা কমলেও বর্তমানে এ বাঁধ যেন হয়ে উঠেছে চোরাই তেলের হাট। বাঁধের ওপর ঢাকা থেকে টঙ্গী ও আশুলিয়া- সাভার মুখী সড়কের দুই পাশে গড়ে উঠেছে সরকারি -বেসরকারি যানবাহনের চুরি করা তেল কেনার বেশ কিছু অবৈধ স্থাপনা। যেন দেখার কেউ নেই।
এলাকাবাসি ও তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, চোরাই তেলের আস্তানা হল এই রোড। প্রতি রাতে চোরাই তেলের ব্যারেল ব্যারেল তেল সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুর, টঙ্গী, উত্তরা, তুরাগ ও বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা। এই রোডে কয়েকটি চোর চক্র সক্রিয় রয়েছে। এসব অবৈধ স্থাপনায় দিনের বেলায় তেমন কোনো গাড়ি চোখে না পড়লেও সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই ভিড় জমে বিভিন্ন যানবাহনের। যার মধ্যে রয়েছে সরকারি-বেসরকারি ডাম্প ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যান, প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস। ঢাকা মহানগর পুলিশের রূপনগর ও শাহ আলী থানা পুলিশের সহায়তায় চোরাই তেল কারবারিরা অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ করেছেন বেড়িবাঁধের আশপাশের লোকালয়ের বাসিন্দারা। এছাড়া বাঁধের কিছু অংশ সাভার, আশুলিয়া ও তুরাগ থানার মধ্যে পড়েছে।
চোরাই তেল কারবারিরা বাঁধের ওপর কোথাও প্লাস্টিকের কাগজ, কোথাও কালো কাপড় আবার কোথাওবা ভাঙা টিনের বেড়া দিয়ে ছোট ছোট টং ঘর বা দোকান তৈরি করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চোরাই তেল কারবারি জানিয়েছেন, চালকদের কাছ থেকে প্রতি লিটার অকটেন তারা কেনেন ১১৫ টাকায় আর ডিজেল বা পেট্রোল কেনেন ১১০ টাকা করে। এবিষয়ে জানতে গতকাল বুধবার ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সাংবাদিকদের বলেন, এগুলো উচ্ছেদের দায়িত্ব ট্রাফিক পুলিশের ওপরও বর্তায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিরুলিয়ার এক বাসিন্দা জানান, একসময় অপরাধীরা বেড়িবাঁধে মানুষের লাশ ফেলে যেত। সেটা বন্ধ হওয়ার পর অসামাজিক কার্যকলাপের নানা ধরনের আস্তানা গড়ে তুলেছিল একশ্রেণির ব্যবসায়ী। সেটাও এখন আর দেখা যায় না। কিন্তু এখন এ বাঁধ ঘিরে গড়ে উঠেছে চোরাই তেল কেনাবেচার সিন্ডিকেট। যারা প্রতি রাতে এসব দোকান থেকে ব্যারেল ব্যারেল চোরাই তেল কম দামে কিনে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে থাকে। অনেক সময় এ তেলে ভেজালও থাকে।
ডিএমপি রূপনগর থানার ওসি বলেন, এ বাঁধে অনেক আগে চোরাই তেল কেনাবেচার আস্তানা ছিল। সেগুলো আমরা উঠিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এখন নতুন করে যদি কেউ এ ধরনের অবৈধ আস্তানা তৈরি করে তেল কেনাবেচা করে থাকে, তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশের বিরুদ্ধে মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, থানা পুলিশকে জানিয়ে কখনো কি কেউ অবৈধ কাজ করতে পারে? এটা কখনোই হতে পারে না। বাঁধের সীমানা অনেক থানা এলাকায় পড়েছে। সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের পাশাপাশি এগুলো উচ্ছেদের দায়িত্ব ট্রাফিক পুলিশের ওপরও বর্তায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মুদির দোকানেও খুচরা বিক্রির জন্য সরবরাহ করা হয় এসব ডিজেল, অকটেন ও পেট্রোল। বিভিন্ন এলাকা থেকে ভ্যান নিয়ে এসে এ তেল নিয়ে যান তারা। মুদি দোকানেও বিক্রি হয় এসব চোরাই তেল।
বেড়িবাঁধে চোরাই তেলের কারবারের বিষয়ে জানতে চাইলে রূপনগর থানার ওসি আরো বলেন, এ বাঁধে অনেক আগে চোরাই তেল কেনাবেচার আস্তানা ছিল। সেগুলো আমরা উঠিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এখন নতুন করে যদি কেউ এ ধরনের অবৈধ আস্তানা তৈরি করে তেল কেনাবেচা করে থাকে, তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশের বিরুদ্ধে মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, থানা পুলিশকে জানিয়ে কখনো কি কেউ অবৈধ কাজ করতে পারে? এটা কখনোই হতে পারে না। বাঁধের সীমানা অনেক থানা এলাকায় পড়েছে। সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের পাশাপাশি এগুলো উচ্ছেদের দায়িত্ব ট্রাফিক পুলিশের ওপরও বর্তায়।