বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৫ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ
তুরাগের বউবাজারে ফুডকোর্ট মার্কেট উচ্ছেদের প্রতিবাদে ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত  ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশ কর্তৃক ছয়টি হ্যান্ড গ্রেনেড, ম্যাগাজিন ও বিপুল পরিমাণ গুলি উদ্ধার; তিন শূন্যের ধারণার ওপর ভিত্তি করে পৃথিবী গড়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার তুরাগের বউবাজার মার্কেট উচেছদের প্রতিবাদে মানববন্ধন ট্রাম্পের সঙ্গে ‘দ্বন্দ্ব’ মিটিয়ে ফেলতে পারবেন ড. ইউনূস সেনাবাহিনী কত দিন মাঠে থাকবে’ সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে  প্যারিস-বাংলা প্রেসক্লাব ফ্রান্স’র কার্যকরি কমিটি (২০২৪-২০২৬)গঠন ১০ নভেম্বর ২০২৪ শহীদ নুর হোসেন গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের মহানায়ক : ডা. ইরান রাজধানী,তুরাগে ছেলের হাতে মা খুন অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ, ২০২৪’ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না ডয়চে ভেলেকে বলেন, 

পাচাররোধে সীমান্তে নজরদারি : ভারতে পাচার হচ্ছে স্বর্ণ : তিন মাসে ট্যাক্স আদায় হয়েছে ৩২ কোটি ১৫ লাখ টাকা

নিউজ দৈনিক ঢাকার কন্ঠ 

এস, এম, মনির হোসেন জীবন, বিশেষ সংবাদদাতা :

পাচাররোধে সীমান্তে নজরদারি : ভারতে পাচার হচ্ছে স্বর্ণ : তিন মাসে ট্যাক্স আদায় হয়েছে ৩২ কোটি ১৫ লাখ টাকা

দেশে তিন মাসে এলো প্রায় ১ হাজার কেজি সোনা : সোনা চোরাচালানের ট্রানজিট রুট বাংলাদেশ

দেশের সর্ব বৃহৎ, দৃষ্টি নন্দন এবং আধুনিক বিমানবন্দর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বেড়েছে সোনা চোরাকারবারিদের তৎপরতা। এছাড়া বিমানবন্দরসহ সোনা পাচারের ট্রানজিট রুট বাংলাদেশ। আর এই পথেই পাচার হচ্ছে সোনার ছোট বড় চালান। খবর একাধিক বিশ্বস্ত তথ্য সূত্রের।

সূত্র বলছে, গত তিন মাসের পরিসংখ্যানে ট্যাক্স পরিশোধ করে প্রায় ১ হাজার কেজি সোনা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করেছে। সব মিলিয়ে গত তিন মাসে শুধু সোনার বারের ট্যাক্স আদায় হয়েছে ৩২ কোটি ১৫ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫ টাকা।

তবে, সব চেয়ে বেশি সোনা এসেছে দুবাই, সৌদি আরব, কাতার ও কুয়েত থেকে। খবর একাধিক বিশ্বস্ত তথ্য সূত্রের।

সূত্র আরো জানায়, সোনার বার আর অলংকার মিলিয়ে গত তিন মাসে প্রায় ১ হাজার কেজির কাছাকাছি সোনা দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে।

সূত্র ও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, ট্যাক্স পরিশোধ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এই বিপুল পরিমাণ সোনা দেশে আনা হয়েছে। এর বাইরেও চোরাইভাবে কত সোনা আনা হয়েছে তার কোনও হিসাব আপাতত জানা নেই। ট্যাক্স পরিশোধ করে বৈধভাবে সোনা আনলে সোনার দাম কমতো, কিন্তু এগুলো দেশে থাকছে না, কৌশলে হাত বদলে সোনা গুলো পাচার হয়ে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত সহ অন্য সব দেশে।

বিমানবন্দরের কাস্টমসের পরিসংখ্যান বলছে, জুলাই মাসে সোনার বারের ট্যাক্স আদায় হয়েছে ১৪ কোটি ৩৭ লাখ ৩৩ হাজার ২২০ টাকা। আগস্ট মাসে ট্যাক্স হিসেবে আদায় হয়েছে ৭ কোটি ৪৩ লাখ ৬ হাজার ৪২৮ টাকা, আর গত সেপ্টেম্বর মাসে আদায় হয়েছে ১০ কোটি ৩৫ লাখ ১৯ হাজার ৪২৭ টাকা। সব মিলিয়ে গত তিন মাসে শুধু সোনার বারের ট্যাক্স আদায় হয়েছে ৩২ কোটি ১৫ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫ টাকা।

পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিটি সোনার বারের ট্যাক্স ৪০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে ৮ হাজার ৩৮টি বার এসেছে। প্রতিটি বারের ওজন ১১৭ গ্রাম। সেই হিসাবে ৯৪০ কেজির কিছু বেশি সোনা দেশে এসেছে।

এদিকে, একই সময়ে অলংকার বাবদ জুলাই মাসে ট্যাক্স হিসেবে আদায় হয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখ ৪৬ হাজার ৫৫১ টাকা, আগস্ট মাসে আসে ২৪ লাখ ২৬ হাজার ২৯৪ টাকা। সবশেষ গত সেপ্টেম্বরে আসে ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ১২০ টাকা। সব মিলিয়ে গত তিন মাসে অলংকারের ট্যাক্স আদায় হয়েছে ২ কোটি ২০ লাখ ৭১ হাজার ৯৬৫ টাকা।

বিমানবন্দর কাস্টমসের যুগ্ম-কমিশনার আল-আমিন বলেন, সোনা পাচার হয়ে যায় বলে আগে ট্যাক্সসহ ২টি সোনার বার আনার অনুমতি ছিল। সেটি কমিয়ে ১টি সোনার বার করা হয়েছে। এখন কোনও প্রবাসী বা কোনও যাত্রী যদি একটি সোনার বারের ট্যাক্স পরিশোধ করে বাইরে নিয়ে যান, এক্ষেত্রে আমাদের কোনও সমস্যা নেই।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রত্যেক যাত্রী যদি একটি করে সোনার বার নিয়ে আসেন তারা ট্যাক্স পরিশোধ করার বিষয়টি পর্যন্তই আমাদের কাজ। পরবর্তীতে তিনি ওই বার কী করলেন বা কী কাজে ব্যবহার করলেন এটা আমাদের বিবেচ্য বিষয় না। এটি দিয়ে যদি কোনও অপরাধ বা দেশের বাইরে পাচার করে বা করতে চায় সেটি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলার বাহিনী খতিয়ে দেখবেন।

বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির মুখপাত্র মাসুদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, যে পরিমাণ সোনা দেশে ঢুকছে সেগুলো দেশে থাকলে আমাদের জন্য খুব ভালো হতো, আমরা কম দামে সোনা বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু এগুলো চোরাকারবারির মাধ্যমে ভারত সহ অন্য দেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। সোনা দেশে থাকলে দামও কমতো।

জানা গেছে, সম্প্রতি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে সোনা চোরাচালানের ট্রানজিট রুট হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই রুট ব্যবহার করে স্বর্ণ ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছে। গত এক বছরে যশোর জেলার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় বর্ভার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তল্লাশি অভিযান চালিয়ে প্রায় ৭৫ কেজি অবৈধ সোনার চালান জব্দ করেছে। কিন্তএ সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা বরাবরই থাকে ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। এছাড়া দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় ঘুরাফেরা করে সোনা কারবারিরা। একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তারা কম দাম বাংলাদেশ থেকে সোনার বার ও স্বর্ণলংকার কিনে ভারতে বেশি দামে বিক্রি করছে বলে জানা যায়।

বুধবার (১৬ অক্টোবর) বিএসএফ সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে প্রায় তিন কেজির মতো স্বর্ণ তিন কৃষকের কাছ থেকে জব্দ করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ভাষ্যে মনে জব্দ হওয়া স্বর্ণের বর্তমান বাজারমূল্য ২ কোটি রুপি তথা বাংলাদেশি মুদ্রায় পৌনে ৩ কোটি টাকা। তাদের গ্রেপ্তার করে সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠিয়েছে বিএসএফ।

বিএসএফ জানিয়েছে, এসব স্বর্ণ বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতে পাচারের চেষ্টা করছিলেন ওই তিন কৃষক। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বর্ডার ফাঁড়ি ৭৩তম ব্যাটালিয়নের সদস্যরা ওই এলাকায় টহল দেওয়ার সময় দেখতে পান আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছে চাষাবাদ সেরে তিন কৃষক সাইকেল নিয়ে আসছেন। তাদের তল্লাশি করে সাইকেলের রডের ভেতর থেকে ১৫টি সোনার বিস্কুট এবং ৮টি সোনার টুকরা উদ্ধার করে। জব্দ হওয়া স্বর্ণের ওজন ২ দশমিক ৭৫ কেজি। তিন কৃষকের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারা জানান, রাজশাহীর বুধপাড়া গ্রামের কয়েকজন অজ্ঞাত বাংলাদেশির কাছ থেকে স্বর্ণগুলো সংগ্রহ করেন তারা। করতে

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চোরাকারবারিরা সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া এমনকি সিঙ্গাপুর থেকে সোনার চালানগুলো দেশের তিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর শাহজালাল, শাহ আমানত ও ওসমানী হয়ে দেশে নিয়ে আসে। পরে অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে সেগুলো বাইরে নিয়ে আসা হয়। এরপর সেগুলো বেনাপোল ও ভোমরা, ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত হয়ে ভারতে চলে যায়।
এ ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ভারতে এখন অলংকার প্রস্তুতকারী ছাড়া কেউ সোনা আমদানি করতে পারে না। অথচ ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে তা শুধু গয়না প্রস্তুতকারীদের পক্ষে আমদানি করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা মেটাতে চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশ হয়ে ভারতে প্রবেশ করছে। পাশাপাশি মাদকের দাম মেটাতেও সোনা ব্যবহার করা হয়।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দফতরের উপমহাপরিচালক কর্নেল মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সোনাসহ যেকোনও চোরাচালানের বিরুদ্ধে বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। বিশেষ করে চোরাচালান রোধে আমাদের সীমান্তগুলোতে নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা নিয়ে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। আগামীতে কঠোর নজরধারীসহ সহ সাঁড়াশী অভিযান চালানো হবে, এবিষয়ে কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবে না বলে হুশিয়ারি দেন তিনি।

Please Share This Post in Your Social Media

দৈনিক ঢাকার কন্ঠ
© All rights reserved © 2012 ThemesBazar.Com
Design & Developed BY Hostitbd.Com