বাংলাদেশর কাছে বর্তমানে আদানি পাওয়ার-এর কাছে বাংলাদেশ প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া রেখেছে। এর আগে আদানি ৩১ অক্টোবরের মধ্যে এই পাওনা পরিশোধ এবং ১৭০ মিলিয়ন ডলারের একটি লেটার অফ ক্রেডিট (এলসি) জমা দেওয়ার শর্ত দেয়।
পাওনা পরিশোধ না হওয়ায় বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের সময় বেঁধে দিয়েছে ভারতের আদানি পাওয়ার। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগামী ৭ নভেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ এ বিষয়ে পরিষ্কারভাবে তাদের সিদ্ধান্ত না জানালে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করবে আদানি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে আদানি পাওয়ার-এর কাছে বাংলাদেশ প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া রেখেছে। এর আগে আদানি ৩১ অক্টোবরের মধ্যে এই পাওনা পরিশোধ এবং ১৭০ মিলিয়ন ডলারের একটি লেটার অফ ক্রেডিট (এলসি) জমা দেওয়ার শর্ত দেয়। তবে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি জারি করতে চাইলেও তা পাওয়ার চুক্তির শর্ত পূরণ করেনি বলে সূত্র জানিয়েছে। ডলার সংকটকেও এর একটি কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে করে আদানি পাওয়ার ঝাড়খন্ড ৩১ অক্টোবর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দেয়, যা বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সংকটকে আরও বাড়িয়ে তোলে। পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের (পিজিবি) ওয়েবসাইটে শুক্রবার প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ঝাড়খন্ডের গড্ডা প্ল্যান্ট ১,৪৯৬ মেগাওয়াট স্থাপনক্ষমতার বিপরীতে ৭২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে। আদানি পাওয়ার ঝাড়খন্ড বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী; এর পরের স্থানে রয়েছে পায়রা (১,২৪৪ মেগাওয়াট), রামপাল (১,২৩৪ মেগাওয়াট) এবং এসএস পাওয়ার আই (১,২২৪ মেগাওয়াট) প্ল্যান্ট।
ঝাড়খন্ডের প্ল্যান্ট প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ১০-১২ টাকা (৭-৮.৫০ রুপি) দরে সরবরাহ করছে, যার খরচ ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার কয়লার মূল্যের ওপর নির্ভরশীল।
২০২৩- ২৪ অর্থবছরের সর্বশেষ অডিট রিপোর্টের বরাত দিয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) এক কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, এই দাম ভারতের অন্যান্য বেসরকারি উৎপাদনকারীদের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি, আর ভারতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর তুলনায় ৬৩ শতাংশ বেশি।
চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে আদানি পাওয়ারের পাশাপাশি আরও কয়েকটি ভারতীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রায় ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনছে।
এদিকে, কয়লা সংকটের কারণে বাগেরহাটে অবস্থিত এনটিপিসি যৌথ উদ্যোগের বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাওয়ার কোম্পানির রামপাল প্ল্যান্ট এবং এসএস পাওয়ার আই প্ল্যান্ট অর্ধেকেরও কম ক্ষমতায় পরিচালিত হচ্ছে বলে পিজিবির দৈনিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
শিল্প সূত্রে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, কয়েকটি বিদ্যুৎ ইউনিট জ্বালানি কেনা কমিয়েছে কারণ সংকটে থাকা বাংলাদেশ সময়মতো অর্থ প্রদান করতে পারছে না। ফলে, বকেয়ার পরিমাণ বেড়েছে।
অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ থেকে আদানিকে প্রায় ৯০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছিল। এর আগের মাসগুলোতে মাসিক বিল ৯০ থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার হলেও বাংলাদেশ মাত্র ২০ থেকে ৫০ মিলিয়নের মতো অর্থ পরিশোধ করত।
বিষয়টি নিয়ে আদানি কোনো মন্তব্য করেনি, তবে সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা সমাধানের বিষয়ে আশাবাদী ছিলেন। তবে বকেয়া পরিশোধে দেরি এবং বিশেষ করে স্বচ্ছতার অভাবই আদানিকে এই কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে প্ররোচিত করেছে।
যদিও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের সিদ্ধান্ত গড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রের টিকে থাকার ওপরও প্রভাব ফেলবে, কারণ বাংলাদেশই তাদের একমাত্র ক্রেতা। আদানি পাওয়ার ঝাড়খন্ডকে তার দুইটি ৮০০ মেগাওয়াট ইউনিটের মধ্যে একটি ইউনিট বন্ধ রাখতে হচ্ছে। মাসিক ৯০-১০০ মিলিয়ন ডলার হলে, সে হিসেবে কোম্পানির বার্ষিক আয় প্রায় ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার (৯ হাজার কোটি রুপি) হতে পারে।
এদিকে, শেখ হাসিনা সরকারের বিদায়ের পর, আদানি বাংলাদেশের পরিবর্তে ভারতের বিদ্যুৎ বাজারের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে। ভারতে বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং অর্থপ্রদান নিশ্চিত থাকায় আদানি এটিকে নতুন সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করছে। প্রতিষ্ঠানটিকে বিহারের লখিসরাইয়ের একটি সাবস্টেশন থেকে স্থানীয় গ্রিডে সংযোগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।