মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান যুদ্ধে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার সীমান্তের পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করছে- এমন খবর আসার পর বাংলাদেশ সরকারের দিক থেকে আরাকান আর্মির সাথে যোগাযোগের উদ্যোগের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি–সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি ডঃ খলিলুর রহমান রোহিঙ্গা সংকট ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে শুক্রবার ঢাকায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তৃতায় এ ইঙ্গিত দিয়েছেন।
মি. রহমান আজ শনিবার বলেছেন, আরাকানের পরিস্থিতি তারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী আরাকান আর্মির সাথে যোগাযোগ করা হবে কি না তা নিয়ে 'সুচিন্তিত' পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
মিয়ানমার বিষয়ক গবেষক ও লেখক আলতাফ পারভেজ বলছেন, আরাকানে এখন যে পরিস্থিতি তাতে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা ও বাণিজ্যের স্বার্থে আরাকান আর্মির সাথে যোগাযোগ জরুরি হয়ে পড়েছে।
সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যমে একটি খবর ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে বলা হচ্ছে যে, আরাকান আর্মি বাংলাদেশের ২২৭ কিলোমিটার ভূমি দখল করে নিয়েছে। তারপরই এই তথ্যটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে । এ নিয়ে বেশ কিছু স্থানীয় সংবাদমাধ্যমেও সংবাদ প্রকাশিত হয়। তবে, তথ্য যাচাই সংস্থা ফ্যাক্টওয়াচ এ খবরকে মিথ্যা বলে চিহ্নিত করেছে।
ফ্যাক্টওয়াচের প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৪ ডিসেম্বর এক বিবৃতিতে তারা জানায় যে, আসলে আরাকান আর্মি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের প্রায় ৩০০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে তাদের কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, আরাকান আর্মি বাংলাদেশের সীমানায় এসে কোনো ভূমি দখল করেনি।
সংস্থাটি আরও উল্লেখ করেছে যে, মিয়ানমার বা আরাকান আর্মি বাংলাদেশের সীমান্তে কোনও অবৈধ দখল বা অনুপ্রবেশ ঘটায়নি। বরং মিয়ানমারে সংঘটিত লড়াইয়ের কারণে বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি কিছু এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এই পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ সীমান্তে সতর্কতা বজায় রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলি বিশেষ করে বিবিসি বাংলা ও মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতি, এ বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান করেছে এবং তথ্য নিশ্চিত করেছে যে, আরাকান আর্মি মংডু শহরসহ কিছু এলাকা দখল করেছে। তবে বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানায় কোনো দখল বা পরিবর্তন ঘটেনি। এর ফলে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলেও, এটি কোনো ভূমি দখলের ঘটনা নয়।
ফ্যাক্টওয়াচের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভূমি দখল সম্পর্কিত খবর সঠিক নয় এবং এ ধরনের ভুল তথ্য মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে, তাই এসব মিথ্যা খবরকে উপেক্ষা করা উচিত।