বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১১ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ
তুরাগের বউবাজারে ফুডকোর্ট মার্কেট উচ্ছেদের প্রতিবাদে ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত  ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশ কর্তৃক ছয়টি হ্যান্ড গ্রেনেড, ম্যাগাজিন ও বিপুল পরিমাণ গুলি উদ্ধার; তিন শূন্যের ধারণার ওপর ভিত্তি করে পৃথিবী গড়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার তুরাগের বউবাজার মার্কেট উচেছদের প্রতিবাদে মানববন্ধন ট্রাম্পের সঙ্গে ‘দ্বন্দ্ব’ মিটিয়ে ফেলতে পারবেন ড. ইউনূস সেনাবাহিনী কত দিন মাঠে থাকবে’ সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে  প্যারিস-বাংলা প্রেসক্লাব ফ্রান্স’র কার্যকরি কমিটি (২০২৪-২০২৬)গঠন ১০ নভেম্বর ২০২৪ শহীদ নুর হোসেন গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের মহানায়ক : ডা. ইরান রাজধানী,তুরাগে ছেলের হাতে মা খুন অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ, ২০২৪’ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না ডয়চে ভেলেকে বলেন, 

নেত্রকোনার কমলা রাণী দীঘির কাহিনী ও অনেক প্রাচীন যুগের রহস্যময় ঘেরা ইতিহাস ঐতিহ্য

নিউজ দৈনিক ঢাকার কন্ঠ 

সোহেল খান দূর্জয় নেত্রকোনা :

নেত্রকোনার  তারিখ ১২.০৩.২০২৩ ইং  দুর্গাপুরের কমলা রাণী দীঘির কাহিনী অনেক প্রাচীন যুগের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। জনশ্র“তি আছে সুসং দুর্গাপুরের রানী কমলা খটখটে শুকনো দীঘির মাঝখানে গিয়ে পূজা দেয়ার সময় বজ্রপাতে দীঘির তলার মাটি ফেটে পানিতে ভরে যায়।

এতে সলিল সমাধি হয় রানীর। কালের আবর্তনে আজ ধ্বংস হয়ে গেছে সেই কমলা রাণীর দীঘি। কথিত আছে, ১৫ শতকের শেষ দিকে সুসং দুর্গাপুরের রাজা জানকী নাথ বিয়ে করেন কমলা দেবীকে। ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম ভাগে প্রজাদের পানির অভাব মিটানোর জন্য একটি বিশাল দীঘি খনন করেন তিনি।খনন করা হলেও দীঘিতে পানি ওঠে না। রানী কমলা দেবী স্বপ্নে দেখেন, তিনি যদি দীঘির মাঝ খানে গিয়ে পূজা দেন তাহলেই দীঘি পানিতে ভরে উঠবে। স্বপ্নাদেশ পেয়ে রানী পুকুরের মাঝখানে গিয়ে পূজায় বসলেন। হঠাৎ বজ্রপাতে দীঘির তলার মাঠি ফেটে পানি উঠতে লাগলো। পানিতে কানায় কানায় ভরে উঠল দীঘি। সলিল সমাধি হলো কমলা রানীর।

বর্তমানে এই দীঘির মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে সোমেশ্বরী নদী। কালের সাক্ষী হয়ে থেকে গেছে পুকুরের দক্ষিণ-পশ্চিম পাড়। কিছু অংশে রয়েছে ফসলী জমি আর পাড়গুলোতে গড়ে উঠেছে বসতভিটা।ঐতিহ্যবাহী দীঘিটি সংরক্ষণের দাবী জানিয়েছেন দীর্ঘ দিন ধরে এলাকাবাসী।

দীঘি সংরক্ষণে উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস দিলেন নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী।

ঐতিহ্য সংরক্ষণের মাধ্যমে বাংলার মানুষের আত্মদানের ইতিহাস প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে যাবে- এমনটাই চাওয়া দীর্ঘ দিন ধরে এলাকাবাসীর।

কমলা–যৌবনাগমে

দেখিতে সুন্দরী কন্যা পরথম যৌবন

কিঞ্চিত করিব তার রূপের বর্ণন

চান্দের সমান মুখ করে ঝলমল

সিন্দুরে রাঙ্গিয়া ঠুট তেলাকুচ ফল

জিনিয়া অপরাজিতা শোভে দুই আখি

ভ্রমরা উড়িয়া আসে সেই রূপ দেখি

দেখিতে রামের ধনু কন্যার যুগল ভুরু

মুষ্টিতে ধরিতে পারি কটিখানা সরু

কাকুনি সুপারি গাছ বায়ে যেন হেলে

চলিতে ফিরিতে কন্যা যৌবন পরে ঢলে

আষাঢ় মাস্যা বাশের কেরুল মাটি ফাট্যা

উঠে সেই মত পাও দুইখানি গজন্দমে হাটে

বেলাইনে বেলিয়া তুলিছে দুই বাহুলতা

কণ্ঠেতে লুকাইয়া তার কোকিলে কয়

কথা শ্রাবণ মাসেতে যেন কাল মেঘ সাজে

দাগল-দীঘল কেশ বায়েতে বিরাজে কখন

খোপা বান্ধে কন্যা কখন বান্দে বেণী

কূপে রঙ্গে সাজে কন্যা মদনমোহিনী

অগ্নি-পাটের শাড়ী কন্যা যখন নাকি পরে

স্বর্গের তারা লাজ পায় দেখিয়া কন্যারে

আযাইঢ়া জোয়ারে জল যৌবন দেখিলে

পুরুষ দূরের কথা নারী যায় ভুলে।

 

আমি কদিন আগে রামসাগর দিঘি নিয়ে একটা পোস্ট লিখেছিলাম। আজকের লেখার বিষয় হচ্ছে কমলা রানী দিঘি। এদেশের বড় এবং বিখ্যাত প্রায় সব দিঘি নিয়েই কোন না কোন কিংবদন্তীর প্রচলন রয়েছে। গল্প গুলোর ভেতরে সাদৃশ্য বিদ্যমান। একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই ধরনের গল্প সেগুলো। এই কমলা রানীর দিঘি নিয়েও সেই রকম কিছু গল্প চালু রয়েছে দীর্ঘ দিনের।কমলা রানীর দিঘি নিয়ে লেখার আগে ভাবলাম আগে একটু এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে এটার ব্যাপারে সাধারণ কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। কিন্তু জানতে পারলাম এই কমলা রানী দিঘি নিয়ে নানা রকম তথ্য বিদ্যমান রয়েছে। তবে সব স্থানেই একটা এই দিঘির পেছনের গল্পটা প্রায় একই রকম।

 

আগে সেই কিংবদন্তির বিষয়ে জানা যায়, সময়টা ষোলশ শতক, রাজনগরের প্রজাবৎসল রাজা সুবিধ নারায়ন। স্ত্রী সন্তান নিয়ে সে তার রাজ্য সুখেই বসবাস করছে,একদিন দেবী তাকে স্বপ্নে আদেশ দিলেন যে সে যেন তার রাজ্যে ১২ একর, ১২ বিঘা, ১২ পোয়া ১২ ছটাক জায়গা নিয়ে একটা বড় দিঘি খনন করেন। এবং সাথে সাথে এও বলে দিলেন যে দিঘি খনন কাজে যে লোকটা প্রথম সেখানে কোদাল মারবে রাজা যেন তাকে সোনার হার উপহার দেন, রাজা দেবীর আদেশ অনুযায়ী কাজ শুরু করে দিলেন।স্বপ্নে দেবী যা যা করতে বললেন তাই করলেন। কিন্তু দিঘি কাটার পরেও দিঘিতে কোন পানি দেখা পাওয়া গেল না। রাজা খানিকটা চিন্তি্ত বোধ করলেন। তার মনে হতে লাগলো যে দেবী তাকে যেভাবে যেভাবে কাজ করতে বলেছিলেন তিনি হয়তো ঠিক মত সেই কাজ করেন নি। এর কয়েকদিন পরে দেবী আবারও রাজার স্বপ্নে এসে হাজির হলেন। এবার দেবী তাকে বললেন দিঘিতে পানি উঠানোর জন্য রাজাকে কী কাজ করতে হবে। দেবীর কথা শুনে রাজা সুবিধ নারায়ন চমকে উঠলেন। দেবী তাকে বললেন যদি রাজ্যের রানী পুকুরে নেমে গঙ্গা দেবীর পুজা করেন তাহলেই দিঘিতে পানি দেখা মিলবে। রাজা এই কথা কোন ভাবেই রানীকে বলতে পারলেন না। তবে এক সময়ে রানী নিজেই রাজাকে জিজ্ঞেস করলেন।রাজা তখন রানীর স্বপ্নের কথা রানীকে জানালো। রানী হাসি মুখেই সেই শর্ত মেনে নিলেন। রানী নির্ধারিত দিনে স্বামী সন্তান আর প্রজাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দিঘিতে পা রাখলেন।রানীর পা রাখার সাথে সাথেই পানি উঠতে শুরু করলো। তারপর যখন পানির পায়ের গোড়ালী ডুবে গেল তখন চারিদিক দিয়ে পানি ওঠা শুরু করলো এবং এক সময়ে রানী পানির নিচে চলে গেলেন। প্রাণপ্রিয় রানীকে হারিয়ে রাজা তখন পাগল প্রায়। নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে ঘরে নিজেকে বন্দী করে রাখলেন। রাজ্য পরিচালনার কাজে তার মন নেই। এমন এক সময়ে রানী রাজার স্বপ্নে এলেন। এবং তাকে বললেন যে প্রতিদিন সূর্যদোয়ের সময় রাজা যেন তার সন্তানদের নিয়ে সেই পুকুর ঘাটে আসে। রানী তার সন্তানদের দুধ পান করাবে। কিন্তু রাজা যেন কোন ভাবেই রানীকে স্পর্ষ না করে। এই ভাবে যদি ১২ বছর পার করতে পারেন তাহলেই রাজা আবার রানীকে ফেরৎ পাবে।রাজা রানীর কথা মত প্রতিদিন সূর্যদোয়ের সময়ে তার সন্তানদের নিয়ে ঘাটে গিয়ে হাজির হত। দুর থেকে দেখতেন রানী তার সন্তানদের যত্ন নিয়ে দুধ খাওয়াচ্ছে। রাজা কাছে যেতে চাইতেন কিন্তু রানীর সাবধান বানী মনে করে আবার ফিরে আসতেন। কিন্তু একদিন আর নিজেকে সংবরন করতে পারলেন না। তিনি রানীকে স্পর্শ করে ফেললেন। এই ঘটনার সাথে সাথে রানী চিৎকার দিয়ে পানিতে ঝাঁপ দিলেন এবং পানির নিচে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। তারপর রানীকে আর কোনদিন দেখা যায় নি। এই ঘটনার পরে এক সময়ে আস্তে আস্তে রাজার সকল সন্তানেরা মারা গেলেন। রাজা নিজেও এক সময় মারা গেলেন। সুবিধ নারায়নের বংশ শেষ হয়ে গেল। মোটামুটি কমলা রানীর দিঘির পেছনের গল্পটা এটা। এই দিঘিটা অবস্থিত নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার বিরিশিরি ইউনিয়নে। কমলা রানী দিঘির অবস্থান হচ্ছে নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার বিরিশিরি ইউনিয়নে। তবে রাজার নাম ছিল জানকি নাথ। এবং এই রাজার একটা মাত্র সন্তান ছিল। যার নাম রঘুনাথ।একই রকম ভাবে পুকুর কাটা হয় কিন্তু সেখানে পানি উঠে না। রানী সেই পুকুরে নামে তারপর পানি ওঠে। একসময় এই কমলা রানী দিঘির কিংবদন্তীকে কেন্দ্র করে আমাদের পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের একটা লেখা আছে। তিনি লিখেছেন ধীরে ধীরে রাণী দাঁড়াইল আসি সাগর দীঘির মাঝে,লক্ষ লক্ষ কাঁদে নরনারী শুকনো তটের কাছে।পাতাল হইতে শতধারা মেলি নাচিয়া আসিল জল,রাণীর দুখান চরণে পড়িয়া হেসে ওঠে খল খল। কবি দ্বিজ কানাই রচিত ময়মনসিংহ গীতিকায় থাকা ‘কমলা’ পালাটিতে ১৭ টি অঙ্কে মোট ১৩২০ টি ছত্র রয়েছে। কমলা পালাতে প্রিয়তমা স্ত্রীর শখ পূরণ করতে রাজা জানকিনাথ মল্লিক তার স্ত্রীর নামে ‘কমলা সায়র’ দীঘি খনন করেছিলেন। কিন্তু দৈব ক্রমে দীঘিতে জল উঠলনা। এ কারণে রাজার পুর্ব পুরুষেরা নরক প্রাপ্ত হতে পারে বলে রাজা চিন্তিত হলে রানী কমলা স্বামীকে উদ্ধার করতে এগিয়ে এলেন। তিনি তার দুগ্ধপুষ্যা শিশুকে দাসিদের হাতে সমর্পন করে সদ্য খোঁড়া দীঘিতে নিজকে উৎসর্গ করে চিরতরে হারিয়ে গেলেন। রাজা শোকে পাথর হয়ে কিছু দিনের মধ্যে মৃত্যুবরন করেন। এই বিয়োগান্ত।কাহিনী নিয়ে রচিত হয়েছে ‘কমলা‌’রাণীর পালা। ময়মনসিংহ গীতিকার ভুমিকায় বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা আলোচনা করে ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেন ধারণা করেছেন এই কাহিনীর মুল ঘটনা সত্য। ময়মনসিংহ গীতিকার আরেক কবি দ্বিজ কানাই কমলার যৌবনা গমনের কথা লিখেছেন সুন্দর করে।

Please Share This Post in Your Social Media

দৈনিক ঢাকার কন্ঠ
© All rights reserved © 2012 ThemesBazar.Com
Design & Developed BY Hostitbd.Com