নেত্রকোনায় বন্যা পরিস্থিতির ০৬.০৪.২০২৩ ইং উন্নতি হলেও স্বাভাবিক হয়নি ধনু নদীর বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে মানুষের চলাচল ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। আর যখন চারদিকে বন্যার পানিতে অজস্র রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়, তখন নৌকা ও কলাগাছের ভেলা হয়ে উঠে ধনু নদীর চরাঞ্চলের মানুষের পারাপারের একমাত্র ভরসা। এ কারণেই নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরী,সহ বেশ কয়েকটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। কারিগরদের পাশাপাশি পুরনো নৌকা গুলো মেরামতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন অঞ্চলের নৌকার মাঝিরাও।
বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) সরেজমিনে জেলার খালিয়াজুরী ও মদন, মোহনগঞ্জ এবং বারহাট্টা উপজেলার বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নৌকার কারিগররা ছোট-বড় নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কারিগররা তাদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় এসব নৌকা তৈরি করেছেন। এসময় দেখা গেছে, কেউ করাত দিয়ে কাঠ কাটছেন, কেউ হাতুড়ি দিয়ে পেরেক মারছেন আবার কেউ তৈরি নৌকায় গাবের পানি, রং ও আলকাতরা দিতে ব্যস্ত রয়েছেন। বারহাট্টা উপজেলার নৌকার কারিগর মোঃ নয়ন বেপারী বলেন, ‘আমি ঘর তৈরির পাশাপাশি নৌকা বানানোর কাজ করি। বর্ষা মৌসুমে সাধারণত আমাদের কোন কাজ থাকে না, এখন নৌকার বাড়তি চাহিদা থাকায় নৌকার কাজ করছি। সেই সাথে বাড়তি আয়ও হচ্ছে আমাদের।
তিনি আরও বলেন, ‘একজনের একটি ছোট নৌকা তৈরি করতে দুইদিন সময় লাগে। আর প্রতিটি নৌকার মজুরি দেওয়া হয় ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। আর একটি বড় নৌকা তৈরিতে সময় লাগে ১৫ দিন থেকে ১ মাস। একটি ৭০ হাত নৌকা বানাতে খরচ পড়ে প্রায় ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। নৌকার কাজ করে আমাদের সংসার ভালোই চলছে। খালিয়াজুরী উপজেলার নৌকার কারিগর আমিনুল বলেন, চাকুয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, তিনি এই অঞ্চলের মানুষের মাঝে নৌকা গুলো বিতরণের জন্য তৈরি করছেন বলে শুনেছি। এই অঞ্চলের মানুষের নৌকার চাহিদা থাকায় আমাদের নৌকা তৈরির কাজ বেড়েছে।
মদন উপজেলার নৌকার কারিগর সেলিম বলেন, ‘নৌকার কাজ না থাকলে হয়তো এই সময় আমাদের বসে থাকতে হতো। নৌকা বিক্রিও মোটামুটি ভালো। সেই সাথে আমাদের ইনকাম-সোর্সও ভালো হচ্ছে এখন। কেন্দুয়া উপজেলার কাঠ ব্যবসায়ী সাহেবুদ্দিন বলেন, ‘নৌকার এখনও চাহিদা আছে। প্রতিটি ছোট নৌকা ৬ থেকে ৭ হাজার টাকায় বিক্রি করছি। আজ একটি বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার টাকায়। আমার কাছে এখনো ছোট ছোট বেশ কয়েকটি নৌকা রয়েছে।
জেলার বিভিন্ন নদী ও বিলে পানি বাড়ছে। বর্ষার আগমনকে ঘিরে জেলার নৌকার কারিগরদের মহাব্যস্ততা, বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় তৈরী হচ্ছে নৌকা। পানি আরেকটু বেশি হলে আরো কদর বাড়বে এসব নৌকার। তাই বসে নেই নৌকা তৈরীর কারিগররা।
চলছে নৌকা তৈরী ও মেরামতের ধুম। গ্রাম এলাকায় মৌসুমি ডিঙ্গি নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে মাঝি ও কারিগররা। নৌকা তৈরির এমন দৃশ্য চোখে পরবে, নেত্রকোনার বিভিন্ন বাজার ও গ্রামে। জেলার বিভিন্ন বিলে মাছ ধরা, এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করা হয় নৌকা। নদীতে নতুন পানি আসার সাথে সাথে বিল অঞ্চলে ধুম পড়েছে, নতুন নৌকা বানানোর তোর-জোর। নৌকার পাশাপাশি জেলে সম্প্রদায়ের লোকেরা এখন ব্যাস্ত সময় পার করছে জাল বুনানোর কাজে। নতুন নৌকা আর জাল দিয়ে মাছ ধরতে নামবেন জেলেরা। তাই তো নৌকায় যেন জেলেদের আশা আকাঙ্ক্ষা আর সংসার চালানোর একমাত্র হাতিয়ার।
মোহনগঞ্জ উপজেলার দেওতান গ্রামের নৌকা তৈরির কারিগর জয়নাল বলেন, এখন ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে, জেলেদের মাছ ধরার নৌকা বানানোর কাজে। চাহিদা মোতাবেক ছোট, বড় বিভিন্ন রকম নৌকা বানানো হয়। নৌকা গুলো আকার ভেদে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। লেপসিয়া বাজারের শ্রী শংকর সুত্রধর বলেন, আমি ছোট থেকেই নৌকা তৈরির কাছে জড়িত। আগে ভালো ভালো কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরি করা হতো। এখন শিমুল, আম, কড়ই, বাবলা দিয়েই বেশি নৌকা তৈরি করা হয়। নৌকা তৈরিতে কাঠ ছাড়াও মাটিয়া তৈল, আলকাতরা, তারকাঁটা, গজাল, পাতাম ইত্যাদি লাগে, যা নৌকাকে দীর্ঘদিন টেকসই রাখে।