সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩১ পূর্বাহ্ন
সেলিম মাহবুব, ছাতকঃ
সুনামগঞ্জের ছাতকে হাওরে-হাওরে অনেক আনন্দে শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটার মহোৎসব। এখানের সকল হাওর এলাকায় বোরো ধান কাটা, মাড়াই-ঝাড়াইয়ের উৎসবে মেতে উঠেছেন কৃষক ও কৃষাণীরা।
ছাতকের সকল বিল-হাওরে পাকা সোনালী বোরো ধান যেন এখন বাতাসে দোল খাচ্ছে।বোরো ধানের ফলন ভালো হওয়ায় উপজেলার সর্বত্রই কৃষকদের মুখে হাসির ঝিলিক। চলতি মৌসুমে ছাতকে বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। এ পর্যন্ত বন্যা-বৃষ্টি না থাকায় বোরো ধান কাটা, মাড়াইয়ের সুবিধা পেয়েছেন তারা।
গত কয়েক বছর ধরে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে আগাম জাতের বোরো ধান চাষাবাদ হওয়ায় ফলে কিছু-কিছু এলাকার পাকা ধান আগে-ভাগেই কাটা শুরু হয়। ক’দিন ধরে এখানে পুরোদমে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে আর কৃষক-কিষাণীরা ধান কাটা, মাড়াই-ঝাড়াই নিয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। ছাতক উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ছোট-বড় বিল-হাওর রয়েছে ৬৩ টি। চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় বোরো চাষাবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ৮শ ৩২ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উপসী জাতের ১২ হাজার ৭৩০হেক্টর, হাইব্রিড জাতের ২ হাজার ২২হেক্টর ও স্থানীয় জাতের বোরো ধান ৮০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে।
উপজেলার নাইন্দার হাওর সহ সরেজমিনে কয়েকটি হাওর ঘুরে দেখা গেছে ধান কাটার যেন এক মনোরম দৃশ্য। হাওরে বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত কৃষকরা।
পাশপাশি কিষাণীরা ধান ঝাড়াই করে শুকিয়ে গোলায় তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। হাওরে ধানের খলায় কাজ করছেন কৃষক-শ্রমিক, নারী ও শিশুরা। কোনো কোনো হাওরে ধান কাটা, মাড়াই চলছে মেশিনের মাধ্যমে। আবার কোনো এলাকায় শ্রমিকরা ধান কাটছে, মাড়াই-ঝাড়াই করছেন সনাতন পদ্ধতিতে।
কৃষক-শ্রমিকরা কেউ ক্ষেত থেকে ধান কেটে খলায় টানছে, কেউ রোদে ধান শুকানোর কাজ করছে, কেউ মেশিন দিয়ে ধান কাটা-মাড়াই এবং কেউ -কেউ সনাতন পদ্ধতিতে ধান মাড়াই-ঝাড়াইর কাজে করছেন।
স্থানীয় একাধিক কৃষকরা জানান, বোরো ধান কাটা শুরু হওয়ার আগে বা পর থেকে এখানে কোনো শিলাবৃষ্টি হয়নি। জলাবদ্ধতায় কিছু ফসলের ক্ষতি হলেও এবার বোরোর ফলন ভালো হয়েছে। নোয়ারাই ইউনিয়নের কৃষক মনির উদ্দিন জানান, উপজেলার সবচেয়ে বড় নাইন্দার হাওরের অনেক ফসল জলাবদ্ধতায় নষ্ট হয়ে গেছে। মির্জার খালে অপরিকল্পিত বা্ঁধ নির্মাণের ফলে জলাবদ্ধতায় হাওরের ফসল নষ্ট হয়েছে।
কালারুকা ইউনিয়নের কৃষক আব্দুস সত্তার ও আব্দুল আউয়াল জানান, তাদের ৯ বিঘা জমিতে বোরো চাষাবাদ করা হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। কৃষক তৈমুছ আলী,আরশ আলী, আজাদ মিয়া, চান মিয়া, মোশাহিদ আলী, মানিক মিয়া,হারুনুর রশিদ, জানান, ছাতকে অতিবৃষ্টি বা খরায় এ মৌসুমে বোরো ফসলের কোনো ক্ষতি হয়নি। প্রকৃতি অনুকুলে থাকলে স্বপ্নের সোনালী ফসল তারা যথাসময়ে গোলায় তুলতে পারবে বলে আশাবাদী।
ছাতক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তৌফিক হোসেন খাঁন জানান, চলতি মৌসুমে ছাতকে বোরো ধানের ফলন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। দু্’সপ্তাহ আগ থেকেই ধান কেটে নিতে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। এখানে আগাম জাতের কিছু বোরো ধান কাটা শেষ হলেও বিল-হাওরে পুরোদমে ধান কাটা চলছে। এক সপ্তাহ বা ১০ দিনের মধ্যে এখানের বোরো ধান
কাটা শেষ হয়ে যাবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরের জামান চৌধূরী জানান, উপজেলার নাইন্দার হাওর, ফাটার হাওর সহ বড়-বড় হাওরগুলোর পাকা বোরো ধান প্রায় অর্ধেক কাটা সম্পন্ন হয়েছে। দ্রুত ধান কাটার জন্য কৃষকদের আগ থেকেই পরামর্শ দেয়া হয়েছে। শ্রমিক সংকটের কারণে চলতি মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কৃষকের মাঝে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে বিভিন্ন সময়ে ভর্তুকি মূল্যে ৪৩ টি কম্বাইন হারভেস্টার (ধান কাটার মেশিন) দেয়া হয়েছে। কৃষকদেরকে দ্রুত বোরো ধান কেটে গোলায় তুলতে বলা হয়েছে।