বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪০ অপরাহ্ন
হাসান আলী সোহেল নাটোর প্রতিনিধি
নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার মির্জাপুর তারিখঃ ১৯-৭-২৩ ইং দিয়ারপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেঞ্চ ও টিনসহ বিধি বহিভূর্তভাবে বিক্রি করার চেষ্টা করছিলেন প্রধান শিক্ষিকা রোকেয়া খাতুন।এসময় বাধা দিয়েছেন এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা।পরে উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ে অভিযোগ দিলে মালামাল বিক্রি স্থগিত করা হয়।উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মৌখিক নির্দেশনায় এসব পুরানো মালামাল বিক্রি করার চেষ্টা করেছিলাম বলে দাবী প্রধান শিক্ষিকার,আর বিদ্যালয়ের মালামাল নিয়ম ভেঙ্গে বিক্রির নির্দেশনা দেওয়ার বিষয় স্বীকার করেছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, সোমবার উপজেলার মির্জাপুরদিয়ারপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরানো ১১ টি লোহার বেঞ্চ, ৩০ টিনসহ বিধি বহিভূর্তভাবে ভাঙ্গারী দোকানে বিক্রি করছিলেন প্রধান শিক্ষিকা রোকেয়া খাতুন। এ সময় বিপ্রবেলঘরিয়া ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্যের সহযোগিতায় এলাকাবাসী বাধা দেন।পরে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে অভিযোগ দিলে বেঞ্চ ও টিন বিক্রি স্থগিত করা হয়।কিন্তু সরকারী বিধি অনুযায়ী উপজেলা নিলাম কমিটির মাধ্যমে প্রকাশ্যে নিলামে পুরানো মালামাল বিক্রির কথা থাকলেও প্রধান শিক্ষিকা তা না করে বিধি বহির্ভুতভাবে স্থানীয় ভাঙ্গারীর দোকানে বিক্রির আয়োজন করেন।
বিপ্রবেলঘরিয়া ইউপি সদস্য মুকুল মন্ডল বলেন,মির্জাপুর দিয়ার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৭০ কেজির ওজনের ৩০টি টিন,১১টি লোহার বেঞ্চ বিধি বহিভুর্তভাবে বিক্রি করছিল প্রধান শিক্ষিকা রোকেয়া খাতুন। লোহার বেঞ্চগুলো মেরামত করলে আবার ব্যবহার করা যাবে এমন ১১টি বেঞ্চও কেজি দরে বিক্রি করছিল।আমি বিদ্যালয়ে গিয়ে এসব দেখে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেই।আমার অভিযোগ পেয়ে সেগুলো বিক্রি বন্ধ করে দেয় উপজেলা শিক্ষা অফিস।সদ্য গঠন হওয়া বিদ্যালয়ের মানেজিং কমিটির সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ডাবলু বলেন,বিদ্যালয়ের পুরানো মালামাল বিক্রি করতে নিলাম কমিটির মাধ্যমে করতে হয় এ বিষয় আমার জানা ছিল না।এসব বিক্রি করতে একটি রেজুলেশন করা হয়েছে আমি সেখানে স্বাক্ষর করেছি।সদ্য গঠন করা কমিটি অনুমোদন হয়েছে কিনা প্রশ্নে বলেন,আমি কিছুই জানি না সব প্রধান শিক্ষিকা জানে।
মির্জাপুর দিয়ারপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রোকেয়া খাতুন বলেন,উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা স্যার একদিন বিদ্যালয় পরিদর্শনে আসেন।এসময় বিদ্যালয়ের বাড়ান্দার এক কনায় পুরানো ১১ টি লোহার বেঞ্চ ও প্রায় ৩০টি টিন পড়ে থাকতে দেখে সেগুলো বিক্রি করে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন মূলক কাজে ব্যায় দেখিয়ে ভাউচার দেওয়ার নির্দেশ দেন।আমি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা স্যারের মৌখিক নির্দেশ পেয়ে ম্যানেজিং কমিটির রেজুলেশনের মাধ্যমে অনুমোদন নিয়ে স্থানীয় ভাঙ্গারীর দোকানে বিক্রি করার চেষ্টা করেছিলাম।পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য বাধা দিলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা স্যারের নির্দেশে সেই মালামাল বিক্রি বন্ধ রেখেছি।
নলডাঙ্গা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ সানাউল্লাহ বলেন,বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে গিয়ে দেখি বিদ্যালয়ের বাড়ান্দার এক কনায় জটলা হয়ে অকোজো মালামাল পড়ে আছে।আমি সেগুলো পুরানো মালামাল বিক্রি করার মৌখিক নির্দেশ দেই এবং বিক্রি করা টাকা বিদ্যালয়ের স্লিপ ব্যাংক একাউন্টে জমা রাখার কথা বলি।উন্নয়নমুলক কাজে ব্যায় করার কথা বলা হয়নি।উপজেলা নিলাম কমিটির অনুমোদন ছাড়া পুরানো মালামাল বিক্রি করা যায় কিনা এমন প্রশ্নে শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন,না তা করা যায় না বলে এটা বিধিবহিভুর্ত এবং তিনার ব্যাক্তিগত সিন্ধান্ত বলেও স্বীকার করেন। এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির অভিযোগ পেয়ে সেইসব মালামাল বিক্রি করতে নিষেধ করেছি।
নাটোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম নবী বলেন,সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ও অব্যবহারযোগ্য মালামাল বিক্রি করতে হলে সরকারী বিধান রয়েছে।নিলাম কমিটির মাধ্যমে প্রকাশ্যে নিলামে পুরাতন অব্যবহারযোগ্য মালামাল বিক্রি করে বিক্রি করা টাকা ৩ দিনের মধ্যে ট্রেজারী চালানে জমা দিতে হবে। কোন প্রকার মৌখিক নির্দেশ দিয়ে বিদ্যালয়ের পুরাতন মালামাল বিক্রির নির্দেশ দেওয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার এখতিয়ার বহিভুর্ত।খোঁজ নিয়ে দেখা হবে প্রমান পেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।