বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩০ পূর্বাহ্ন
আতা গাছে তোতা পাখি
ডালিম গাছে মৌ
এত ডাকি তবু কথা
কও না কেন বউ
যে ছাড়াকার এ ছড়াটি লিখেছেন তিনি হয়তো জানতেন না পৃথিবীতে “তোতা” নামে কোন পাখি কখনো ছিল না এখনো নেই। শৈশবের মধুর স্মৃতিমাখা এই কবিতাটির ডালিম গাছের “মৌ” মানে মৌটুস পাখি। একজোড়া মৌটুসী পাখি এখন আমার বাড়ির অতিথি। ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে ২২/২ সোনারগাঁও রোড, হাতিরপুলে আমার বাসা সংলগ্ন অফিসের প্রবেশ মুখে কাঁঠালি চাঁপা গাছের ডালে কয়েক সপ্তাহ পূর্বে একটি পাখি বাসা বাঁধে, পাখির সুবিধার্থে আমি কয়েক সপ্তাহ ধরে অফিস ব্যবহার থেকে বিরত থাকছি এবং বাসাটি নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছি। সম্প্রতি পাখির বাসায় ডিম ফুটে দুটি ছানা হয়েছে। যখন পাখিটি বাসা বাঁধে তখন ভেবেছিলাম এটি টুনটুনি পাখি, কিন্তু সম্প্রতি এই পাখির বাসা দেখতে আসেন বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন স্বনামধন্য পাখি গবেষক। অতি নিকট থেকে মা পাখি এবং পাখির ছানা দুটো পর্যবেক্ষণ করে আমরা সুনিশ্চিত হয়েছি এটি টুনটুনি পাখি নয় প্রকৃতপক্ষে এটি বিরল প্রজাতির
বেগুনি মৌটুসী পাখি, ইংরেজি নাম পার্পেল সানবার্ড ( Purple Sunbird)। পাখিটিকে অনেকেই বাংলাদেশের হার্মিং বার্ড বলে থাকে। ভারতবর্ষে প্রায় ১১প্রকার মৌটুসী পাখি দেখা যায়। ঠোট ও লেজের অংশ বাদ দিলে মৌটুসীর দৈর্ঘ্য দেড় ইঞ্চির বেশি নয়, আকারে টুনটুনি অপেক্ষা ক্ষুদ্রতর মৌটুসীর প্রধান খাদ্য ফুলের নেকটার। বাচ্চাদের পুষ্টির জন্য ও মধু সংগ্রহ করা না গেলে এরা ছোট পোকামাকড় ও খেয়ে থাকে। জন্মগতভাবে বাকানো ঠোঁট দিয়ে এরা অনায়েসেই বিভিন্ন ফুলের নেকটার পান করে থাকে। পুরুষ মৌটুসীর শরীর উজ্জ্বল তৈলাক্ত বেগুনি রঙের পালকে আচ্ছাদিত থাকে, যা দেখতে সত্যিই মনোরম। সূর্যের আলো শরীরে প্রতিফলিত হয়ে অপূর্ব প্রভা সৃষ্টি করে। আমার নানা ছিলেন ফরেস্ট অফিসার, প্রকৃতি ও বন্য প্রাণীর প্রতি তার ছিল অকৃত্রিম ভালবাসা, তার এই গুনটি আমাকেও প্রভাবিত করেছে। একেবারে শৈশব থেকেই পাখি ও বন্যপ্রাণী প্রতি আমার অমোঘ আকর্ষণ। প্রকৃতপক্ষে পাখি ও বন্যপ্রাণীর মত জাগতিক কোন কিছুই আমাকে সেভাবে আকৃষ্ট করে না। কখনো কখনো অবলা বন্যপ্রাণীদের মনে হয় নিজের সন্তান। মৌটুসী পাখিটিও হয়তো আমার হৃদয়ের ভাষা বুঝতে পেরেছিল, তাই এই ইট কাঠের শহরে পরম নিশ্চিন্তে ঘর বেঁধে ছিল আমার গৃহকোণে। মৌটুসী পাখির পরিচয় উদ্ঘাটনে আমাকে সহযোগিতা করেছে পাখিপ্রেমিক, স্বনামধন্য অর্নিথলোজিষ্ট আদনান আজাদ আসিফ। আদনানকে ধন্যবাদ।
-ড. আব্দুল ওয়াদুদ
অর্নিথলোজিস্ট ও ওয়াইল্ড লাইফ গবেষক