শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৮ অপরাহ্ন
শান্তিতে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ড.মুহাম্মদ ইউনূস। এখন তিনি নানারকম মামলার ভারে জর্জরিত। আর এই সমস্ত মামলা থেকে তার নিস্তার নেই বলেই মনে করছেন আইন বিশ্লেষকরা। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে চলমান রয়েছে শ্রম আইনের করা মামলা। এই মামলায় শ্রমিক ঠকানোর অভিযোগে তিনি অভিযুক্ত। মামলার শুনানি চলছে, আগামী ১৩ই সেপ্টেম্বর পুনরায় শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। সর্বশেষ শুনানিতে আদালতে ড. ইউনূসের আইনজীবীরা ছিলেন আক্রমণাত্মক। আদালতে হইচই, হট্টগোলও হয়েছে। একপর্যায়ে বিচারক এজলাস ত্যাগ করেছিলেন। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর তিনি আবার এজলাসে আসেন।
ড.মুহাম্মদ ইউনূসের আইনজীবীরা সুস্পষ্ট একটি কৌশল গ্রহণ করেছেন। তারা আদালতে এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চায়, এমন একটি অবস্থান তৈরি করতে চায়, যেখানে তারা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলকে দেখাতে চায় যে, এই মামলায় তাঁরা ন্যায় বিচার পাবেন না। তাই হইচই, হট্টগোল করে তারা এই বিচারকে বিতর্কিত করতে চায়। বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে। সরকার এই বিষয়টি উপলব্ধি করছে। আগামীতে যেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকে সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং শ্রমিকদের আইনজীবীদের বাইরে একাধিক শ্রম আইন বিশেষজ্ঞ আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই মামলাটি একটি সুস্পষ্ট মামলা এবং এখান থেকে ড. ইউনূসের বাঁচার পথ খুবই সীমিত। কারণ ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ছিলেন এবং গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদেরকে লভ্যাংশের টাকা দেওয়ার কথা ছিল, তাদের চাকরির একটা অন্যতম শর্ত। কিন্তু এই লভ্যাংশের টাকা তাদেরকে পরিশোধ করা হয়নি। ড. ইউনূসের কাছ থেকে যখন শ্রমিকরা এই পাওনা টাকা আদায়ের জন্য মামলা করেন, তখন ড. ইউনূস তার আইনজীবীদের মাধ্যমে এই মামলাকে আদালতের বাইরে ফয়সালা করার জন্য টাকার লেনদেন করেন। এটি সুস্পষ্টভাবে এটি গর্বিত অপরাধ। যার ফলে এ বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায় এবং সেখানে সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের পরেই এখন মামলাটি নিম্ন আদালতে চলমান রয়েছে।
এই মামলা বন্ধের জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে দেন-দরবার করেছেন। তার পক্ষে অনেকেই বিবৃতি দিয়েছেন। কিন্তু এই সমস্ত বিবৃতি বা খোলা চিঠি সরকারকে বিব্রত করতে পারেনি, সরকারকে চিন্তিতও করেনি। বরং সরকারের অবস্থান এখানে সুস্পষ্ট, এটি শ্রমিকদের ব্যবস্থা এবং শ্রমিক অধিকার রক্ষার জন্য বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আইনের স্বাক্ষরদাতা দেশ। আইএলও’র গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশ শ্রমিকদের সুরক্ষা করতে বাধ্য। কাজেই এখানে ড. ইউনূসকে দায়মুক্তি দেওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
এছাড়াও ইউনূসের বিরুদ্ধে আরো কিছু মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের টাকায় এবং গ্রামীণ ব্যাংকের পদ-পদবী ব্যবহার করে ২৮টি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন। এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রত্যেকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে দেওয়ার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ড. ইউনূসের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদেরকে। এখন এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়-দায়িত্ব গ্রামীণ ব্যাংক আর নিচ্ছে না। ফলে এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো, যেগুলো আদতে শুধুমাত্র গ্রামীণ টেলিকমের লাভের টাকায় চলতো, তারা বিপদে পড়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতেও শ্রমিক অসন্তোষ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
এরকম মামলাগুলো যদি একের পর এক অব্যাহত থাকে, তাহলে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ড. ইউনূসের আর বাঁচার পথ থাকবে না। এখন দেখার বিষয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে চাপ দিয়ে ড. ইউনূস কতটুকু পরিত্রান পান।