বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫৩ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ
জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে বাংলাদেশ সোসাইটির নবনির্বাচিত কর্মকর্তাদের লালগালিচা সংবর্ধনা সিরাজুল আলম খান সেন্টার এর উদ্বোধন: সিরাজুল আলম খানের দর্শন:অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রগঠনে দিশারি আ স ম রব পানি বিশুদ্ধকরণ নামে, ও অবিশুদ্ধকরণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধ পানির ব্যবসা চলছে সড়ক দুর্ঘটনার কবলে হাসনাত-সারজিস সমস্ত সভ্যতার জন্য ন্যায়বিচার, সমতা ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার আহ্বান পররাষ্ট্র উপদেষ্টার হাইকোর্টের নজরে ইসকন-চট্টগ্রামের ঘটনা : আদালতকে পদক্ষেপ জানাবে সরকার আমিরিকা দূতাবাসে পৌঁছেছেন খালেদা জিয়া বিনাসুদে ঋণ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সারা দেশ থেকে লোকজন আনেমোস্তফা আমীন বিএনপির নিবেদিত প্রাণ এখন মৃত্যু শয্যায়, খোঁজ নেয়নি কোন নেতা! বদলগাছীতে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যু,আহত-২

অনিয়মই আজ যেন নিয়মে পরিনত হয়েছে “দেশের স্বাস্থ্য সেবার ব্যাবস্থা “

নিউজ দৈনিক ঢাকার কন্ঠ 

এস. হোসেন মোল্লা : 

চিকিৎসা সেবার নামে দেশের প্রায় প্রতিটি স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রেই চলছে অনিয়ম ও দুর্নীতির তুখোড় প্রতিযোগিতা! চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান নি:সন্দেহে দেশ ও সমাজের অতি গুরুত্বপূর্ণ, সেবামূলক ও সম্মানজনক হলেও বর্তমান বাজারে যেন উদ্ভট,আপত্তিকর, কুতসিত ও ভয়ংকর মরন ছোবল বানিজ্যে পরিনত হয়েছে।

বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় উপজেলায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক। এর পাশাপাশি গড়ে উঠেছে জানা-অজানা বহু ডায়াগনিস্টিক সেন্টার। সরেজমিনে তথ্য নিয়ে জানা গেছে, স্বাস্থ্য সেবার নামে জানা অজানা অসংখ্য হাসপাতাল, ডেন্টাল কেয়ার ,চক্ষু হাসপাতাল, প্রাইভেট ক্লিনিক,ডায়াগনস্টিক সেন্টার ইত্যাদি ছড়িয়ে আছে। এগুলোর সেবা সম্পর্কে জানা যায়, কোনো মুমূর্ষু রোগীকে নিয়ে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যেনো ওঁত পেতে থাকা বিভিষিকাময় বানিজ্যের দ্বার খুলে যায়। মুমূর্ষু রোগীকে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে দেখেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জরুরি চিকিৎসা সেবা না দিয়ে তাদের স্বজনদের টিকিট নেয়া এবং ভর্তির জন্য ব্যস্ত রেখে শুরু করে রাক্ষুসে বানিজ্য ! যেমন – কেবিন নিয়ে দরকষাকষি (এসি-নন এসি/সিঙ্গেল বেড-ডাবল বেড), পোষ্য দালালদের আগমন, রোগীদের একাধিক পরীক্ষা/টেস্ট যা নিছক বাড়তি বা অপ্রয়োজনীয় ইত্যাদি ।

বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে ,এক সময়ে চিকিৎসকরা তাদের ভিজিটিং কার্ড দিয়ে রুগীকে নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠাতেন। ফলশ্রুতিতে ভালো কমিশন চিকিৎসকের কাছে চলে যেতো ।সেই সব চিকিৎসকদের খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার পরও এই অপকর্ম এখনো চলছে তবে লুকিয়ে! মানে ব্যাবসার কৌশল পরিবর্তন হয়েছে মাত্র! আবার কোনো কোনো হাসপাতালে ভূল চিকিৎসায় রোগী মারা যাওয়ার তথ্যও অহরহই পাওয়া যায়। উপরোন্ত অনেক হাসপাতালে মৃত ব্যক্তিকে (জীবিত বলে) আইসিইউতে দিনের পর দিন রেখে মৃত ব্যক্তির স্বজনদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়েও চলে বিশ্বয়কর মহাবানিজ্যিক তান্ডব লীলা ! অন্যদিকে সরকারি হাসপাতালের চিত্রও খুবই আপত্তিকর। রহস্য জনক কারণে যুগ যুগ ধরে কোন ব্যাবস্থাতেই আজও স্বাস্থ্য খাতকে দুর্নীতিমুক্ত করা সম্ভব হয়নি

জানা যায়,সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা আবার বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক বা হাসপাতাল নিয়েও ব্যস্ত থাকেন। রোগীর সঠিক চিকিৎসার ব্যাপারে তাদের যেনো মাথা ব্যাথাই নেই । দেশের অনেক বিত্তবানরা তাদের চিকিৎসার জন্য ভারত, সিঙ্গাপুর,থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে থাকেন।কারন হিসেবে জানা যায়, দেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের ওপর তাদের মোটেই আস্থা নেই । এতে সহজেই বোধগম্য যে, আস্থাহীন ভাবে চলছে দেশের স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান! তার ওপর আরও আছে ভুল চিকিৎসা, প্রতারণা, দালাল এমনকি প্রায় ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত সন্ত্রাস বাহিনী ! কোনো গর্ভবতী মহিলা হাসপাতাল গুলোতে গেলেই চিকিৎসকরা কথায় কথায় বলেন সিজার করতে হবে। সাথে জুড়ে দেন একাধিক টেষ্টও! যা কিনা অলিখিত ভাবেই আবশ্যিক বা পূর্বশর্ত !মানে অনিয়মই আজ সেখানে নিয়মে পরিনত হয়েছে! যেন ভেলকিবাজি ও অরাজকতা নিয়েই চলছে দেশের স্বাস্থ্যখাত!

সাধারন জনতার মতে, এই যদি হয় হাসপাতালের অবস্থা তাহলে আমরা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে কিসের ভরসায় যাব? প্রতারণার ফাঁদে আর কতকাল পা দিতে হবে ? ওদিকে প্রায় বছর খানিক আগে খুলনায় ভুল চিকিৎসায় এক রোগী মারা যাওয়ায় রোগীর স্বজনদের দ্বারা হাসপাতালের কর্তব্যরত কয়েকজনকে মারধরের ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল এবং ডাক্তাররা ধর্মঘটও করেছিলেন সেই সময়ে। ক্ষোভ প্রকাশ করে রোগীরা অনেকেই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, “প্রথমে কোনো রোগী যদি ডাক্তারদের কাছে চিকিৎসার জন্য যায় তখন তাকে ডাক্তারী ভিজিট দিতে হয় ।পরে ডাক্তারের দেয়া টেস্ট বা পরীক্ষার রিপোর্ট দেখাতে গেলে পুনরায় ভিজিট দেয়া লাগবে কেন”? অনেকেই একটি প্রশ্নের জবাব চেয়েছিলেন — “দেশে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়, স্বাস্থ্য সচিব,স্বাস্থ্য মন্ত্রী,স্বাস্থ্য অধিদপ্তর,বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোশিয়েশন ইত্যাদি থাকা সত্ত্বেও কেনো চিকিৎসা সেবায় এমন দুর্নীতি”? হায় আফসোস! আজও এর জবাব কেউই দিতে পারেননি! চিকিৎসা ব্যবস্থা যেন মুমুর্ষূ অবস্থায় থুবড়ে পরে আছে !

জানা যায়, অনেক প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালে তাদের অনিয়ম

সম্পর্কে কোনো রোগীর স্বজনরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে দেখা বা মুঠোফোনে কথা বলতে চাইলেও হাসপাতালের কর্তব্যরতরা তাদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয় না। তখন সেই সমস্ত প্রাইভেট ক্লিনিক বা হাসপাতালের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক যা সন্দেহজনক বটেই ।অনেকেই প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিক করলে নামে মাত্র ট্রেড লাইসেন্স কিংবা জয়েনস্টক লাইসেন্স করেই চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন। প্রশ্ন থেকে যায়, তাহলে কি পরিবেশ অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন এবং বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশন ইত্যাদির কোনো সহযোগিতা লাগে না,নাকি ওসবের প্রয়োজন নেই ?

জনমনে প্রশ্ন, ভবন ভাড়া নিয়ে নামে মাত্র ট্রেড লাইসেন্স ও জয়েন স্টক লাইসেন্স করলেই লিমিটেড লিখে মানব সেবা মুলক হাসপাতাল করা যায় কেমন করে ? অনেক রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে এসব বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সেবা সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, “হাসপাতাল গুলোতে যেভাবে দাঁপিয়ে অপরাধ( দালালদের দৌরাত্ম, ভুল চিকিৎসা, একাধিক টেস্ট, নিরবে রোগীর স্বজনদের যৌন হয়রানি ইত্যাদি) হচ্ছে তা আমরা কার কাছে বা কোথায় অভিযোগ দেবো ?আর এভাবে কতকাল চিকিৎসার নামে প্রতারণার কবলে পরতে হবে”?

বিভিন্ন সুত্রে প্রাপ্ত তথ্য, অভিযোগ ও অসংখ্য প্রশ্নের সঠিক জবাব ও সত্যতা বের করতে বহুদিন যাবত বিভিন্ন সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী দেশের অনেক স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান সমুহের অনিয়ম নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলে কিংবা প্রয়োজনীয় অনুমোদন পত্র কিংবা বিভিন্ন পদে চাকুরেদের সনদ বা যোগ্যতা দেখতে চাইলে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় তথ্য বা সদুত্তর প্রদানতো দুরের কথা ! উল্টো মানবাধিকার ও গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর আক্রোশমুলক চড়াও হয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে মেতে নাজেহাল ও হয়রানি করার ঘটনাই ঘটিয়েছেন মর্মে অহরহ শোনা যায়। কেন এমন ঘটনা ঘটছে তা রাষ্ট্র ও জনতার স্বার্থে জরুরি ভাবে একে একে খতিয়ে দেখতে হবে।

এত প্রকাশ্য অনিয়ম সত্ত্বেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নেই কোনো অভিযান, নেই কোনো জরিমানা ! জাতির মনে প্রশ্ন, সাধারণ জনগণ বা অসহায় রুগী হাসপাতালের দালালদের খপ্পর, ভুল চিকিৎসা এবং চক্রান্তমুলক ভাবে পরিকল্পিত বৈচিত্রপুর্ন প্রতারণার হাত থেকে আদৌ রেহাই পাবে কি ? এগুলো কি স্বাস্থ্য সেবা নাকি মরন দশা? এভাবে অপকর্ম চালু থাকলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাজ কি?এতো প্রশ্নের জবাব কেই বা দেবে? দেশের স্বাস্থ্য সেবা চরম প্রশ্নবিদ্ধ কেন? এমন অপ্রতিরোধ্য অনিয়মের শেষ কোথায়?

Please Share This Post in Your Social Media

দৈনিক ঢাকার কন্ঠ
© All rights reserved © 2012 ThemesBazar.Com
Design & Developed BY Hostitbd.Com