কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলাধীন জলেয়ারমার ঘাট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জনাব মুহাম্মদ তোয়াহার উদ্দিন কে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি কর্তৃক ১৯৭৯ সালের চাকুরী বিধি লংঘন করে সাময়িক বরখাস্ত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, মুহাম্মদ তোয়াহার উদ্দিন জলেয়ারমার ঘাট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে বিগত ০১/০৬/২০১৫ ইং তারিখ থেকে ৩০/০৮/২০২৪ ইং তারিখ পর্যন্ত সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু তৎকালীন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে স্বেচ্ছাচারিতার নিদর্শন স্বরূপ বিগত ০১/০৮/২০২৪ ইং তারিখ সহকারী শিক্ষক মুহাম্মদ তোয়াহার উদ্দিন কে সাময়িক বরখাস্ত করেন যা সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূত, বে-আইনি, অনৈতিক, স্বেচ্ছাচারমূলক, ক্ষমতার অপব্যবহার ও মানবাধিকার পরিপন্থী। বরখাস্ত প্রক্রিয়াটি ১৯৭৯ সালের চাকুরীবিধির ১৩(১), ১৪(১) ও ১৪(২) ধারার সুস্পষ্ট লংঘন কারণ আনীত অভিযোগ সমূহের বিষয়ে অভিযুক্তকে কোন কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়নি এবং এ বিষয়ে কোন তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়নি।
১৯৭৯ সালের চাকুরীবিধি অনুসারে, সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় কোন শিক্ষক তার বেতনের অর্ধেক হারে জীবন ধারণ ভাতা (সাবসিসটেন্স এলাউন্স) প্রাপ্য হওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব মোহাম্মদ কাইচার লিটন ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বরখাস্ত অবস্থায় সহকারী শিক্ষক মুহাম্মদ তোয়াহার উদ্দিন কে কোন জীবন ধারণ ভাতা প্রদান করেননি এবং বর্তমানেও করছেন না।
তাছাড়া, মহামান্য হাইকোর্টের রিট পিটিশন নং- ৩৬৫৭/২০১৫ এর রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিগত ০৬/০৮/২০১৭ ইং তারিখ ৩৭.০০.০০০০.০৭২.৩১.০০৭.১৫.৬৯৪ নং স্মারকমূলে মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ও চেয়ারম্যান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড (সকল) কে নির্দেশনা প্রদান করেন যে, “বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষককে ৬০ দিনের বেশি সাময়িক বরখাস্ত রাখা যাবে না এবং ৬০ দিনের বেশি সাময়িক বরখাস্ত রাখা হলে তিনি বেতন ও অন্যান্য সমুদয় প্রাপ্য হবেন।
এ বিষয়ে জলেয়ারমার ঘাট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি জনাব ফরিদুল আলম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান সভাপতি ও মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব মীকি মারমাকে এ প্রতিবেদক ভুক্তভোগী শিক্ষককে বরখাস্ত করার ক্ষেত্রে ১৯৭৯ সালের চাকুরীবিধি অনুসারে ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে কিনা এবং ভূক্তভোগীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদানের মাধ্যমে বিধি মোতাবেক বরখাস্ত করা হয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হয়। উত্তরে বর্তমান সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মহেশখালী জানান, “ভুক্তভোগীকে বিধিসম্মতভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে কিনা তা তাঁর জানা নেই।
তাছাড়া ভুক্তভোগী শিক্ষককে সাবসিসটেন্স এলাউন্স (জীবন ধারণ ভাতা) বাবদ বেতন-ভাতার অর্ধেক হারে প্রদান না করার বিষয়ে প্রশ্ন করা তিনি জানান, “ভুক্তভোগী শিক্ষক এ বিষয়ে আবেদন করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব মোহাম্মদ কাইচার লিটন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “মুহাম্মদ তোয়াহার উদ্দিন এর নিয়োগ ও নিবন্ধন সনদ ভুয়া হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। উক্ত নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন মর্মে জানান। সনদপত্র জাল ও ভুয়া প্রমাণিত হলে বেতন-ভাতার অর্ধেক হারে জীবন ধারণ ভাতা প্রদানের বিধান নেই এবং ৬০ দিন অতিবাহিত হলে বেতন ও অন্যান্য সমুদয় প্রদানের বিধান নেই মর্মে উল্লেখ করেন।
কিন্তু ভুক্তভোগী শিক্ষক তাঁর নিবন্ধন সনদপত্র বৈধ বলে দাবি করেন এবং এ প্রতিবেদককে তাঁর মূল নিবন্ধন সনদপত্র প্রদর্শন করেন। প্রতিবেদক তা অনলাইনে যাচাই পূর্বক এর সত্যতা বিষয়ে নিশ্চিত হন। ভুক্তভোগী শিক্ষক আরো দাবি করেন যে, প্রধান শিক্ষক তাঁর নামে বিষয় পরিবর্তন করে রোল নং ঠিক রেখে তাঁকে ফাসানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী প্রতিকার প্রাপ্তির নিমিত্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগের অনুলিপি কালের সংবাদ পত্রিকা কর্তৃপক্ষের নিকট সংরক্ষিত আছে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষক মুহাম্মদ তোয়াহার উদ্দিন বলেন,” মহামান্য হাইকোর্টের রায়, ১৯৭৯ সালের চাকুরীবিধি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনকে অমান্য করে সেচ্ছাচারিতার নিদর্শন স্বরূপ জনাব মোহাম্মদ কাইচার লিটন, প্রধান শিক্ষক, জলেয়ারমার ঘাট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় আমাকে আমার ন্যায্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিতকরণসহ স্বপদে পুনর্বহাল না করে আমার জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছেন।
বর্তমানে আমার একমাত্র অবলম্বন বেতন-ভাতা ছাড়া পরিবার পরিজন নিয়ে আমি অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছি। এহেন অবস্থা থেকে নিষ্কৃতি পেতে আমাকে চাকুরীতে স্বপদে পুনর্বহাল করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সদয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।” সাময়িক বরখাস্তের সময় অর্থাৎ ০১/০৮/২০২৪ ইং থেকে আজ ১৮/১০/২০২৪ ইং তারিখ পর্যন্ত দীর্ঘ ৭৮ দিন অতিবাহিত হলেও ভুক্তভোগী শিক্ষককে বেতন-ভাতাদি প্রদান সহ স্বপদে পুনর্বহাল না করে প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মহামান্য হাইকোর্টের রিট পিটিশন নং- ৩৬৫৭/২০১৫ এর রায় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ০৬/০৮/২০১৭ ইং তারিখের প্রজ্ঞাপনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রচলিত বিধিমালা, আইন কানুন ও মানবাধিকার লংঘন করে চলেছেন।