সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:১৮ অপরাহ্ন
নেত্রকোনার বারহাট্টায় আমন ধানের বীজ সংকট দেখিয়ে চড়া দামে বিক্রি
সোহেল খান দূর্জয় নেত্রকোনা প্রতিনিধি :// দৈনিক ঢাকার কন্ঠ নিউজ
নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা উপজেলায় আমন বীজের চরম সংকট চলছে বলে ডিলাররা বিপাকে ফেলছে কৃষকদের। ফলে সরকার নির্ধারিত মূল্যের দুই থেকে আড়াই গুণ দামে কৃষকদের বীজ কিনতে হচ্ছে তাদের কাছ থেকেই। আর এ গুজব সংকটকে পুঁজি করে বেসরকারি কোম্পানির নিম্নমানের বীজ বেশি দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতা ও ডিলাররা।
বারহাট্টা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলায় ১৫ থেকে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ জন্য প্রায় পাঁচশত মেট্রিক টন বীজ ধানের প্রয়োজন। এর মধ্যে বিএডিসি থেকে সরবরাহ করা বীজের বাইরে বাকি চাহিদা ব্যক্তি পর্যায়, বিভিন্ন বেসরকারি বীজ উৎপাদন ও বিপননকারী প্রতিষ্ঠান যোগান দিয়ে থাকে।
বারহাট্টা উপজেলায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) বীজ বিক্রির ডিলার রয়েছেন ১৪জন।
কৃষকদের অভিযোগ, তারা ডিলারের কাছ থেকে চাহিদা মত বীজ পাচ্ছেন না। অল্প পরিমাণ বীজ পাওয়া গেলেও দাম নেওয়া হচ্ছে দুই থেকে আড়াই গুণ বেশি। দেওয়া হচ্ছে না কোনো রশিদ।
উপজেলার বিক্রমশ্রী গ্রামের কৃষক মো. সুরাফ মিয়া জানান, গতকাল উপজেলা গোপালপুর বাজারের বীজ ডিলার মোঃ ফরিদ মিয়ার বীজ ভান্ডার থেকে ব্রি ধান ৩২ জাতের প্রত্যায়িত ১০ কেজি বীজ ৭শত ৫০ টাকা দিয়ে কিনেছেন। অথচ সরকার নির্ধারিত বিক্রয় মূল্য ৩৭০ টাকা।
তবে ডিলার মোঃ ফরিদ মিয়া অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিএডিসি থেকে চাহিদা অনুযায়ী বীজ সরবরাহ নেই। তাই কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী বীজ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
একই গ্রামের আরেক কৃষক আনোয়ার ও জানান, তারা উপজেলার গোপালপুর বাজারের বীজ ডিলার ফরিদ মিয়া তাদের পরিচিত তাই তারা সেখান থেকেই ব্রি ধান ৩২ জাতের বিএডিসির সীল দেওয়া ১০ কেজি ওজনের বস্তা কিনেছেন ১ হাজার ৭০ টাকা করে। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ওই ডিলার বিএডিসির যে মূল্য আছে তার থেকে চড়া দামে সে বীজ বিক্রি করছে।
বারহাট্টা বাজারের অন্য ডিলারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা প্রত্যেকে ৮ থেকে ১০ মেট্রিক টন বীজের চাহিদা দিয়েছেন। কিন্তু এ পর্যন্ত ৪ মেট্রিক টন করে বীজ সরবরাহ পেয়েছেন।
এ সুযোগে ডিলাররা বিভিন্ন নাম সর্বস্ব কোম্পানির বীজ দেদারসে বিক্রি করছেন চড়া দামে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ডিলার ও নিবন্ধন প্রাপ্ত ব্যবসায়ী ছাড়াও বারহাট্টা উপজেলার প্রতিটি বাজারেই অন্য ব্যবসার সঙ্গে অনেকেই বীজ ধান বিক্রি করছেন।
উপজেলার গোপালপুর,আসমা,নইহাটী,আলকদিয়া,বাউসী,ফকিরে বাজার ও কাকুরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা চকচকে মোড়কের প্যাকেটে বিভিন্ন কোম্পানির উচ্চ ফলনশীল (হাইব্রিড) ধানের বীজ বিক্রি করছেন। যেগুলোর অধিকাংশই কোনো স্বনামধন্য কোম্পানির নয়। এগুলো আরো চড়াদামে কৃষকরা কিনে নিচ্ছেন।
এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) প্যাকেট ব্যবহার করেও নিম্নমানের বীজ বিক্রি হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। নিম্নমানের এসব বীজ থেকে ফলন বির্পযয়ের আশংকা করছেন কৃষকরা।
বারহাট্টা বাজারের বীজ ডিলার ফরিদ মিয়া জানান, বাজারে ৩২ ও ৪৯ জাতের ধানের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু বিএডিসি থেকে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির বীজ বিক্রি করছেন।
এসব বীজের মান নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না।
বারহাট্টা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাইমিনুর রশীদের দাবি, বাজারে বিএডিসির বীজের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। বেশি দামে বীজ বিক্রি হচ্ছে শুনে তিনি কয়েক বার বিভিন্ন ডিলারের দোকান পরিদর্শন করেছেন। এবং পরে ডিলারদের ডেকে অতিরিক্ত দামে বীজ বিক্রি না করা নির্দেশ দেন। তিনি বলেন অতিরিক্ত দামে কারো নামে বীজ বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদের লাইসেন্স বাতিলসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া নিম্নমানের বীজ বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেলে আরো কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এসময় তিনি ভেজাল এড়াতে বিএডিসির নির্ধারিত ডিলারের কাছ থেকে সঠিক দামে বীজ কেনার পরামর্শ দেন।
বারহাট্টা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাইনুল হক কাশেম বলেন,কৃষকের স্বপ্ন কৃষি কাজে সাফল্য আর সরকারের স্বপ্ন কৃষকের সেই স্বপ্নকে উন্নত শিকরে নিয়ে যাওয়া,কারন কৃষক বাচলে দেশ বাচবে,বাচবে দেশের মানুষ, বতর্মান সরকার কৃষি বান্ধব সরকার তাই কেউ বীজ বেশী দামে বিক্রি করলে তাদের জায়গা হবে জেলহাজতে।
১০.০৭.২০২১