সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১৭ অপরাহ্ন
নেত্রকোনার ১০ উপজেলায় ব্লাস্টরোগের প্রাদুর্ভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে বোরো ধানের শীষ। এ রোগের আক্রমণে গোড়া থেকে কালো হয়ে শত শত হেক্টর জমিতে ধানের শীষ মরে যাচ্ছে। এতে ব্যাপক ফলন হ্রাসের আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।
গত এক সপ্তাহ ধরে হঠাৎ করেই জেলা সদর, বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী, মদন, কেন্দুয়া, আটপাড়া, পূর্বধলা, দূর্গাপুর , কলমাকান্দা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার ধানক্ষেতে এই রোগটি দেখা দিয়েছে। আক্রান্ত জমি থেকে ধীরে ধীরে বিস্তারলাভ করে আশপাশের জমিগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ছে।
বারহাট্টা উপজেলার আসমা গ্রামের কৃষক সেলিম বলেন, আমার কাটারিভোগ ধানে ব্লাস্ট রোগ আক্রমণ করেছে। অনেক ওষুধ ছিটিয়েও কোনও লাভ হচ্ছে না।
শালনগড় গ্রামের মনসুর মিয়া, আব্দুল মজিদ ও অতিথপুর গ্রামের শাহ আলমসহ একাধিক কৃষক বলেন, বোরো আবাদ শুরুর দিকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তেমন কোন রোগ বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়নি। কৃষকরা ভাল ফলনের আশা করেছিল।
কিন্তু ধানে পাক ধরার সাথে সাথে হঠাৎ করেই ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধ ছিটিয়ে কোনও কাজ হয়নি। এতে ভয়াবহ ফলন বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে কৃষকেরা আশঙ্কা করছেন।
বারহাট্টা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, শস্যভাণ্ডার খ্যাত বারহাট্টায় অধ্যুষিত বারহাট্টা উপজেলায় চলতি বছর বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৪ হাজার ৯ শত ৩০ হেক্টর জমি। এর মধ্যে চাষ হয়েছে ১৪ হাজার ৯ শত ৮৫ হেক্টর জমিতে।
এ মৌসুমে এই অঞ্চলের কৃষকরা আবাদ করেছেন উচ্চ ফলনশীল ব্রি-২৮, ব্রি-২৯, ব্রি-৩৬, মিনিকেট, ভারতীয় জাত গুটি স্বর্ণা, কাটারিভোগ ও স্থানীয়জাত বারহাট্টা, সহ বিভিন্ন প্রকার ধান।
বারহাট্টা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল ইসলাম খান অপু বলেন, ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ ঠেকাতে প্রতি বিঘায় ১৬ লিটার বালাইনাশক ওষুধ স্প্রে করতে হবে। প্রথম ডোজ দেওয়ার ১০ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ দিতে হবে। কিন্তু কৃষকরা কৃষি অফিসের পরামর্শ মেনে চলেন না। তারা তাদের মতো করে কাজ করার চেষ্টা করেন।
বারহাট্টা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রাকিবুল হাসান বলেন, হঠাৎ করে আবহাওয়া পরিবর্তন, পরাগায়নের সময় বৃষ্টি কিংবা ঝড় হওয়ার কারণে কিছু জমিতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। খবর পেয়ে আমরা আক্রান্ত জমিগুলো পরিদর্শন করে কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি। নিয়মমতো স্প্রে করলে ব্লাস্ট রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কিন্তু কৃষকেরা কোন পারমর্শই মানতে চায় না। এ রোগ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সে বিষয়ে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সচেতন করা হচ্ছে।
নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবছর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১লক্ষ ৮৪ হাজার ৫ শত ৭৫ হেক্টর তবে আবাদ হয়েছে ১ লক্ষ ৮৪ হাজার ৮ শত ২৮ হেক্টর, এবছর আবাদ করা হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ও বেশি। তবেএখন পর্যন্ত ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা আসেনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এফএম মোবারক আলী বলেন, নেক ব্লাস্ট ছত্রাকজনিত একটি রোগ। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে আগাম বৃষ্টি হওয়ায় ২৮ জাতের বোরো ধানের খেত এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে বেশি, তবে আমরা চেষ্টা করছি কিভাবে তা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আমরা কৃষকদের ছত্রাকনাশক নাটিভো, ট্যুপার, অমিস্টারটপ স্প্রে করতে পরামর্শ দিচ্ছি।
১৬.০৪.২০২২ ইং