রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৩২ পূর্বাহ্ন
গতকাল ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে আটককৃত ৪ সাংবাদিকের পরিকল্পনা ছিল চাঁদাবাজি।
সেখানকার স্থানীয় খায়রুল্লাহ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রহিমা খাতুনের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করায় এশিয়ান টিভির সাংবাদিকসহ চার জনকে গ্রেফতার করেছেন। এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষিকা বাদী হয়ে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গফরগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেন।
বুধবার সকালে গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে ময়মনসিংহ জেলা হাজতে পাঠানো হয়েছে। জেলহাজতে পাঠানোর পরে বিচারক তাদের জামিন নামঞ্জুর করে আদালতে পাঠিয়েছেন
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল ১০টার দিকে পৌর শহরের খায়রুল্লাহ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল নিয়ে কয়েক ব্যক্তি প্রবেশ করে। এ সময় তারা ক্যাম্পাসের ভিতরে অবস্থিত প্রধান শিক্ষিকার বাসার বাহির থেকে লাগানো সিটকিনি খোলে ঘরে প্রবেশ করে। পরে বিদ্যালয়ের আয়া দৌড়ে এসে তাদের ঘরে ঢুকার কারণ এবং পরিচয় জিজ্ঞেস করলে তারা ঘর থেকে বের হয়ে নিজেদেরকে সাংবাদিক পরিচয় দেয়।
পরে তারা প্রধান শিক্ষিকার অফিস কক্ষে গিয়ে উনাকে খোঁজতে থাকে। প্রধান শিক্ষিকা রহিমা খাতুন তখন ষষ্ঠ শ্রেণীর ক্লাশ নিচ্ছিলেন। খবর পেয়ে তিনি অফিস কক্ষে আসেন। প্রধান শিক্ষিকা রহিমা খাতুন এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাংবাদিক পরিচায়ধারী সাইফুল ইসলাম খান (৩৮), আইনাল ইসলাম (৪২), জোবায়েদ হাসান (২৪) বলেন আমরা সাংবাদিক। আপনি অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন। আপনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন টিভি ও পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করা হবে। আপনার বিরুদ্ধে সমস্ত ডকুমেন্ট আমাদের কাছে আছে। যদি বাঁচতে চান তাহলে আমাদেরকে পাঁচলাখ টাকা এখন দিতে হবে। না হলে আপনার রক্ষা নাই। আপনি গফরগাঁও থাকতে পারবেন না।
এ অবস্থায় প্রধান শিক্ষিকা টাকা দিতে অস্বীকার করে তাদেরকে অনুনয় বিনয় করলে তারা আরো উত্তেজিত হয়ে নানা ধরনের হুমকি দিতে থাকে। এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষিকা তাদেরকে বসিয়ে টাকা সংগ্রহের আশ্বাস দিয়ে অফিস কক্ষ থেকে বের হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও গফরগাঁও থানার ওসিকে ফোনে ঘটনা জানান।
সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) কাবেরী রায়, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম ও গফরগাঁও থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন ও সঙ্গীয় পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হয়। পরে এশিয়া টিভির সাংবাদিক পরিচয়ধারী সাইফুল ইসলাম খানসহ তার সাথে থাকা সাংবাদিককে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন।
গোপন সূত্র জানায়, সাইফুল ইসলাম কোন স্টাফ রিপোর্টার নন, তিনি একজন প্রতিনিধি মাত্র, তাছাড়া নিয়ম হল কোথায় গেলে অফিস থেকে এসাইনমেন্ট নিতে হয়, সাইফুল ইসলাম অফিস থেকে আনা কোন এসাইনমেন্ট দেখাতে পারেন নি। সাইফুল বিভিন্ন যায়গায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছে। এশিয়ান টিভির গফরগাঁও প্রতিনিধি খায়রুল্লাহ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অনিয়ম দূর্নীতির তথ্য দিলে তাকে মোটা অংকের টাকা ইনকাম হবে এমন আশায় রাতের ঘুম হারাম করে সাইফুল ইসলাম। তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেন ঢাকা থেকে গফরগাঁও সফরের। অবশেষে প্রাইভেটকার নিয়ে মোট ৩ জন চলে যান গফরগাঁও। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষিকা রহিমা খাতুন বলেন, সাংবাদিক পরিচয়ে কয়েকজন বিনা অনুমতিতে আমার অনুপস্থিতিতে বাসায় গিয়ে তছনছ করে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে থাকা, ৭৫ হাজার টাকা নেয়ার দাবি করেন তিনি। পরে তারা আমার অফিসে এসে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে। টাকা না দিলে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন টেলিভিশনে ও পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের হুমকি দেয়। উপজেলা মাধ্যমিাক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে সত্যতা পাওয়া গেছে। গফরগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ ফারুক আহম্মেদ বলেন, এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষিকা বাদী হয়ে আটক চারজনসহ অজ্ঞাতনামা তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং- ১৪/৭০, (ধারা-৪৪৭/৪৪৮/৫৮০/৩৮৫/৩৪), তারিখ: ১৯/৪/২০২২ইং