শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০২ অপরাহ্ন
আঠারো মাসের শিশু সন্তান তোহফা ইসলামকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যান ঠাকুরগাঁও শহরের আশ্রমপাড়া এলাকার বাসিন্দা ফরিদুল ইসলাম রঞ্জু। পরীক্ষা করান জেলা শহরের ‘মাম হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে’।
রিপোর্টে টাইফয়েড জ্বর শনাক্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিকসহ বেশকিছু ওষুধ সেবন করানো হয়। আর এতেই ঘটে বিপত্তি। অবস্থার অবনতি হলে মুমূর্ষু সন্তানকে নিয়ে যান রংপুরে। সেখানে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আবারো পরীক্ষা করালে আগের রিপোর্ট ভুল প্রমাণিত হয়। শিশুটির শরীরে টাইফয়েডের অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে অন্য রোগের চিকিৎসায় সুস্থ হয় শিশুটি।
‘মাম হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দেয়া ভুল রিপোর্টের মতো জেলার বেশকিছু ডায়াগনস্টিক সেন্টার এভাবে ভুল রিপোর্ট দেয় বলে অভিযোগ রোগী ও স্বজনদের। এতে অতিরিক্ত খরচের পাশাপাশি ভুল চিকিৎসায় হয়রানি হতে হচ্ছে তাদের।
এদিকে, সংশ্লিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রিপোর্ট ভুল ছিল না বলে দাবি করেছেন প্রতিষ্ঠানটির মেডিকেল টেকনোলজিস্ট। আর কেউ ব্যক্তিগতভাবে ভুল করলে সংগঠন দায় নেবে না বলে জানান ঠাকুরগাঁও সদরের মাম হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট সজুন আলী।
তিনি বলেন, টাইফয়েড শনাক্ত হয় এবং সে অনুযায়ী পরামর্শ দেন চিকিৎসক। এছাড়া অন্য কোনো রোগে শিশু এমার্জেন্সিতে যেতে পারে সেটা আমরা বলতে পারবো না।
ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. ইফতেখায়রুল ইসলাম বলেন, অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অদক্ষ কিছু টেকনিশিয়ান রয়েছে, যে কারণে রিপোর্টে তাদের কিছুটা ভুল হয়।
ঠাকুরগাঁও জেলা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জুলফিকার আলী বলেন, যদি কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টার রোগীর পরীক্ষায় কোনো ভুল করে থাকে তাহলে সেগুলোর দায়দায়িত্ব আমরা অ্যাসোসিয়েশন নেব না। সেটার দায় তাদেরকেই বহন করতে হবে।
তবে, মেয়াদোত্তীর্ণ মেশিন দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান ঠাকুরগাঁও জেলা সিভিল সার্জন ডা. নুর নেওয়াজ আহমেদ।
তিনি বলেন, শিগগিরই প্রতিটা ক্লিনিকে ভিজিট করা হবে। যে যন্ত্রপাতিগুলো ব্যবহার হচ্ছে সেগুলো আপডেট আছে কিনা, মিথ্যা কোনো রিপোর্ট হচ্ছে কি না সেটা আমরা দেখবো।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান বলেন, চিকিৎসায় বাধাগ্রস্ত ও ভুল রিপোর্টের অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৫৯টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্যাথলজি রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার পরীক্ষা করা হয়।